পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নাব্য সঙ্কটে গাইবান্ধার ফুলছড়িতে দীর্ঘ কয়েকশ’ কিলোমিটার আন্তঃজেলা ও অভ্যন্তরীণ নৌ-রুট বন্ধ হয়ে গেছে। ভরা যৌবনা ব্রহ্মপুত্র নদ ঘাট ও সংলগ্ন এলাকায় পলি পড়ে সরু খালের রূপ নিয়েছে। হেঁটেই ব্রহ্মপুত্র নদ পাড়ি দিচ্ছে এলাকার নারী-পুরুষ। যাত্রীদের দীর্ঘ বালুচর পেরিয়ে ঘাটে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে। সাধারণ যাত্রীরা মালামাল দীর্ঘপথ মাথায় ও কাঁধে করে বহন করছে। অন্যদিকে দূর্গম চরাঞ্চল থেকে আসা নারী-শিশু ও অসুস্থ রোগীরা পড়ছে বিপাকে। সরকারি নজরদারি ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এ উপজেলার প্রায় চারটি নদ-নদী অস্তিত্ব সঙ্কটের কবলে পড়েছে। নদী ভরাটের কারণে নাব্য সঙ্কটও তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ অঞ্চলের নদ-নদীগুলোতে অসংখ্য জেগে ওঠা ও ডুবোচর থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যান্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) হিসাব অনুযায়ী, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদের আন্তঃজেলা নৌ-রুট ফুলছড়িঘাট-বাহাদুরাবাদঘাট ৩০ কিলোমিটার, তিস্তামুখ-গুঠাইল ৩৫ কিলোমিটার, সৈয়দপুর-রাজিবপুর ১৯ কিলোমিটার, তিস্তামুখঘাট-আমতলী ২৫ কিলোমিটার, এবং তিস্তাামুখঘাট- সারিয়াকান্দি ৫০ কিলোমিটারসহ ছোট-বড় আরো ২৫টি নৌ-রুটে নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। অভ্যান্তরীণ নৌঘাটের মধ্যে ফুলছড়ি-বালাসীঘাট ২৫ কিলোমিটার, গজারিয়া-গলনা ৮ কিলোমিটার, সিংড়িয়া-ঝানঝাইর ৬ কিলোমিটার, গুনভরি-কালাসোনা ৮ কিলোমিটার, হাজিরহাট-ফজলুপুর ১৬ কিলোমিটার, বালাসী-এরেন্ডাবাড়ি ২৫ কিলোমিটার, ফুলছড়ি-দেওলুয়াবাড়ি ৩০ কিলোমিটারসহ আরও ৫০ কিলোমিটার এলাকা নৌরুটের এখন অস্তিত্ব নেই।
উপজেলার তিস্তামুখ খেয়াঘাট সংলগ্ন চ্যানেলটিতে পলিমাটি ভরাটের কারণে নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। যমুনা নদীর বালাসীঘাট চ্যানেলটিও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। নদের অন্যান্য রুটেও কমবেশি নাব্য বিরাজ করায় বাঁশের লগির সাহায্যে পানি মেপে মেপে নদীগুলো অতিক্রম করে চলছে নৌগুলো। এতে ব্যাহত হচ্ছে নৌ চলাচল। এ কারণে নদীপথে যাতায়াতকারী ইঞ্জিনচালিত শ্যালো নৌকার যাত্রীদের পোহাঁতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ। ফুলছড়ি উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে নৌপথ। উপজেলা সদরের সঙ্গে এরেন্ডাবাড়ি, ফজলুপুর ও ফুলছড়ি ইউনিয়নের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা আজও গড়ে ওঠেনি। এ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে প্রায় সোয়া দুই লাখ মানুষ বসবাস করে। এর মধ্যে ৩টি ইউনিয়ন মুল ভুখগু থেকে সম্পূর্ণ বিছিন্ন। বিছিন্ন এসব ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বসবাসকারী মানুষের উপজেলা সদরে আসার একমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা ডিঙ্গি অথবা ইঞ্জিনচালিত শ্যালো নৌকা। যে রুট দিয়ে নৌকা চলাচল করবে সেই নৌপথে রয়েছে অর্ধশতাধিক ছোট-বড় ডুবোচর। আশির দশক থেকে জেগে ওঠা চরের অনেক স্থানে ভূমিখেকোরা চর দখল করে বসতি গড়ে তুলেছে। বন্যা, নদীভাঙনসহ একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে সর্বস্বান্ত হওয়া এ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের দুর্গম এলাকার মানুষ জরুরি প্রয়োজনে অথবা হঠাৎ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনতে গ্রামাঞ্চলের নদীর ঘাটে ঘন্টার পর ঘন্টা নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এখন জলচকিতে করে রোগীকে নিয়ে মাইলের পর মাইল পায়ে হেটে হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। শুধু দূর্গম যোগাযোগের কারণে অনেক রোগীকে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করতে হয়।
অন্যদিকে চর জেগে ওঠার কারণে স্থানীয় নদ-নদীর স্রোতের গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে ভাঙছে লোকালয় ও জনপদ। এলাকাবাসী জানায়, আশির দশক থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত নদীভাঙনের শিকার এলাকার প্রায় দশ হাজার কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি, হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমিসহ বহু মৎস্য পুকুর, দোকান-পাট, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ সব সম্পদ হারিয়ে অনেক পরিবার এখন উদ্ববাস্তুতে পরিণত হয়েছে। উপজেলার ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ঘাঘট নদীসহ সব নদী ও মোহনায় সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য ডুবোচর। বালাসী ও ফজলুপুরের মাঝামাঝি কালাসোনা টার্নিং পয়েন্টে বর্তমানে বিরাজ করছে বিশাল চর। চর ওঠার কারণে রেলওয়ে ওয়াগন ফেরি পারাপার বন্ধ রাখা হয়েছে। এ সব নদীর মাঝ বরাবর ছোট একটি চ্যানেল দিয়ে কোনোরকম চলাচল করছে ইঞ্জিনচালিত শ্যালো নৌকা। এ চ্যানেল দিয়ে নৌকা চলাচল করতে অনেক সময় জেগে ওঠা ডুবোচরে আটকে পড়ে যাওয়ার তখন পরিত্রাণ পেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। যাত্রীরা পানিতে নেমে ঠেলাঠেলি করে নৌকা ভাঁসাতে হয় পানিতে। এসব কারণে দুরপাল্লার যাত্রীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। জানা যায়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত এসব জেগে ওঠা ডুবোচরের সীমানা চিহ্নিত করার ব্যবস্থা নেইনি। এ কারণে প্রায় সময়ই নৌযানগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিভিন্ন চরে আটকে থাকে।
ফুলছড়ি ইউনিয়নের খঞ্চাপাড়া গ্রামের নৌকার মালিক আজিজল হক জানান, ব্রহ্মপুত্র নদীর তিস্তামুখঘাট এলাকায় পণ্য ও যাত্রী বহনের কাজে নিয়োজিত রয়েছে প্রায় ১৫টি নৌকা। নৌ-রুট বন্ধ হয়ে যাওযায় দু’একটি নৌকা চালু থাকলেও অন্যগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে।
সাবেক ইজারাদার সর্দার আসাদুজ্জামান হাসু জানান, অসংখ্য স্থানে ডুবোচরের কারণে নৌকা চালাতে হচ্ছে খুব সাবধানে। কারণ ডুবোচরে আটকে গেলে নৌকার অনেক ক্ষতি হয়, ভেঙে যায় মেশিনের ফ্যান। বিশেষ করে পণ্যবোঝাই নিয়ে নৌকা গন্তব্যন্থলে যাওয়া খুব মুশকিল হয়ে পড়েছে।
ফুলছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর মিয়া জানান, এ রুটে চলাচলকারী নৌকার মালিক, ঘাট ইজারদার এবং ফুলছড়ি হাটের ইজাদাররা মিলে শুধু ফুলছড়ি ও ফজলুপুর নৌরুট ড্রেজিঙ্করার পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।