বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
সিলেট ব্যুরো: সিলেটের জৈন্তাপুরে ওয়াজ মাহফিলের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে এক মাদরাসা ছাত্র নিহত এবং ঘর-বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এখনো কোন পক্ষই মামলা দায়ের করেনি। পরিস্থিতিও শান্ত রয়েছে। তবে উভয় পক্ষই পাল্টাপাল্টি দোষারোপ চালাচ্ছে। অন্যদিকে সিলেটের শান্তিপ্রিয় মুসলমানরা বিষয়টি আপোষ সমাধান প্রত্যাশা করছেন। বাড়াবাড়ি বা উসকানীমূলক আচরণ না করে অনাকাঙ্খিত ঘটনাটির আপোষ নিষ্পত্তি হলেই সেটি ধর্মের জন্য ইতিবাচক হবে বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ। এ ব্যাপারে জৈন্তাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এখলাছুর রহমান বলেন, বিবদমান দু’টি পক্ষের মধ্যে এই বিরোধ বিগত কয়েকবছর ধরে চলে আসছে। কোনপক্ষই কোনপক্ষকে ছাড় দিতে রাজি নয়। নিজেরা নিজেদের দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করতেই মরিয়া। গত সোমবার রাতের ঘটনার আগে থেকেই এই বিষয়টি সমাধানের ব্যাপারে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে একাধিকবার বৈঠক করা হয়েছে। কিন্তু কোন পক্ষই মীমাংসার পথে হাটেনি। স্থানীয় প্রশাসন ব্যর্থ হয়ে বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের কাছে প্রেরণ করেছেন। কিন্তু জেলা প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে বসার আগেই সোমবারে আমবাড়ি এলাকায় ঘটে অনাকাঙ্খিত সংঘর্ষের ঘটনা। দু’টি পক্ষের সংঘর্ষের জেরে ঝরে গেল মাদরাসার ছাত্রের প্রাণ। নিরীহ-নিরপরাধ মানুষদের ঘর-বাড়িতে করা হল অগ্নি-সংযোগ। এসব কোন ভাবেই কাম্য নয়। এর আগে ওয়াজ মাহফিলকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে প্রায় ৪ ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষে এক মাদরাসা ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ছাত্র হরিপুর মাদরাসার ছাত্র মোজাম্মেল হোসেন। এ ঘটনায় অর্ধশতাধক লোকজন আহত হন। নিহত ছাত্রের পক্ষের লোকজন অন্তত ৪৫টি ঘর-বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে। গত সোমবার রাত ১১টা থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়ে একটানা মঙ্গলবার ভোররাত ৪টা পর্যন্ত চলে। তবে ঘর-বাড়িতে অগ্নিসংযোগের বিষয়টি তারা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অস্বীকার করেছেন। তারা এর জন্য অন্য পক্ষকে দোষারোপ করছেন।
ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এখলাছুর রহমান বলেন, বিগত কয়েক বছর থেকে ওয়াজ মাহফিল নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য উপজেলা প্রশাসন পর্যায়ে একাধিক বৈঠক হলেও নিষ্পত্তি হয়নি। জেলা প্রশাসক মো. রাহাত আনোয়ার বলেন, সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে এডিসিকে (সার্বিক) প্রধান করে ৩ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দেওয়া হয়েছে সহায়তা। ঘটনার সাথে যে কেউ জড়িত থাকুক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। জেলা প্রশাসক মো. রাহাত আনোয়ার ও পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান গত মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে আর্থিক সহায়তা করা হচ্ছে। তাদের সাথে ছিলেন এডিসি (সার্বিক) শহিদুল ইসলাম, জৈন্তাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌরীন করিমসহ জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ। এদিকে মাদ্রাসা ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মাদরাসাতুল উলুম দারুল হাদিস হরিপুর বাজার মাদরাসার শিক্ষা সচিব মাওলানা নজরুল ইসলাম। ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই পরে বিভিন্ন বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জামেয়া কাসিমুল উলুম হযরত শাহজালাল (র.) দরগাহ মাদরাসায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। মাদরাসাতুল উলুম দারুল হাদিস হরিপুর বাজার মাদরাসার উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মাওলানা নজরুল ইসলাম বলেন, জৈন্তাপুর উপজেলার ১নং লক্ষিপুর আমবাড়ি গ্রামের জামে মসজিদে আয়োজিত সোমবার ওয়াজ মাহফিলে বক্তব্য রাখতে গিয়েছিলেন মাদরাসাতুল উলুম দারুল হাদিস হরিপুর বাজার মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা মাওলানা আব্দুস সালাম। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি মসজিদে উপস্থিত হন। এ সময় বক্তব্য রাখছিলেন মাওলানা গাজী সোলায়মান হোসেন। তার বক্তব্য কোরআন বিরোধী হওয়ায় মাওলানা আব্দুস সালাম আপত্তি করেন। সাথে সাথে সন্ত্রাসীরা তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তিনি বলেন তারা রড লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাকে আক্রমন করলে হরিপুর মাদরাসার ২০/২৫ জন ছাত্র তাদের উস্তাদকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেন। হামলাকারীরা এলোপাতাড়ি মারধোর শুরু করে। এক পর্যায়ে হরিপুর মাদরাসার ছাত্র মৌলভী মুজম্মিল আলী ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। সন্ত্রাসীদের নারকীয় হামলায় ১৩ জন ছাত্র এবং ৩ জন সাধারণ মুসল্লি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি বলেন, মাওলানা আব্দুস সালামের অবস্থা এখনও আশংকাজনক ও মৌলভী আব্দুল কাদের এখনও অজ্ঞান। মাওলানা নজরুল বলেন, আব্দুস সালামকে আশ্রয় দেওয়ায় মাওলানা নাসির উদ্দিনের বাড়িতেও সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে।
সবশেষ মাওলানা নজরুল ইসলাম ঘটনার সঠিক বিবরণ গণমাধ্যমে তুলে ধরার আহŸান জানিয়ে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত বিচারের দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, জমিয়ত নেতা মাওলানা শফিকুল হক আমকুনি, মাওলানা মুহিবুল হক গাছবাড়ী হুজুর, মাওলানা আতাউর রহমান, ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন, মাওলানা আব্দুল মালিক চৌধুরী, মাওলানা জাহিদ উদ্দিন, মাওলানা জয়নুল আবেদীনসহ হরিপুর মাদ্রসার অন্যান্য শিক্ষক ও ছাত্রবৃন্দ।
১ নং লক্ষিপুর আমবাড়ি পশ্চিমমহল্লা জামে মসজিদের উদ্যোগে আয়োজিত এ মাহফিল কমিটির সহ সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম বলেন- ‘ঘটনার সুষ্ট তদন্ত, বিচার আমরা চাই, মাওলানা আবদুস সালামকে আমরা দাওয়াত করিনি, লিফলেটে নামও দেইনি, কিন্তু হঠাৎ করে দলবল নিয়ে উপস্থিত হন তিনি, তারপর আমন্ত্রিত একজন বক্তার বক্তব্যকেও পুঁজি করে গোটা স্বাভাবিক পরিস্থিতি অশান্ত করে দিয়ে প্রাণহানী সহ বাড়িঘর পুড়ানোর মতো জঘন্য ঘটনার জন্ম হয়। মূলত পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। বক্তারা নিজ নিজ জ্ঞান, ধ্যান অনুযায়ী বক্তব্য রাখেন যেকোন বিষয়ের উপর এ নিয়ে মত পার্থক্য থাকতে পারে, কিন্ত কোন বক্তব্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে এমন বেশামাল অবস্থা যারা সৃষ্টি করেছেন, তারা অবশ্যই সীমা লংগন করেছেন। যা ইসলাম সমর্থন করে না।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন মামলা দায়ের হয়নি। মঙ্গলবার জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।