পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাসান সোহেল : দেশীয় চাহিদার ৯৮ ভাগ ওষুধই এখন উৎপাদন হচ্ছে দেশে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারেও ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে। বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানি খাতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ওষুধ রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ কোটি ডলার। ইতোমধ্যে জুলাই-মে এই ১১ মাসে ওষুধ রপ্তানি খাতে আয় হয়েছে ৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ইতোমধ্যে যা গত অর্থ-বছরের ৭৩৭ কোটিকে ছাড়িয়েছে। আশা করা হচ্ছে, চলতি অর্থ-বছরের শেষ নাগাদ ওষুধ রপ্তানি আয় ৮ কোটি ২০ লাখ ডলার ছাড়িয়ে যাবে। গত ২০১৪-১৫ অর্থ-বছরের প্রথম ১১ মাসে ওষুধ রপ্তানিতে আয় হয়েছিল ৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার। চলতি অর্থ-বছরের প্রথম ১১ মাসে ওষুধ রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ কোটি ২০ লাখ ডলার। কিন্তু রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ লাখ ডলার বেশি হয়েছে। বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। এদিকে ওষুধ শিল্প সমিতি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অধীনে থাকা ৪৩টি ওষুধের কাঁচামালের সহজপ্রাপ্ততা হলে রফতানির পরিমাণ আগামী চার বছরে ১০ গুণ বাড়বে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের অনেক কোম্পানিই এখন আন্তর্জাতিক মানের ওষুধ তৈরি করছে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর সার্টিফিকেশন সনদও পেয়েছে বেশ কিছু কোম্পানি। এ কারণে ওইসব দেশসহ অন্যান্য দেশে ওষুধ রফতানি পর্যায়ক্রমে বাড়ছে। তাদের মতে, বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ওষুধের মেধাস্বত্বে বিশ্ব-বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ছাড়ের সুযোগ রয়েছে। এটাকে কাজে লাগাতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকেও ওষুধশিল্প বিকাশে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। তারা জানান, বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা আর বিশ্ববাজারের সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে ওষুধ রপ্তানিতে এশিয়ার শীর্ষে উঠে আসবে বাংলাদেশ।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ২০২১ সাল নাগাদ ওষুধ রপ্তানি থেকে বাংলাদেশের আয় প্রায় একশ গুণ বেড়ে ৬০০ কোটি ডলারে উন্নীত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। মন্ত্রী বলেছেন, সরকার সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বাজার ও পণ্য বহুমুখীকরণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। সে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ওষুধ রপ্তানি বাড়াতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। ইতিমধ্যেই আমাদের কয়েক ওষুধ কোম্পানি আমেরিকায় ওষুধ রপ্তানির অনুমোদন পেয়েছে। এই সুযোগকে ‘দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য খুব ইতিবাচক’ উল্লেখ করে তোফায়েল বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে দেশের রপ্তানির পরিমাণ ৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে প্রত্যাশা করছি।
প্রতি বছরই রফতানির ও দেশের সংখ্যা বাড়ছে। দেশে উৎপাদিত ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের ১১৭টি দেশে। সম্প্রতি বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেড মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েতের সাথে নতুন করে ওষুধ রফতানির উদ্যোগ নিয়েছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) পৃথিবীর ৮৭টি দেশে ৪২১ কোটি ২২ লাখ টাকার ওষুধ রফতানি করা হয়। পরের বছর একইসংখ্যক দেশে রফতানির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা। অর্থাৎ রফতানির পরিমাণ বাড়ে ১১৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ২০১৩ সালেও দেশে ৬০৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বা রফতানি বাড়ে ৬৪ কোটি ৫ লাখ টাকা, ২০১৪ সালে ৯৫টি ৭১৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এক বছরেই বেড়েছে ১১০ কোটি ৩১ লাখ টাকা। ২০১৫ সালে ১০২টি দেশে ৭৩৭ কোটি ৯ লাখ টাকা। আগের চেয়ে বেড়েছে ২৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। আর চলতি অর্থবছরে ১১৭টি দেশে লক্ষ্যমাত্রা ৮ কোটি ডলার ধরা হলেও এটা ৮ কোটি ২০ লাখ ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করে যাচ্ছে। অর্থাৎ বিগত ৬ বছরের ব্যবধানে রফতানির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত অর্থ-বছরে দেশীয় ৪৬টি ওষুধ কোম্পানি ওষুধ রফতানি করে এই বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছে। রফতানিতে শীর্ষ পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে যথাক্রমে বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেড, নোভারটিস (বিডি) লিমিটেড, টেকনো ড্রাগস লিমিটেড, ইনসেপ্টা ফার্মা লিমিটেড, স্কয়ার