Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মশায় অতিষ্ঠ নগরবাসী

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বিকার

| প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সায়ীদ আবদুল মালিক : মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। বাসাবাড়ি, দোকানপাট, স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত সর্বত্রই অসহনীয় মশার উপদ্রব। বছরে এ খাতে অর্ধশত কোটি টাকা খরচ হলেও কমছে না মশা। বর্তমানের মশার উপদ্রব ভয়াবহ আকার ধারন করলেও ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনের এ ব্যপারে নেই কার্যকর কোন পদক্ষেপ। রাজধানীতে মশার উপদ্রব এতোটাই বেড়েছে যে গত সপ্তাহে ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজ ছাড়তে দুই ঘণ্টা দেরি হয়েছে। বিমানের কক্ষে মশা ঢুকে পড়ে। টানা দুই ঘণ্টধরে মশা তাড়ানোর পর বিমান চলাচল স্বাভাবিক করতে সক্ষম হয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে মশার উপদ্রব রোধে বৈঠকের কথাও জানিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ।
দুই সিটি কর্পোরেশনের চলতি অর্থ বছরের জন্য মশা নিধনের বাজেট ৩৭ কোটি টাকা। এই টাকা দিয়েও মশা নির্মূল হচ্ছে না। বরং দিন দিন মশার যন্ত্রণা বাড়ছেই। ঢাকার বাসিন্দারা যেনো মশার কাছে অসহায়। রাতে তো বটেই দিনের বেলায়ও চলছে মশার অত্যাচার। মশারি টানিয়ে, কয়েল জ্বালিয়ে, ইলেকট্রিক ব্যাট কিংবা মশানাশক ওষুধ স্প্রে করেও রক্ষা মিলছে না।
অথচ মশা নিধনে বছর বছর বরাদ্দ বাড়াচ্ছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি)। অভিযোগে প্রকাশ, বরাদ্দ বাড়লেও মশার যন্ত্রণা থেকে রেহাই মিলছে না নগরবাসীর। তাদের মতে, বরাদ্দ বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মশার উপদ্রব। জানা গেছে, কয়েল জ্বালিয়ে, ওষুধ ছিটিয়ে, মশারি টাঙিয়ে মশার উপদ্রব থেকে নিস্তার পাওয়ার চেষ্টা করছেন নগরীর বাসিন্দারা। কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না। দিনে বাচ্চাদের মশারি টাঙিয়ে ঘুম পাড়াতে হয়। মোহাম্মদপুরের বসিলার বাসিন্দা গৃহবধূ রাবেয়া খাতুন বলেন, এই এলাকায় সিটি কর্পোরেশন মশার ওষুধ ছিটায় না। স্বাভাবিক সময় মশার কয়েল বা স্প্রে করলে মশা নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু মশার প্রজনন মৌসুমে কয়েল জ্বালিয়ে বা স্প্রে করেও মশার উপদ্রব থেকে নিস্তার পাওয়া যাচ্ছে না। প্রায় তিন মাস ধরে আমরা মশার উপদ্রবের মধ্যে আছি। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের কোনো কার্যক্রম লক্ষ্য করছি না। খাল ও ডোবা-নালাগুলো পরিষ্কার করে দিলে মশার উপদ্রব থেকে কিছুটা হলেও নিস্তার পেতাম। অভিজাত এলাকা উত্তরার বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন শ্রমিকদের সকাল-বিকাল দু’বার মশক ওষুধ ছিটানোর কথা থাকলেও তারা সেটা করেন না। বেশিরভাগ মানুষের অভিযোগ, মাসে সর্বোচ্চ দু’বার দেখা মিলে মশকনিধন শ্রমিকদের। সাত নম্বর সেক্টরের ৩০ নম্বর সড়কের বাসিন্দা মমিনুল হক বলেন, এই এলাকায় মশকনিধন শ্রমিকদের দেখাই মিলে না। দিনে দুইবার ওষুধ ছিটানোর কথা থাকলেও তাদের দেখা মাসেও একবার মিলে না। প্রায় তিন মাস হতে চলল মশার উপদ্রব বেড়েছে। এলাকাবাসী স্থানীয় কাউন্সিলরকে বিষয়টি জানালেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।
জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পুকুর-ডোবা, নালা-নর্দমার কচুরিপানা ও ময়লা পরিষ্কার না করায় সেগুলো এখন মশা উৎপাদনের খামারে পরিণত হয়েছে। মশা নিধনের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। তবে অভিযোগ রয়েছে, ওষুধ স্প্রে করার জন্য প্রতি ওয়ার্ডে ৬ জন করে কর্মী থাকলেও কয়েকমাসেও তাদের কোন খোঁজ পাওয়া যায় না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শেখ সালাহউদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, আবহাওয়া জনিত কারণে বর্তমান শুষ্ক মৌসুমে মশা বাড়বেই এটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, আমরা ডিএসসিসি এলাকায় মশক নিধনে ক্রাশ প্রোগ্রাম পরিচালনা করছি। সেই সাথে আগের বছরের তুলনায় এ বছর আমরা মশক নিধনে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ ঔষধের ব্যবহার বৃদ্ধি করেছি। এক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, আগের তুলনায় মশা এখন বেশি শক্তিশালী। সেই কথা বিবেচনায় রেখে আমাদেরকে ঔষধের ব্যবহারের কিছুটা পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। মশা নিধনে অতিরিক্ত মাত্রায় ঔষধ ব্যবহার করা হলে সেটা আবার মানুষের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। মশা মারতে গিয়ে আমারা মানুষতো মারতে পারি না।
