পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার (১৫ মার্চ) চট্টগ্রামে বিএনপির জনসভায় মানুষের ঢল নামে। জনতার গগনবিদারী স্লোগানের মধ্যে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া রাজপথে নামলে সরকারের তখতে তাউস তছনছ হয়ে যাবে বলেই তাকে অন্যায়ভাবে নির্জন কারা প্রকোষ্ঠে বন্দি করে রাখা হয়েছে। গণতন্ত্র, মানবাধিকার লুট হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণের আন্দোলনের মাধ্যমে লুট হওয়া গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। তিনি সরকারকে দাম্ভিকতা পরিহার করে অবিলম্বে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, চলমান সঙ্কট নিরসনে এটিই একমাত্র পথ। দয়া করে বিদায় নিন, জনগণ আপনাদের আর চায় না।
বন্দরনগরীর নুর আহমদ সড়কে অনুষ্ঠিত জনসভাকে ঘিরে প্রায় এক বর্গ কিলোমিটার এলাকা জনসমুদ্রে রূপ নেয়। এক সপ্তাহ আগে চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে লালদীঘি ময়দানে জনসভার ঘোষণা দিলেও পুলিশের অনুমতি পায়নি বিএনপি। বুধবার রাত ১১টার পর পুলিশের পক্ষ থেকে নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে জনসভা করার অনুমতি দেয়। অনুমতি দেয়ার পরপরই রাত থেকে শুরু হয় ব্যাপক ধরপাকড়। এরপরও জনসভাকে ঘিরে নেতাকর্মীদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে জনসভায় যোগ দেয় নেতাকর্মীরা। নির্ধারিত সময় বিকেল ৩টায় জনসভায় শুরু হলেও তার আগে পুরো এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। বিকেল নাগাদ নগরীর লাভলেইন মোড় থেকে শুরু করে নেভাল এভিনিউ, আউটার স্টেডিয়াম হয়ে কাজির দেউড়ি মোড় ও আলমাস সিনেমা পর্যন্ত বিস্তৃত হয় মানুষের ঢল। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে জনসভায় যোগ দেয়। তাদের হাতে শোভা পায় বেগম খালেদা জিয়ার ছবি ও ব্যানার ফেস্টুন। আর এতে করে মিছিলের নগরীতে পরিণত হয় পুরো নগরী। জনসভার আশপাশে মোতায়েন ছিল ২ হাজারের বেশি পুলিশ। তবে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয় জনসভা।
ধরপাকড়, বাধা-প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে জনসভা সফল করায় চট্টগ্রামের জনগণের প্রতি মোবারকবাদ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বিপ্লবী চট্টগ্রামের মানুষ প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সাহসী ভূমিকা রেখেছে। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনেও চট্টগ্রামবাসী প্রমাণ করেছে তারা গণতন্ত্রের পক্ষে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে। দেশে চরম দুঃশাসন চলছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এখানে গণতন্ত্র নেই, বাকস্বাধীনতা নেই, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই। মানবাধিকার চরমভাবে লুণ্ঠিত। অবৈধ সরকার ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে নিয়েছে। ১৫৪ আসনে ভোট ছাড়াই যে সংসদ সে সংসদে জনগণের কোন প্রতিনিধি নেই। এ সংসদে বসে জননিপীড়নমূলক আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। এক দেশে দুই আইন উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে আইনের শাসন নেই। খুন, গুম, অপহরণ নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৭৮ হাজার মামলা হয়েছে। ১১ লাখ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। রাস্তায় শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেও সরকার বাঁধা দিচ্ছে। যখন যাকে খুশি তাকে ধরে নিয়ে গুম করা হচ্ছে। রাজধানীর ছাত্রদল নেতা জাকির হোসেন মিলনের নির্মম হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, তাকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমি তার বাসায় গিয়েছি। তার বড় মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। সে কথা বলতে পারে না। পিতার জন্য এ বোবা মেয়েটির কান্না পাষাণ হৃদয়কেও গলিয়ে দিচ্ছে। মির্জা ফখরুল বলেন, খনার বচনে আছে- রাজার দোষে রাজ্য নষ্ট, প্রজা কষ্ট পায়। সরকারের দুঃশাসনের কারণে জনগণ দুঃসময় পার করছে। অর্থনীতি ধ্বংসের পথে দেশে বেকারত্ব বাড়ছে। ১০ টাকায় চাল খাওয়ানোর ওয়াদা দিয়ে তারা ক্ষমতায় এসেছিল এখন চালের দাম ৭০ টাকা। উন্নয়নের নামে লুটপাট চলছে। দেশে মানুষের নিরাপত্তা নেই। চারিদিকে আতঙ্ক আর হাহাকার।