পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাসান সোহেল : গার্মেন্টস শিল্পের পর দেশের ওষুধ শিল্পে বিপ্লব ঘটে গেছে। দেশের চাহিদার ৯৮ ভাগ মিটিয়ে বিদেশে রফতানী হচ্ছে বাংলাদেশের ৫৪টি প্রতিষ্ঠানের তৈরি ওষুধ। আমেরিকা, ইউরোপসহ বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে বাংলাদেশের ওষুধের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে ওষুধ রফতানি বেড়েই চলেছে। গত এক বছরে ওষুধ রফতানি ৪২শতাংশ বেড়েছে। ওষুধ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের ওষুধ আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখছে। পাশাপাশি এ দেশের ওষুধের দামও তুলনামূলক কম হওয়ায় অনেক দেশই তা সরবরাহ নিতে আগ্রহী হয়ে ওঠছে। ফলে প্রতি বছরই বাড়ছে রফতানির পরিমাণ ও দেশের সংখ্যা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের অনেক কোম্পানিই এখন আন্তর্জাতিক মানের ওষুধ তৈরি করছে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর সার্টিফিকেশন সনদও পেয়েছে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। এ কারণে ওই সব দেশসহ অন্যান্য দেশে ওষুধ রফতানি পর্যায়ক্রমে বাড়ছে। তাদের মতে, বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ওষুধের মেধাস্বত্বে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডবিøউটিও) ছাড়ের সুযোগ রয়েছে। এটাকে কাজে লাগাতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকেও ওষুধশিল্প বিকাশে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। তারা জানান, বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা আর বিশ্ববাজারের সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে ওষুধ রপ্তানিতে এশিয়ার শীর্ষে উঠে আসবে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে চলতি অর্থবছরের (২০১৭-১৮) বাজেটে সম্ভাবনাময় ওষুধ খাতকে বিকশিত করেত এই শিল্পে ব্যবহৃত ক্যান্সারসহ গুরুত্বপূর্ণ ওষুধের কাঁচামালে শুল্ক রেয়াত সুবিধা দেয়া হয়েছে। যা ওষুধ শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বিগত ২০১৪ সালে বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের ইউরোপ আমেকিরকাসহ বিশ্বের প্রায় ৯২টি দেশে মোট ৭৩৩ কোটি ২৭ লাখ টাকার ওষুধ রফতানি করে। ২০১৫ সালে ১২০টি দেশে মোট ৮১২ কোটি ৫১ লাখ টাকা এবং ২০১৬ সালে মোট ১৪৫টি দেশে ২ হাজার ২৪৭ কোটি লাখ টাকার ওষুধ রপ্তানি করে। আর সদ্য বিদায়ী বছরের জানুয়ারী থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১৪৫টি দেশে ৩ হাজার ১৯৬ কোটি ৩২ লাখ টাকার ওষুধ রপ্তানি করেছে। রফতানির র্শীষে বরাবরারের মতো এবারও বেক্সিমকো ফার্মা রয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ইনসেপ্টা ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের জুলাই পর্যন্ত ওষুধ রফতানি হয়েছে ৮৩৬ কোটি ৮২ লাখ টাকার। এর মধ্যে বেক্সিমকো ফার্মা ওষুধ রফতানি করেছে ১৫৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকার। ইনসেপ্টা ফার্মা ৮৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা ও স্কয়ার ফার্মা ৭৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। জানা গেছে, বাংলাদেশের তৈরি ওষুধ এশিয়া মহাদেশের ৪১টি দেশে, দক্ষিণ আমেরিকার ২৩টি দেশে, আফ্রিকা মহাদেশের ৩৭টি, উত্তর আমেরিকার ৪টি দেশে, ইউরোপের ৩২টি ও অস্ট্রেলিয়ার ৫টি দেশে নিয়মিত রফতানি হচ্ছে।
ওষুধ রফতানির তালিকায় রয়েছে বেক্সিমকো, স্কয়ার, ইনসেপ্টা, দ্যা একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, এরিষ্টো ফার্মা লিমিটেড, রেনেটা লিমিটেড, এসকেএফ ফার্মা বাংলাদেশ লিমিটেড, এসিআই লিমিটেড, পপুলার ফার্মা, পপুলার ইনফিউসন, বায়ো ফার্মা, অপসোনিন, গেøাব ফার্মা, বীকন ফার্মা, ড্রাগস ইন্টারন্যাশনাল, হেলথকেয়ার ফার্মা, ওরিয়ন ফার্মা, জেসন, নাভানা, জেনারেল, ডেলটা, গøাস্কো, ইবনেসিরা, রেডিয়ান্ট, নভো হেলথকেয়ার ফার্মা, নিপ্রো জেএমআই, ইডিসিএল লিমিটেড, অ্যামিকো ল্যাবরেটরিজ, গেøাব ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, টেকনো ড্রাগস লিমিটেড, জিসকা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, র্যাডিয়েন্ট ফার্মা ও অ্যাকটিভ ফাইন কেমিকেল লিমিটেডসহ আরও কয়েকটি কোম্পানী।