ফার্মা লিমিটেড, দ্য একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, এরিস্টো ফার্মা লিমিটেড, রেনেটা লিমিটেড, এসকেএফ ফার্মা বাংলাদেশ লিমিটেড, এসিআই লিমিটেড, পপুলার ফার্মা, পপুলার ইনফিউসন, বায়ো ফার্মা, অপসোনিন, গ্লোব ফার্মা, বীকন ফার্মা, ড্রাগস ইন্টারন্যাশনাল, হেলথকেয়ার ফার্মা, ওরিয়ন ফার্মা, জেসন, নাভানা, জেনারেল, ডেলটা, গ্লাস্কো, ইবনেসিনা, রেডিয়ান্ট, নভো হেলথকেয়ার ফার্মাসহ আরও কয়েকটি কোম্পানি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ওষুধ রপ্তানি বাড়াতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। ইতিমধ্যেই দেশের কয়েকটি ওষুধ কোম্পানি আমেরিকার বাজারে ওষুধ রপ্তানির অনুমোদন পেয়েছে। ফলে উন্নত বিশ্বে বাংলাদেশের তৈরি ওষুধ রপ্তানির দরজা খুলছে।
ওষুধ শিল্প সমিতির তথ্য মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপান, ফ্রান্স, সুইডেন, ইতালি, কানাডা, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, তুরস্ক, সৌদি আরব, ইরান, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, শ্রীলংকা, আফগানিস্তান, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, মিসর, মরক্কো, আলজেরিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে।
জানা গেছে, স্বাধীনতার পর ৭০ ভাগ ওষুধই আমদানি করা হতো। এখন উন্নত প্রযুক্তির সব কারখানায় ওষুধ উৎপাদিত হচ্ছে। ফলে উৎপাদন অনেকগুণ বেড়েছে। দেশীয় চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রফতানি হচ্ছে। প্রযুক্তিগত উৎকর্র্ষ এবং দক্ষ ফার্মাসিস্টদের সহায়তায় বর্তমানে ক্যান্সারের মতো জটিল ও মারাত্মক রোগের ওষুধও দেশেই উৎপাদন হচ্ছে।
বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ওষুধের মেধাস্বত্বে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ছাড়ের প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, এ সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। সরকার দেশের ওষুধশিল্প বিকাশে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। ওষুধ রপ্তানিতে নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে।
বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প বিশ্ববাসীর নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে দাবি করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় যেসব পণ্য রপ্তানিতে অধিক গুরুত্ব দিয়েছে, ওষুধ তার মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ১১৭টি দেশে ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে।
হেলথ কেয়ার বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হালিমুজ্জামান বলেন, নারটোটিকস আইটেম ওষুধ তৈরি করতে হলে কাঁচামাল আমদানির জন্য প্রথমে সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে আবেদন করা হয়। এরপর সেখান থেকে মেট্রো অঞ্চল, এরপর উপ-অঞ্চল এরপর অঞ্চল হয়ে জেলা ও উপজেলায় পাঠানো হয়। কাজ শেষে ধাপে ধাপে আবার ফাইল ওপরে আসে। আবার কাজ শেষে ধাপে ধাপে নিচে নামে। এভাবে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়। এটা না হলে ওষুধ উৎপাদন ও রপ্তানি আরও সহজতর হতো।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিচালক নাজমুল আহসান মজুমদার বলেন, কাঁচামাল আমদানির অনুমোদনের জন্য দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে আনতে অধিদফতর থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
ওষুধ শিল্প সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অধীনে থাকা ওষুধের কাঁচামাল দ্রুত সময়ে অনুমোদন পাওয়া গেলে আগামী চার বছরে ১০ গুণ ওষুধ রফতানি বেড়ে যাবে বলে সমিতির নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন।
ওষুধ রপ্তানির এ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবুল কালাম লুৎফুল কবির বলেন, এখন দেশের ১৬ কোটি মানুষের ওষুধের চাহিদার প্রায় ৯৮ ভাগ দেশেই উৎপাদন করা হচ্ছে। বর্তমান সরকারও দেশের ওষুধশিল্প বিকাশে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে। তবে এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের আরো উদ্যোগী হতে হবে।
ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব এস এম শফিউজ্জামান বলেন, ওষুধ শিল্প একটি টেকনিক্যাল শিল্প। এটার রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে প্রমোশন পর্যন্ত সকল পর্যায়ে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। তিনি বলেন, গত অর্থ-বছরের তুলনায় চলতি বছরে রফতানি আয় আরো বাড়বে। তবে এক্ষেত্রে রপ্তানি প্রক্রিয়া আরও সহজীকরণ করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। এস এম শফিউজ্জামান বলেন, রফতানি আয় বাড়াতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। বর্তমানে ওষুধ রপ্তানিতে এশিয়ায় আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত। তারা নানা ধরনের এক্সপোর্ট বেনিফিট পেয়ে থাকে। আমাদের এ ধরনের সুবিধা দিলে ভারতকে ছাড়িয়ে যেতে সময় লাগবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।