পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বৌদ্ধবাদকে পাশ্চাত্যে একটি শান্তিপূর্ণ দর্শন হিসেবেই দেখা হয়। কিন্তু এশিয়ার বিভিন্ন অংশে ক্ষুদ্র কিন্তু ক্রমবর্ধমান ভাবে প্রভাবশালী কট্টর ভিক্ষুদের হিংসাত্মক বক্তব্য ধর্মটির সহিষ্ণু ভাবমর্যাদা বিনষ্ট করছে।
বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের উস্কানিতে সর্বশেষ সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় শ্রীলংকার বৌদ্ধ জনতা গত সপ্তাহে মুসলিম বিরোধী দাঙ্গায় মেতে ওঠে। এতে ৩ জন নিহত ও মুসলিমদের ২শ’রও বেশি স্থাপনা ধ্বংস হয়।
মিয়ানমারে উগ্র জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ ভিক্ষু নেতা অশিন উইরাথু দেশের সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষ প্রচার করেন। তার বক্তব্যে উৎসাহিত সামরিক বাহিনী রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে নির্মম দমন অভিযান শুরু করে যার পরিণতিতে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হয়।
পার্শ্ববর্তী দেশ থাইল্যান্ডে এক বিশিষ্ট ভিক্ষু তার অনুসারীদের মসজিদ পুড়িয়ে দেয়ার আহবান জানিয়েছেন।
যে ধর্মটি অহিংসার কথা বলে সে ধর্মের অনুসারীদের এভাবে অসহিষ্ণু হয়ে ওঠা ও আগ্রাসী আচরণের কারণ কী?
বিটপন্থী, হলিউড, মেডিটেশন ক্লাস, ট্রপিক্যাল হলিডে ও দালাইলামার অনুপ্রেরণা মূলক বক্তব্যের মাধ্যম বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী হওয়া পাশ্চাত্যের অনেককেই এসব ভিক্ষুদের কার্যকলাপ মর্মাহত করতে পারে।
তবে বৌদ্ধ ধর্ম ও সহিংসতা বিষয়ে সদ্য একটি পুস্তক রচনাকারী ইয়ংসটাউন স্টেট ইউনিভার্সিটির ধর্ম বিষয়ক বিশেসজ্ঞ মাইকেল জেরিসন বলেন, ইতিহাসে আগাগোড়াই দেখা যায় যে অন্য যে কোনো ধর্মের মত কিছু বৌদ্ধও সহিংসতাকে বৈধ করতে ধর্মকে ব্যবহার করেছে।
তিনি বলেন, শ্রীলংকা, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড যে দেশেই হোক, সব জায়্গাতেই মনোভাব একই রকম যে বৌদ্ধ ধর্ম যেভাবেই হোক হুমকির মুখে। তিনি বলেন, প্রতিটি এলাকারই নিজস্ব ইতিহাস আছে, নিজস্ব কারণ ও প্ররোচনা দাতা আছে, এই উস্কানিদাতারা আন্তঃসংযুক্তও বটে।
এশিয়ার চারপাশে সাম্প্রতিক বহু ঘটনায় মুসলমানরা এই হামলার লক্ষ্য।
জেরিসন বলেন, আফগানিস্তানে তালিবানের বামিয়ান বুদ্ধমূর্তি ধ্বংস এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হুংকারের পর পক্ষপাতদুষ্ট ঐতিহাসিক দুর্দশা সাম্প্রতিক ইসলামোফোবিয়ার সাথে সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে।
বহু শতাব্দী ধরে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও ব্যবসা-বাণিজ্য করার পর বৌদ্ধ মৌলবাদী গ্রুপগুলো ইসলামকে আগ্রাসী, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় বৌদ্ধ সাম্রাজ্য ধ্বংসকারী এবং এখন জিহাদ বা উচ্চহারে বংশবৃদ্ধির মাধ্যম আধুনিক বৌদ্ধ দেশগুলোর প্রতি অনুরূপ হুমকি সৃষ্টিকারী বলে চিত্রিত করছে।
মিয়ানমারের উইরাথু তার বক্তৃতার মাধ্যমে ও ফেসবুকে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিয়ে অনুসারী গোষ্ঠি তৈরি করেছেন। জানুয়ারিতে সরকার তার ফেসবুক পাতা বন্ধ করে দেয়।
মুসলমানরা যেখানে মিয়ানমারের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৪ শতাংশেরও কম সেখানে উইরাথু মিয়ানমার থেকে ব্দ্ধৌ ধর্ম নির্মূল করার মুসলিম ষড়যন্ত্র দেখছেন।
তার মা বা থা গ্রুপ আন্তঃধর্ম বিবাহ ও ধর্মান্তর বন্ধে আইন প্রণয়নের জন্য সরকারকে চাপ দিচ্ছে।
শ্রীলংকায় বৌদ্ধ জঙ্গিরা মূলধারায় পৌঁছে গেছে। তারা দাঙ্গা পুলিশের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে ও সরকার বিরোধী বিক্ষোভ করছে।