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি নয় আওয়ামী লীগই রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। আর এ কারণেই তারা পুলিশের মাধ্যমে জুলুম-নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, দেয়ালে লিখন পড়ুন, জনগণের মনের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন, জুলুম-নির্যাতন করে বেশিদিন ক্ষমতায় থাকা যাবে না। বেগম খালেদা জিয়াকে মাদার অব ডেমোক্রেসি উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনি কোন অন্যায় করেননি। সরকার তার জনপ্রিয়তাকে ভয় পায় বলেই তাকে কারাবন্দি করে রেখেছে। একজন গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে এসে গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার রক্ষায় তিনি দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন। মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মানুষের অধিকার রক্ষায় গোটা জাতি এখন ঐক্যবদ্ধ। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনা হবে। তিনি তার বক্তব্যের শুরুতে নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে দুর্ঘটনায় নিহতদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার মনে করেছিল খালেদা জিয়াকে বন্দি করে বিএনপিকে তছনছ করে দেবে। কিন্তু তাদের সে পরিকল্পনা বুমেরাং হয়েছে। খালেদা জিয়া এখন দেশনেত্রী থেকে বিশ্বনেত্রীতে পরিণত হয়েছে। তিনি বেগম খালেদা জিয়াকে দেশমাতা উপাধি দিয়ে বলেন, তার নেতৃত্বেই বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে এবং আগামী দিনে সরকার গঠন করবে।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, দেশের স্বাধীনতা আজ হুমকির মুখে। স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত করতে হলে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশে আইনের শাসন নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে দেশে প্রধান বিচারপতিকে জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করা হয় সে দেশে আইনের শাসন থাকে না। তিনি বলেন, মানুষ পরিবর্তন চায় সে পরিবর্তন আসবে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, সরকার লুটপাট করেছে বলেই ভয় পাচ্ছে। কারণ ক্ষমতা থেকে নামলেই তাদের এর জবাব দিতে হবে। উন্নয়নের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা কারও কাছে খালেদা জিয়ার মুক্তি ভিক্ষা চাই না। আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী গ্রেফতার হচ্ছে, আমরা তাদেরও মুক্তি চাই না। স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, চট্টগ্রাম বিপ্লবী চট্টগ্রাম। এ চট্টগ্রাম থেকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন হয়েছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনও চট্টগ্রাম থেকে শুরু হলো। পুলিশের শত বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে জনসভা সফল করায় তিনি চট্টগ্রামের গণমানুষকে অভিনন্দন জানান।
জনসভার মূল সমন্বয়কারী দলের স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ১৬ কোটি মানুষ বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে, আমরা জনগণের পক্ষে আছি। জনগণকে সাথে নিয়েই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করব। বাকস্বাধীনতা এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব। গণতন্ত্রের আপোষহীন নেত্রীকে বন্দি করার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে বন্দি করা হয়েছে। গণআন্দোলনের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করে আনব।
মহানগর বিএনপির সভাপতি সদ্য কারামুক্ত ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ও গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক, গোলাম আকবর খন্দকার, বেগম রোজী কবির ও এসএম ফজলুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক এমপি মোস্তফা কামাল পাশা, শ্রমিক দল নেতা এএম নাজিম উদ্দিন, বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ান প্রমুখ। জনসভা সঞ্চালনা করেন নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর। জনসভায় বেগম খালেদা জিয়ার ছবি সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন বহন করে নেতাকর্মীরা। বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে নেতাকর্মীদের অনেকে কালো ব্যাজ ধারণ করেন। কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ঢাকা এবং দেশের মহানগরগুলোতে জনসভার ঘোষণা দেয় বিএনপি। এ ধারাবাহিকতায় ১০ মার্চ খুলনায় জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। আগামী ১৯ মার্চ ঢাকায় জনসভার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। পরবর্তীতে দেশের অন্যান্য বিভাগীয় শহরেও জনসভা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।