পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পৃথিবীর যত নামকরা ব্র্যান্ডের প্রসাধণ সামগ্রী সবই তৈরী হচ্ছে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায়। সাবান, চন্দন, মেছ্তা-দাগনাশক ক্রিম, নানা প্রসাধনী, তেল, পারফিউম সবকিছুই পাইকারী ও খুচরা বিক্রিও হচ্ছে ঢাকার ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত এলাকার মার্কেটগুলোতে। পুরান ঢাকার চকবাজার, লালবাগ ও কেরানীগঞ্জের অলিগলিহর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এসব নকল পণ্য তৈরী হয়। প্যাকেট বা বোতলে সাঁটানো উন্নতমানের লেবেল দেখলে মনেই হবে না এগুলো নকল। শুধু পণ্যসামগ্রী নয়, শিশুদের চকলেট ও গুঁড়া দুধ, ঘি, আটা, তেল, সাবান, মধু, মসলা, দই, মিষ্টি থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী, নিত্যব্যহারের কসমেটিকস, এনার্জি সেভিং বাল্ব, মোবাইল ফোন, টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, খেলনা গাড়ি ও কম্পিউটারের পার্টস এমনকি গানের সিডিও নকল হচ্ছে। অভিজাত মার্কেটের দোকানে এগুলো দেখে ক্রেতাদের সন্দেহের অবকাশ থাকে না। ভুক্তভোগি ও নকল পণ্য সামগ্রী প্রস্তুতকারকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের সময় নকল সামগ্রী তৈরী ও বেচাকেনা সাময়িক বন্ধ থাকে। এক সময় বেশ সক্রিয় ছিল ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। তখন নকল পণ্যের উৎপাদন ও বেচাকেনা অনেকটাই কমে গিয়েছিল। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অপ্রতুলতার সুযোগে আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে নকলবাজরা। তবে ঢাকা জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান বলেছেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ইনকিলাবকে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসন সব সময় জনগণের প্রয়োজনে কাজ করছে। এ প্রসঙ্গে কনজুমার কেয়ার সোসাইটির (সিসিএস) উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. আব্দুর রহমান (পিএইচডি) বলেন, নকলের প্রবণতা আমাদের দেশের তৈরী পণ্যের ভবিষ্যত নষ্ট করে দিচ্ছে। এগুলো বন্ধের জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি আইনের প্রয়োগ দরকার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর অভিজাত শপিং সেন্টার থেকে শুরু করে শহর-বন্দর, প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাটবাজার পর্যন্ত সর্বত্রই নকলের বাহার। নকলের ভিড়ে আসল পণ্য এখন অনেকটাই উধাও। নকল সামগ্রী মানেই কোনো ব্রান্ডেড কোম্পানীর সামগ্রী হুবুহু প্যাকেট করে বাজারজাত করা। চোখ ধাঁধানো নকল সামগ্রীর ঝকমকে প্যাকেটের সামনে আসল পণ্য পাত্তাই পায় না। হাইটেক সামগ্রীসহ সব ধরনের নকল পণ্য রাজধানীর ফুটপাতেও পাওয়া যাচ্ছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে জীবন রক্ষাকারী ওষুধও। রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকাগুলোতে নকল কারখানায় তৈরি ওরস্যালাইনে হাটবাজার, ফার্মেসী সয়লাব।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এখন চীনের তৈরী খেলনা সামগ্রী থেকে শুরু করে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সব সামগ্রীর নকলের মহোৎসব চলছে। ঢাকার বাইরে এগুলো বিক্রি হয় বেশি। চকবাজার থেকেই পাইকাররা সেগুলো কিনে নিয়ে যায়। দেশের গ্রামে-গঞ্জে, হাট-বাজারে ‘চায়না’ বলেই বিক্রি হয় এসব। