Inqilab Logo

সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বিদেশী এনজিওগুলোর উচ্চাভিলাসিতায় ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় জনগণ ও দেশীয় এনজিও

রোহিঙ্গা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সংস্থার প্রতিনিধি সভার অভিমত

| প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

কক্সবাজার ব্যুরো: বিদেশী এনজিওগুলোর উচ্চাভিলাসিতায় দেশীয় এনজিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ত্রাণ কার্যক্রমে আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী স্থানীয়করণ করলে ইতিবাচক ফল পাওয়া যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে গ্রান্ড বারগেইন প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা উচিত বলে মত দিয়েছেন রোহিঙ্গা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সংস্থার প্রতিনিধিরা। গতকাল কক্সবাজারের এক হোটেলের সম্মেলন কক্ষে কক্সবাজার এনজিও ফোরাম আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তারা এই মন্তব্য দেন। সভায় বলা হয়, রোহিঙ্গা সঙ্কটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে স্থানীয় জনগণ। কিন্তু দেশী বিদেশী দাতা সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের সহায়তায় এগিয়ে আসলেও স্থানীয়দের ক্ষতি পোষাতে এগিয়ে আসছেনা। স্থানীয়দের চাষাবাদ, সম্পদ, পরিবেশ, কর্মপরিধি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ ব্যাপক ক্ষতিসাধন হলেও তার হিসাব করছেনা কেউ। চাহিদা সম্পন্ন স্থানীয় জনসম্পদের কর্মসংস্থান না করে স্কুল কলেজে পড়ুয়া তরুণদের চাকরি দেয়ায় শিক্ষা খাতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। স্থানীয় উন্নয়ন সহযোগীরাও উপেক্ষিত। এতে করে রোহিঙ্গাদের কারণে সামাজিক বৈষম্য মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের জন্য গঠিত ফান্ডের ৩০ শতাংশ স্থানীয়করণ করে বৈষম্য হ্রাসের কথা জানান রোহিঙ্গা সঙ্কটে গঠিত ইন্টারসেকটর কোঅর্ডিনেশন গ্রæপ (আইএসসিজি)। সভায় বক্তব্য রাখেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোঃ আবুল কালাম, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন, রোহিঙ্গা সঙ্কটে গঠিত ইন্টারসেকটর কোঅর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি) এর সিনিয়র কোঅর্ডিনেটর সুমবুল রিজভী, ইউএনএইচসিআর প্রতিনিধি সুব্রত চক্রবর্তি, কক্সবাজার এনজিও ফোরামের কো-চেয়ারম্যান কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী এবং কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি এনজিও ফোরামের কো-চেয়ারম্যান আবু মোর্শেদ চৌধুরী। এছাড়া বিবিসি মিডিয়া এ্যাকশন, অক্সফাম, সেভ দ্যা সিলড্রেন, এ্যাকশন এইড, এনআরসি, ক্রিস্টিয়ান এইড, প্লান ইন্টারন্যাশনাল, ডিআরসি, রিলিফ ইন্টারন্যাশনাল, ফাও, মার্সি মালয়েশিয়া, ওয়াটার এইড, টিয়ার ফান্ড, ইউএনএইচসিআর, এসিএফ, স্থায়ীন এনজিও এবং সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। সভায় বক্তারা দুঃখের সাথে জানায়, রোহিঙ্গাদের মাঝে কাজ করতে আসা বিদেশিদের মধ্যে দেখা গেছে, তাদের বেশিরভাগই শিক্ষানবিশ, মানবিক সাড়া প্রদান, স্থানীয় সংস্কৃতি ও সমাজ সম্পর্কে তাদের প্রায় কোন ধারণা নেই। অভিজ্ঞতাও নেই। আছে প্রবল উন্নাসিকতা। কাজের অর্জন নিশ্চিত করতে হলে সর্বসম্মত গ্রান্ড বারগেন প্রতিশ্রুতি অনুসরণ করাই সর্বাগ্রে প্রয়োজন। সভায় জানানো হয়, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিপর্যয়ে ১৪টি ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে ১২টি বিদেশি সংস্থা, ৭টি ইউএন এজেন্সি, ৪টি আন্তর্জাতিক এনজিও আর মাত্র একটি স্থানীয় এনজিও। আইএসসিজি (ইন্টার সেক্টর কোঅর্ডিনেশন গ্রæপ)-এর ২৪জন ফোকাল পারসনের মধ্যে স্থানীয় এনজিও প্রতিনিধি একজনও নেই। অথচ, স্থানীয় ইস্যু সবচেয়ে ভালোভাবে অনুধাবনের সক্ষমতা রয়েছে শুধু স্থানীয়দের। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রকল্প ব্যবস্থাপনার জন্য দাতা সংস্থা কোনো বাজেট বরাদ্দ করে না। তারা বলার চেষ্টা করে, দরিদ্র মানুষের জন্য বরাদ্দ অর্থ থেকে ব্যবস্থাপনা ব্যয় কম করাই উত্তম। কিন্তু দাতাদের ব্যবস্থাপনা ব্যয় (বেতন, গাড়ি, অফিস ভাড়া) ইত্যাদির পেছনে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়। স্থানীয় পর্যায়ে সকল সীমাবদ্ধতার মধ্যে অনেক পরিশ্রমে তৈরি করা মানব সম্পদ দাতা সংস্থারা নিয়ে যায় শুধুমাত্র অর্থের জোরে। স্থানীয় এনজিওর বেতন কাঠামোর মধ্যে তারা একটি অসমতা/ ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে থাকে। মেধাবী কর্মীদের নিয়ে গিয়ে তারা স্থানীয় পর্যায়ে শূন্যতা সৃষ্টি করে। সভায় আরো জানানো হয়, বিবেচনাহীনভাবে শিক্ষার্থীদের ভারসাম্যহীন বেতনে নিযুক্ত করে একদিকে তাদের শিক্ষার যেমন ক্ষতি করেছে, একটি শিক্ষার্থী প্রজন্ম অকেজো করে ফেলছে, তেমনি তাদের মধ্যে যে কাঠামোর বেতনের প্রত্যাশা তৈরি করেছে, পরবর্তীতে এই প্রজন্মটি স্থায়ীভাবে সঙ্কটের মুখোমুখী হবে। গ্রান্ড বারগেইনে দেয়া তাদের নিজেদের প্রতিশ্রুতি তারা রক্ষা করলে এই সঙ্কট তৈরি হতো না বলে মন্তব্য করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