২৬ বছর গৃহযুদ্ধ চলাকালে বৌদ্ধ সিংহলী সম্প্রদায়ের উগ্র জাতীয়তাবাদী ক্রোধ দেশের তামিল হিন্দুদের উপর নিপতিত হয়েছিল। কিন্তু ২০০৯ সালে তামিল টাইগাররা পরাজিত হওয়ার পর তাদের রোষ গিয়ে পড়েছে দেশের ১০ শতাংশ মুসলমানের উপর।
মুসলিম বিরোধী আন্দোলনের বিশিষ্ট নেতা ভিক্ষু গালাগোদাত্তে গানাসারা মুসলিম বিদ্বেষী মন্তব্য ও কোরআন অবমাননার জন্য গ্রেফতার হয়েছিলেন। তিনি এখন জামিনে আছেন। তিনি সম্প্রতি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, শ্রীলংকায় কোরআন নিষিদ্ধ করতে হবে। আপনারা তা না করলে আমরা ঘরে ঘরে যাব ও নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত প্রচার চালাব।
তার সংগঠন বিবিএস - বৌদ্ধ বাহিনী ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে উইরাথু ও তার অনুসারীদের শ্রীলংকা সফরে স্বাগত জানিয়েছিল।
থাইর্যান্ডে মুসলিম বিরোধী কট্টরপন্থীদের সাফল্য তত নয়। থাই মহিলা কলামিস্ট সানিতসুদা একাচাই বলেন, বহু বছর ধরে চলা দুর্নীতি কেলেংকারি ধর্মের প্রতি বিশ্বাস হ্রাস করেছে। তিনি এএফপিকে বলেন, স্থানীয় ভিক্ষুদের জাতিগোষ্ঠিগত বিষের মিয়ানমার ও শ্রীলংকায় তাদের সমগোত্রের কাছে মূল্য থাকলেও থাইল্যান্ডের জনগণ ও সরকারের কাছে তা একেবারেই পাত্তা পায় না।
কিন্তু তা সত্তেও মালয়ী মুসলিম প্রধান দেশের দক্ষিণে উত্তেজনা রয়েছে। সেখানে গত এক দশক ধরে চলা বিদ্রোহে সাড়ে ৬ হাজার লোক নিহত হয়েছে। তাদের অধিকাংশই বেসামরিক মুসলিম। তবে বৌদ্ধ ভিক্ষুরাও জঙ্গিদের হামলায় নিহত হয়েছে। ফলে ইসলামের প্রতি সেখানে বিরূপ মনোভাবের সৃষ্টি হচ্ছে।
এক তরুণ ও প্রভাবশালী সাবেক ভিক্ষু মাহা আপিচাত তার ফেসবুক ব্যবহার করে মসজিদ পুড়িয়ে দেয়ার জন্য তার অনুসারীদের আহবান জানাতেন। তাকে ভিক্ষুর দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বৌদ্ধ ধর্মগুরুরা সরাসরি অংশ না নিয়েও সহিংসতা সৃষ্টি করতে পারেন।
নরওয়ের ধর্মতত্ত¡ স্কুলের মহিলা শিক্ষক এবং মিয়ানমার ও শ্রীলংকায় বৌদ্ধ রক্ষণশীল আন্দোলন বিষয়ে ব্যাপক লেখালেখি করেছেন আইসেলিন ফ্রাইডেনলান্ড। তিনি বলেন, দু’টি অতি বিরল ব্যতিক্রম ছাড়া বৌদ্ধ ভিক্ষুরা নিজেরা স্বয়ং সহিংসতায় সম্পৃক্ত হননি। কিন্তু তারা অন্যদের সহিংসতার পক্ষে যৌক্তিকতা প্রদর্শন করেন।
তিনি বলেন, এটা শুধু ইসলামোফোবিয়া নয় যাতে এ গ্রুপটি হাওয়া দিচ্ছে- এখানে উপনিবেশনবাদের ইতিহাস, বৈশিকীকরণ ও ধর্মনিরপেক্ষতা সব কিছুরই ভ‚মিকা রয়েছে। তিনি বলেন, লোকে উপলব্ধি করছে যে তারা তাদের ঐতিহ্য হারাচ্ছে।
ব্যাংককের চুয়ালালাংকর্ন বিশবিদ্যালয়ের রাজনীতি বিশেষজ্ঞ পুয়াংথং পাওয়াকাপান সাম্প্রতিক অতীতে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের উপর কম্যুনিজমের হুমকির কথা উল্লেখ করেন।
গত শতকের ’৭০-এর দশকে শীতল যুদ্ধের সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাইল্যান্ডের অত্যন্ত খ্যাতিমান বৌদ্ধ ভিক্ষু কিত্তিউত্থোর কথা অনেকেই স্মরণ করেন। তিনি তার অনুসারীদের বলেছিলেন, কম্যুনিস্টদের হত্যা করা পাপ নয়।
জেরিসন বলে, সাম্প্রতিক ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা দুর্বল সংখ্যালঘুদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে- যেমন বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, মুসলিমদের বৌদ্ধদের শত্রুর তকমা লাগিয়ে দিয়ে, যা ঐতিহাসিক ভাবে সত্য নয়, তারা এ ধারণাকেই দৃঢ় করতে চায় যে মুসলিম ও বৌদ্ধদের মধ্যে শত্রুতার সর্ম্প্ক। তিনি বলেন, এর ফলে ক্ষতি হচ্ছে , আস্থা নষ্ট হচ্ছে , সৃষ্টি হচ্চে ভীতি ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।