গুলশান, বনানী ও উত্তরাসহ রাজধানীর অভিজাত এলাকা থেকে শুরু করে সর্বত্রই মশার উপদ্রব আশংকাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম কাগজে কলমে চললেও বাস্তবে দেখা মিলে না। বেড়ে গেছে মশার উপদ্রব। রাজধানীর অধিকাংশ এলাকার মানুষ মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। বর্তমানে এসএসসি, দাখিল ও সমমানের সার্টিফিকেট পরীক্ষাসহ অনার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষা চলছে, মার্চ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। মশার অত্যাচারে পরীক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মারাত্মক বিঘœ ঘটছে। সন্ধ্যার পর কোথাও একটু বসার উপায় নেই।
ঢাকা শহরের মশক নিধনের দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনসহ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ মশক নিবারণী দফতর। এই তিন প্রতিষ্ঠান মিলেও নগরবাসীকে মশার হাত থেকে রক্ষা করতে পারছে না। অথচ এ তিনটি নাগরিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর মশক নিধন খাতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে। যা নিয়ে নগরবাসীর অভিযোগের শেষ নেই।
তেজগাঁও, মহাখালী, ফকিরাপুল, কমলাপুর, মানিকনগর, বাসাবো, মুগদাপাড়া, খিলগাঁও, ধোলাইখাল, মীর হাজীরবাগ, যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর, কামরাঙ্গীরচর, সূত্রাপুর, মোহাম্মদপুর, সায়েদাবাদ, রামপুরা, বাড্ডা, কুড়িল, মিরপুর, গাবতলী, দারুস সালাম, হাজারীবাগ, গোড়ানসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে এ সমস্ত এলাকায় মশার উপদ্রব সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়াও নগরীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরা, ধানমন্ডিতেও বেড়েছে মশার উপদ্রব। অভিজাত এলাকাগুলোর বেশিরভাগ ফ্ল্যাট বাড়িতে জানালা-দরজায় নেট লাগানো সত্তে¡ও যেন রেহাই নেই মশার অত্যাচার থেকে। নিচতলা থেকে শুরু করে ২০ তলা পর্যন্ত সর্বত্রই মশার সমান উপদ্রব।
ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশন প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ রাখা হয় মশা নিধনের জন্য। বরাদ্দকৃত টাকা খরচও করে দুই সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু নগরীতে মশার ওষুধ ছিটাতে দেখা যায় না তেমন একটা।
অভিযোগ রয়েছে, মশার ওষুধ ছিটানো হয় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সিটি কর্পোরেশন কর্মকর্তাদের পছন্দের এলাকায়। কোথাও কোথাও ছয় মাসেও একবার দেখা যায় না আবার কোথাও মাসে দুই থেকে তিনবারও ওষুধ ছিটানো হয়।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (ডিসিসি) উত্তর ও দক্ষিণের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, মশক নিধন কার্যক্রম চলছে। তবে তা দৃশ্যত নেই বলেই জানান ভুক্তভোগীরা।
জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় জলাশয় রয়েছে প্রায় এক হাজার বিঘা। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণে রয়েছে ৪৮৭ বিঘা। এসব জলাশয়ে কচুরিপনা ও আবর্জনা জমে আছে। এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। ফলে শীত মওসুম এলে জলাশয়ের আবদ্ধ পানি দুর্গন্ধময় হয়ে মশার প্রধান প্রজনন স্থলে পরিণত হয়।
সিটি কর্পোরেশনের মশা নিধনের দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিদিন মশার ওষুধ ছিটানোর জন্য ৫ থেকে ৬ জন করে কর্মী নিযুক্ত আছেন। তারা দিনে দুবার ওষুধ ছিটানোর কাজ করেন। তবে সিটি কর্পোরেশন এমন দাবি করলেও নগরবাসী তাদের দেখতে পান কালেভদ্রে।



 

Show all comments
  • Mohammad Ibrahim ১ মার্চ, ২০১৮, ১১:২৪ এএম says : 0
    প্রচারের খরচ কিময়ে মশা নিধনে মন দেয়া দরকার
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মশা

৪ জানুয়ারি, ২০২৩
১৩ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