পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মহসিন রাজু / সৈয়দ শামীম শিরাজী / জয়নাল আবেদীন জয় : বঙ্গবন্ধু সেতুর ওজন স্কেলের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা কর্মচারীদের ম্যানেজ করে প্রতিদিন এই সেতু দিয়ে পারাপার হচ্ছে মালামাল বহনকারী ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ ভারী যানবাহন। ওজন স্কেলের মাপ এড়িয়ে অভিনব এই জালিয়াতির কারণে চলাচলকারি যানবাহন থেকে একদিকে প্রতিদিন সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। অন্যদিকে এসব মালামাল বহনকারী ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে মারাতœক হুমকির মুখে পড়েছে বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুসহ উত্তরাঞ্চলের সড়ক মহাসড়কের ছোট বড় ব্রীজ-কালভার্ট এবং শত শত কিলোমিটার পাকা রাস্তা। প্রতিনিয়ত ধারণ ক্ষমতার অধিক ভারী যানবাহনের চলাচলের কারণে পাকা রাস্তা, ব্রীজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় এগুলো মেরামতে প্রতিবছর সরকারের হাজার কোটি টাকার বাড়তি ব্যয় বাড়ছে। দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব ঘটলেও তা যেন দেখার কেউ নেই। এতে যে কোন সময় এ জনপদের ব্রীজ কালভার্ট ভেঙ্গে মারাতœক দুর্ঘটনার আশংকা করা হচ্ছে।
সওজ বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্রের সাথে সাথে কথা বলে জানা যায়, সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের ৪১ তম সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক জাতীয় মহাসড়কে ২ এক্্েরল (৬ চাকা) বিশিষ্ট গাড়ী মালামাল সমেত ২২ টন ধারন ক্ষমতার যানবাহন চলাচলের সাময়িক অনুমতি রয়েছে। এর অধিক ভারী যানবাহন গুলোকে মহাসড়কের চলতে নিষেধ করে উৎসে ফেরত পাঠাতে বলা হয়। ১০ চাকার মালামাল বাহী গাড়ী সর্বোচ্চ ৩০ টন ধারন ক্ষমতা নিয়ে চলাচলের নিয়ম রয়েছে। একই নিয়ম বঙ্গবন্ধু সেতুসহ ব্রীজ কালভার্টের ক্ষেত্রে হলেও তা মানা হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে উত্তরাঞ্চলের সড়ক-মহাসড়ক এবং ব্রীজ-কালভার্ট গুলোর উপর দিয়ে ধারণ ক্ষমতার তিন থেকে চারগুণ বেশি ওজনের বিভিন্ন ধরণের ভারী যানবাহন চলাচল করছে। এমনকি দেড় শ’টন ওজনের মালামাল নিয়েও যানবাহন চলাচল করছে বলে তথ্য রয়েছে। সম্প্রতি উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার হাটি কুমরিল হাইওয়েতে এ্যানার্জি প্যাক কোম্পানীর কয়েকটি বৈদ্যুতিক ট্র্যান্সফরমারবাহী ৬৪ চাকার মালবাহী গাড়ী আটকিয়ে এর সত্যতা প্রমাণ পাওয়া সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া সওজ উপ-বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মো.জহুরুল আলম। তিনি এমন কয়েকটি গাড়ীকে পার হতে দেখে দুটি গাড়ি আটকিয়ে কাগজপত্র দেখে জানতে পারেন , ৬৪ চাকার ৫৬ টন ওজনের গাড়িটি ৭৬ টন ওজনের ট্র্যান্সফরমার নিয়ে নারায়নগঞ্জ থেকে কুড়িগ্রামে একটি বিদ্যুত কেন্দ্রে যাচ্ছিল। ট্র্যান্সফরমার সমেত গাড়িটির ওজন দাড়ায় তখন ১শ’৩২ টন ! প্রশ্ন ওঠে মালামাল নিয়ে এতভারী যানবাহন নারায়নগঞ্জ থেকে মহাসড়ক ধরে হাইওয়ে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের নজর এড়িয়ে কিভাবে বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু পার হয়ে এলো ? সংশ্লিষ্ট গাড়ির চালকের সাথে কথা বলে জানা যায়, নারায়নগঞ্জ থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ৪৮ চাকার আরেকটি গাড়ীতে এই ট্র্যান্সফরমার বহন করে নিয়ে আসার