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুরান ঢাকার নকল কারখানাগুলোর দিকে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালিত হওয়ার পর অনেক নকল কারবারীরা সেখান থেকে কারখানাগুলো অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছিল। এর মধ্যে কিছু কারখানা কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর করা হয়। আবার সেখানেও নিরিবিলিতে ধরা পড়ার ভয়ে কেউ কেউ যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, টঙ্গী, উত্তরখান, দক্ষিণখান, বাড্ডা, ডেমরা ও মুগদার ব্যস্ত ও ঘিঞ্জি এলাকাকে বেছে নিয়েছে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে নয়, বরং প্রশাসনের এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে মাসোহারার ভিত্তিতে ম্যানেজ করে চলছে নকল পণ্যসামগ্রীর কারখানাগুলো।
জানা গেছে, কদমতলী থানার কাছেই খানকাহ শরীফ রোডে তৈরী হয় নকল কোকোলা নুডুলস। নকল নুডুলসের আরও একটি কারখানা আছে দনিয়া গোয়ালবাড়ী মোড়ে। দনিয়া ক্লাবের গলিতে তৈরী গলিতেও আছে নকল জুসের ফ্যাক্টরী। কদমতলী থানা থেকে একটু দুরে মুজাহিদনগরে আছে প্রাণের নকল জুস। দনিয়া পলাশপুরে আছে নকল কাশির ট্যাবলেট ম্যাটসিলস এর কারখানা। শ্যামপুরে পূর্ব কদমতলী এলাকায় নকল ওষুধ কারখানায় তৈরী হয় নকল নাপা ও প্যারাসিটামল ট্যাবলেট। ইতিপূর্বে এই কারখানায় র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত একাধিকবার অভিযান চালিয়েছিল। কিন্তু ব্যবসা বন্ধ হয়নি। যাত্রাবাড়ীর কোনাপাড়ায় আরও একটি নকল ওধুষের কারখানা চালু আছে দীর্ঘদিন ধরে। সেখানে তৈরী হয় নেশাজাতীয় ইনোকটিন ট্যাবলেট। যাত্রাবাড়ীর মীরহাজিরবাগে অনেক আগে থেকেই আছে নকল ফ্যানসহ ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি তৈরীর কারখানা। নকল কারবারিদের মতে, মীরহাজিরবাগে নজরুলের কারখানা আছে কমপক্ষে ১৫টি। এর মধ্যে যুক্তিবাদী গলিতেই আছে বেশ কয়েকটি। এ ছাড়া যাত্রাবাড়ী থানার দনিয়া আদর্শ স্কুল রোডের পাশের গলিতে আছে মজিবরের নকল ফ্যান কারখানা। সরাইল এলাকায় আছে আরও একটি ফ্যান কারখানা। সূত্র জানায়, বাজারে প্রচলিত ন্যাশনাল, সাইফেং, বিআরবি, যমুনা, জিএফসিসহ (পাকিস্তানী) সব ধরণের ফ্যান তৈরী হয় এসব কারখানায়। প্রচÐ গরমকে সামনে রেখে এখন চাহিদা বেশি থাকায় রাতদিন কাজ চলে এসব কারখানায়।
কদমতলীর রায়েরবাগে আছে নকল খাঁটি গাওয়া ঘি, মধু, দই ও মিষ্টির কারখানা। যাত্রাবাড়ী ও কদমতলী থানা এলাকাতেই নকল ক্যাবল তৈরীর কারখানা আছে কমপক্ষে ৫০টি। দনিয়া ও পাটেরবাগ এলাকায় নকল মশার কয়েল, ঘি, গুড়, হারপিক, খাবার স্যালাইন, ভিটামিন ওষুধ, সুইচ, ছকেট, হোল্ডার কারখানা আছে বেশ কয়েকটি। আছে শতাধিক নকল মিনারেল ওয়াটারের কারখানা। মুগদাতে নকল সোয়াবিন তেল থেকে শুরু করে নকল ডিটারজেন্ট পাউডার পর্যন্ত তৈরি হচ্ছে অবাধে। পুরান ঢাকার নর্থ সাউথ রোডের অলিতে গলিতে তৈরী হচ্ছে নকল টিভি, ফ্রিজ, এনার্জি সেভিং বাল্ব, মোটর, ফ্যান, এয়ারকন্ডিশন মেশিনসহ বিভিন্ন দামী ইলেকট্রিক সামগ্রী।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নকলের প্রবণতা বন্ধ করতে হলে আইনের সঠিক প্রয়োগসহ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা দরকার। ভোক্তারা যদি সচেতন হয়ে সংঘবদ্ধভাবে নকল পণ্য বা ভেজাল খাদ্যকে বর্জন করে তাহলে এগুলোর প্রচলন একদিন আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যাবে। যারা অধিক মুনাফার আশায় এগুলো তৈরী করছে তারা নিরাশ হতে হতে একদিন এই ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে। বিএসটিআই এর একজন কর্মকর্তা জানান, এক সময় পুরান ঢাকার চকবাজার এলাকায় ৫৩ রকমের নকল প্রসাধনী তৈরী হতো। ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালিত হওয়ার পর এখন আর আগের মতো নকল জিনিস তৈরী হচ্ছে না। তবে একেবারে যে বন্ধ হয়েছে তাও নয়। বিএসটিআই-এর ওই কর্মকর্তা জানান, কয়েক বছর আগে চকবাজারের খান মার্কেটে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছুসংখ্যক ব্যবসায়ীকে জেল জরিমানা করা হয়। মালিক সমিতির কিছু ব্যবসায়ী নকল সামগ্রীর ব্যবসা ছেড়ে দেয়ার অঙ্গীকারও করেন। কিন্তু বন্ধ করা যায় নি নকলের তৎপরতা। সেদিনের অঙ্গীকারের কথা ভুলে গিয়ে অনেকেই আবার পুরনো পেশায় নেমে পড়েছেন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিউটিশিয়ানদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নকল প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহারে ত্বকের সমস্যা জটিল হয়, দেহে ছড়িয়ে পড়ে নানা ধরণের রোগ। এসব তৈরিতে এসিড, পানি, মোম, সুগন্ধি ও পারফিউমের অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়। মোমের পরিমাণ বেশি হলে তা ত্বকে ঢুকে লোমক‚প বন্ধ করে দেয়। ফলে মেছতা, ব্রন, ফাঙ্গাস জাতীয় রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। মার্কারিযুক্ত প্রসাধণী ব্যবহারে সরাসরি স্কিন ক্যান্সারের আশঙ্কা থাকে। নকল প্রসাধণী তৈরিতে নিম্নমানের ভেজাল সামগ্রী ব্যবহার করায় চুলকানি, ফোস্কা পড়া, ত্বকের প্রদাহ, সংক্রমণ এসব নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
জানা গেছে, একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা জেনে শুনেই অতি লাভের আশায় নকল পণ্য বিক্রি করেন। প্রতারিত হন ব্যবহারকারী বা ক্রেতারা। থাইল্যান্ডের বিখ্যাত হেড অ্যান্ড শোল্ডার, আমেরিকার তৈরি প্যান্টিন প্রো-ভি শ্যাম্পু ও ডাভ ক্রিম বা ভারতের গার্নিয়ার শ্যাম্পুসহ বিভিন্ন ব্রান্ডের ক্রিম, লিপস্টিক, লোশন দেদারছে বিক্রি হচ্ছে রাজধানীর চকবাজার ও মৌলভীবাজারে। সেখানকার শতাধিক পাইকারি দোকানে এসব পণ্য মূল দামের অর্ধেক দামে বিক্রি হয়। তবে এগুলো সবই নকল। পণ্যের প্যাকেট বা বোতল ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করেও আসল-নকল বোঝারও উপায় থাকে না। ঢাকার ব্যস্ততম এলাকার ফুটপাতে এসব বাহারি পণ্যে পসরা সাজিয়ে প্রকাশ্যে বিক্রি করতে দেখা যায়।
ভুক্তভোগীদের মতে, বিএসটিআই-এর নির্লিপ্ততাই নকল সামগ্রীর দাপটের জন্য দায়ী। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই বিভাগটি যুগ যুগ ধরে জনবল সংকটের দোহাই দিয়ে দায় এড়িয়ে চলছে। ভুক্তভোগীরা মনে করেন, বিএসটিআই’র অভিযান অব্যাহত থাকলে নকল পণ্যের দাপট কমতে বাধ্য। জানতে চাইলে বিএসটিআইয়ের এক সহকারী পরিচালক বলেন, একথা ঠিক যে আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। তাই বলে বিএসটিআই যে বসে আছে তা কিন্তু নয়। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাবেক এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মতে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে খাদ্য সামগ্রীতে ভেজালের মতো পণ্যসামগ্রীতেও নকলের প্রবণতা আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক কমেছে। তবে এখনও যে তৈরী বা বিক্রি হচ্ছে না তা বলা যাবে না। বরং নকলবাজরা কৌশল পাল্টিয়ে অভিজাত মার্কেটগুলোতে দামী দামী নকল পণ্য বিক্রি করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।