সাম্প্রতিক সময়ে বে´িকো ফার্মা ও স্কয়ার ফার্মা বিশ্বের শক্তিশালী সংস্থা হিসেবে পরিচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিষ্ট্রেশন (এফডিএ) অনুমোদন পেয়েছে। ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস এফডিএ-এর অনুমোদনের প্রতিক্ষায় রয়েছে। বাংলাদেশ ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ওষুধ কাঁচামাল আমদানিকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মেধাস্বত্ব সুযোগ পেয়েছে। এছাড়া ওষুধ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঁচামাল উৎপাদনে স্বক্ষমতা অর্জনের জন্য সরকার ইতোমধ্যে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় এলাকায় ২০০ একর জমির উপর অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যালস ইনগ্রিডিয়েন্স (এপিআই) পার্ক নির্মাণ করেছে। প্লট হস্তান্তর করা হয়েছে। চলতি বছর কাঁচামাল উৎপাদনে যাওয়ার প্রস্ততি চলছে। শতভাগ কাঁচামাল দেশে উৎপাদিত হলে ওষুধের মূল্য যেমন কমে আসবে, পাশাপাশি ওষুধ ও কাঁচামাল রফতানির পরিমাণও বাড়বে।
জানা গেছে, বাংলাদেশের তৈরি ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, ইনজেকশন ও ইনহেলারসহ বিভিন্ন ধরণের ওষুধ রফতানি হচ্ছে। তবে বিদেশে ওষুধগুলো জেনেরিক নামে ব্যবহার হচ্ছে। তবে জেনেরিক নামের পাশাপাশি ব্যান্ডেড নামও থাকছে। তবে ক্যান্সার, মস্তিস্ক জনিত সমস্যা, হƒদরোগ, ডায়বেটিস ও ভ্যাকসিনসহ বিভিন্ন দূরারোগ্য ব্যধির ওষুধ আমদানি করতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশের কয়েকটি কোম্পানী ভ্যাকসিন ও ক্যান্সারের ওষুধ তৈরিতে এগিয়ে এসেছে। তবে এখনো শতকরা ৯৮ ভাগ মেডিকেল ডিভাইস আমদানি করে চাহিদা পূরণ করতে হচ্ছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ওষুধ প্রশাসনকে ঢেলে সাজাতে ইতোমধ্যে চতুর্থ অপারেশনাল প্লান বাস্তবায়নের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। দেশের কারখানাগুলোতে যাতে ডাবিøউএইচও’র গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্যাকটিজ (জিএমপি) অনুসরণ করে ওষুধ উৎপাদন করতে পারে সেজন্য ওষুধ প্রশাসনের কর্মকর্তাদেরর বিদেশে প্রশিক্ষনের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা হচ্ছে। মেডিকেল ডিভাইসগুলোতে সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনতে ইতোমধ্যে একটি গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে। গাইডলাইন অনুযায়ী প্রতিটি মেডিকেল ডিভাইসের রেজিষ্ট্রেশন কার্যক্রম চলছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ওষুধ শিল্পে দ্রæত অগ্রসর হওয়ার পেছনে ১৯৮২ সালের ওষুধ নীতি বড় ভ‚মিকা পালন করেছে। এছাড়া সরকার ওষুধ শিল্পের উপর নানা ধরণের সুবিধা প্রদানের কারণে এটি বিশ্বের কাছে পরিচিতি লাভ করতে শুরু করেছে। বাংলাদেশে রয়েছে অসংখ্যা গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট। যাদের বিরাট একটা অংশ ওষুধ শিল্পে কর্মরত রয়েছেন। বিশ্বের অনেক দেশেই গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নেই। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফার্মেসীগুলোতে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট কর্মরত থাকলেও বাংলাদেশে তা নেই। স্বল্প বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি না হওয়ায় ফার্মেসীতে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টরা আসছেন না।
ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব এসএম সফিউজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের ওষুধ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিন দিন রফতানির পরিমাণ বেড়েই চলেছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে কয়েকটি কোম্পানীর সঙ্গে ওষুধ তৈরি করছে। ভবিষ্যতে ওষুধ শিল্প রফতানীর র্শীষে থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
ওষুধ প্রশাসন জানায়, স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশে ওষুধ প্রাপ্তি আমদানির ওপর নির্ভরশীল ছিল। মানুষ তখন অনেক উচ্চ মূল্যে ওষুধ ক্রয় করতেন। বর্তমানে দেশের চাহিদার প্রায় ৯৮ শতাংশ স্থানীয় উৎপাদনের মাধ্যমে মিটাতে সক্ষম। বর্তমানে কিছু হাইটেক প্রোডাক্ট (ব্লাড প্রোডাক্ট, বায়োসিমিলার প্রোডাক্ট, অ্যান্টিক্যান্সার ড্রাগ, ভ্যাকসিন ইত্যাদি) আমদানি করা হয়। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ওষুধ আমদানিকারী দেশ হতে রপ্তানিকারী দেশে পরিণত হয়েছে। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ওষুধ তত্তাবধায়ক সৈকত কুমার কর ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমানে আমেরিকায় বেক্্িরমকো ফার্মার প্রেসারের কার্বিটিলল ও হৃদরোগের সোটালল ওষুধ রফতানি হচ্ছে। এটার মান ভালো হলে আরও ওষুধ নিবে তারা। কারণ এই ওষুধের মানের উপরও আরও ১০টি ওষুধের রফতানির বাজার খুলে যেতে পারে। দেশও বড় অঙ্কের রেমিট্যান্স পাবে। আর সে দিকটায়ই পৃথকভাবে নজড় দিচ্ছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।