সময় সেতুর ওজন স্কেলে ওঠার আগেই ঠেকিয়ে দেয়া হয়। পরে ওজন স্কেলের কর্মচারীদের ম্যানেজের পর তারা পরামর্শ দেয় ৬৪ চাকার হাইড্রোলিক একাধিক এ্যাক্্েরলের গাড়ীতে ট্রান্সফরমার পরিবহনের। পরে তাদের কথা মত ৬৪ চাকার ট্রাকেই এমন ট্র্যন্সফরমার বাহী ২৬টি গাড়ী সেতু দিয়ে পার হয়ে উত্তরাঞ্চলের সড়ক-মহাসড়ক এবং ছোট বড় ব্রীজ কালভার্ট পার হয়ে কোন বাধার মুখে না পড়েই সবকিছু ম্যানেজ করে নির্বিঘেœœ কুড়িগ্রামে বৈদ্যুতিক কেন্দ্রে পৌছে গেছে। বিষয়টি নিয়ে ওই প্রকৌশলী চরম হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, মালামাল নিয়ে এতভারী যানবাহন চলাচলের ক্ষমতা মহাসড়কের নেই। সওজ বিভাগের সড়ক মহা-সড়ক এবং ব্রীজ কালভার্ট গুলো এতভারী যানবাহন চলাচলের উপযুক্ত নয়। তিনি বলেন, ১০০ মিটার একটি সেতুর উপর যখন ১শ’৩২ টন ভারী ওজনের ৭০ ফিট একটি গাড়ী ওঠে তখন ব্রীজের উপর ওই গাড়ীর পুরো ওজন ভর করে ! এতে যে কোন সময় ব্রীজগুলো ওই মালবাহী গাড়ী সহ ভেঙ্গে পড়তে পারে। ভেঙ্গে না পড়লেও ব্রীজ কালভার্ট গুলো দিনে দিনে নড়বড়ে হয়ে পড়ছে। একই সাথে মহা-সড়কের পাকা রাস্তাগুলোও এতভারী যানবাহন চলাচলের কারণে নির্মাণের কিছুদিনের মাথায় ঘন ঘন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বছর না ঘুরতেই এসব বিপর্যস্ত ব্রীজ কালভার্ট ও পাকা রাস্তা মেরামতে সরকারি কোষাগারের হাজার কোটি টাকার বাড়তি খরচ হচ্ছে। কিন্তু তা কেউ আমলেই নিচ্ছে না। উল্টো রাস্তা,ব্রীজ কালভার্ট নষ্ট হওয়ায় এগুলোর নির্মাণে নিয়োজিত ঠিকাদার ও প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে অনিয়ম দূর্ণীতির অভিযোগ তোলা হচ্ছে। পরে আপাত সমাধান হিসেবে আটক গাড়ী গুলোকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করে ছেড়ে দেয়া হয়।
এদিকে উত্তরাঞ্চলের একাধিক ট্রাক মালিক ও চালকদের সাথে কথা বলে ও সরেজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে বঙ্গবন্ধু সেতুর টোলপ্লাজায় ওজন স্কেলে প্রকাশ্য ঘটে চলছে অভিনব জালিয়াতির ঘটনা। ধারণ ক্ষমতার অধিক মালামাল বহনকারী গাড়িগুলো ওজন স্কেলের দায়িত্বে থাকা কর্মচারীদের ম্যানেজ করে গাড়ীর সামনের চাকার উপর পুরো মালামাল লোড করে ওজনে ফাঁকি দিয়ে কম শুল্ক দিয়ে সেতু পারাপার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেতুতে মালবাহী গাড়ীর পিছনের চাকার ওজন নেয়া হয় বলে এমন জালিয়াতি করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু দিয়ে চলাচলকারী প্রতিটি মালবাহী ট্রাকসহ সিমেন্ট কারখানার ক্লিংকারবাহী ট্রাক, পাথর বোঝাই ট্রাক, রড সিমেন্টের গাড়ী, সবজির ট্রাকসহ যাবতীয় মালবাহী গাড়ী সেতুর উপর ওঠার আগেই হাটিকুমরুল হাইওয়ে এলাকায় রাস্তার পাশেই গাড়ি থামিয়ে শ্রমিক দিয়ে সব মালামাল গাড়ির সামনের এক্্েরলের উপর লোড করে। এতে সেতুর ওজন স্কেলে মালবাহী গাড়িটির ওজন কম দেখায় এবং ধারণ ক্ষমতাও কম দেখায়। সেতুর পার দিয়ে আবার অন্য শ্রমিক দিয়ে মালামাল পুরো গাড়িতে স্বাভাবিকভাবেই লোড করা হয়। বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর দুই পারেই চলছে এমন কর্মকান্ড। দীর্ঘদিন ধরে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার সামনে থেকে বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু পর্যন্ত একাধিক স্পটে শ্রমিকরা প্রকাশ্য গাড়ী থামিয়ে সামনের দিকে মালামাল লোড করে দিচ্ছে। প্রতিটি গাড়ী ভেদে সেতুর পশ্চিম পাড়ে নেয়া হয় ৬-৭শ’ টাকা। পূর্বপাড়ে নেয়া হয় ৩ থেকে ৪ শ’টাকা। সেতুর টোলপ্লাজার দায়িত্বরত কর্মচারীদের সাথে সখ্যতা করে এসব করছে শ্রমিকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শ্রমিক এবং পরিবহ মালিক জানান, শ্রমিকদের এই আদায় করা টাকার একটা বড় অংশ নেন টোলপ্লাজার ওজন ষ্টেশনের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। যার কারণে তারা এই সুবিধায় মালবাহী গাড়ীগুলোকে নির্বিগ্নে পারাপার হতে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ আছে।
রোববার সকালে হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার পাশে ব্রীজের পূব পাশে একটি পাথর বোঝাই ট্রাক দাড় করিয়ে সামনের দিকে পাথর লোড করে দিচ্ছিল ৪ জন শ্রমিক। কথা হলে নাম প্রকাশ না করে তারা জানায় এ কাজের জন্য তারা গাড়ীর মালামাল ভেদে ৫-৬শ’ টাকা করে নিচ্ছেন। প্রতিদিন তারা অন্তত ১০-১২টি মালবাহী গাড়িতে এই কাজ করে ভালই আয় করেছে। তাদের মত এই সেতুতে ওঠার আগে তাদের মত একাধিক গ্রæপে বিভক্ত শ্রমিকরা এ কাজ করছে বলে তারা জানায়। শ্রমিকরা আরো জানায় এ কাজে মালবাহী গাড়ীর চালকরা সেতুতে গিয়ে ওজনে কম হওয়ায় কোন বাধা ছাড়াই পারাপার হতে পারছে। তাদের এই টাকার ভাগ টোলপ্লাজার কর্মচারীদের দেয়া হয় কিনা জানতে চাইলে তারা নীরব হয়ে যায়। তবে কায়দা করে বলে, ‘ গরীবের পেটে লাথি দেবেন না। সবার সাথে মিলে এ কাজ করে সংসার চালাচ্ছি।’ উল্লাপাড়া মালিক সমিতির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বঙ্গবন্ধু সেতুর দুই পারে এভাবে জালিয়াতি করে মালামাল লোড আনলোড করায় পারাপারে সময় লাগছে বেশি। গাড়ী যানজটের কবলে পড়ছে। ধারণ ক্ষমতার অধিক ভারী যানবাহনগুলো শ্রমিকদের দিয়ে অভিনব পন্থায় লোড আনলোড করে পারাপারে সহায়তা করে লাভবান হচ্ছে সেতুর টোলপ্লাজার অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এতে সরকার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। তিনি বলেন প্রতিদিন প্রশাসনের সামনেই এই জালিয়াতি হচ্ছে।
উত্তরাঞ্চলের প্রবেশে মহাসড়কে যানবাহন চলাচলের দায়িত্বে থাকা হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.আব্দুল কাদের জিলানী ধারণ ক্ষমতার অধিক ভারী যানবাহন চলাচলের কথা স্বীকার করে জানান, গত আড়াই মাসে ধারণ ক্ষমতার অধিক বোঝাই দিয়ে চলাচলকারী প্রায় ১ হাজার গাড়ীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছি। প্রতিনিয়ত এগুলো নিয়ন্ত্রনে কাজ করছি। তিনি উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানা পুলিশের এসব অতিরিক্ত মালবাহী গাড়ীগুলোকে নিয়ন্ত্রণ এবং দেখার করার দায়িত্ব রয়েছে। মালবাহী ট্রাকগুলো সেতুতে ওঠার আগে রাস্তায় অভিনব কারসাজি করছে বলে তিনিও স্বীকার করেন। তিনি বলেন অধিকভারী যানবাহন সেতু দিয়ে কিভাবে পারাপার হয়ে যায় এবং আসে তা সেতু বিভাগই বলতে পারবেন। এ বিষয়ে রোববার দুপুরে মুঠোফোনে কথা হলে বঙ্গবন্ধু সেতুর টোলপ্লাজার ওজন ষ্টেশনের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী মো.আহসান মাসুদ বাপ্পী জানান, অনিয়ম করে সেতুর টোলপ্লাজা দিয়ে অধিকভারী কোন যানবাহন চলাচলের প্রশ্নই আসে না। তবে নিয়ম মেনে একাধিক এক্্রলের গাড়ীতে হাজার টন ওজনের মালামালও নেয়ার নিয়ম আছে। নিয়মের বাইরে এখানে কোন কাজ করার সুযোগ নেই। গোপন লেনদেনের মাধ্যমে কৌশলে ভারী যানবাহন চলাচলের কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, টোলপ্লাজাটি ডিজিটাল সিস্টেমে পরিচালিত হয়। তাই অনিয়ম দুর্নীতি করার প্রশ্নই ওঠে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।