পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মুরশাদ সুবহানী, (জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এসে) : নামেই ফারাক্কা চুক্তি। চুক্তি অনুযায়ী পানি দিচ্ছে না ভারত। দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী পানির ন্যার্য্য হিস্যার জন্য চাপও দেয়া হচ্ছে না। প্রতিবেশি দেশটির ‘পানি রাজনীতির’ কাছে ভাটির অসহায় বাংলাদেশের নদীগুলো মরতে বসেছে। পদ্মা, যমুনা, তিস্তা, আত্রাই, চিকনাই, মরাপদ্মাসহ প্রায় উত্তরাঞ্চলের ৩৪টি নদ-নদীর মরণদশা। নাব্যতা না থাকায় ইতোমধ্যেই নদীগুলোতে নৌ চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। মাল বোঝাই ১৩০টি কার্গো-জাহাজ যমুনা নদীর নোঙর করে বসে আছে।
নদীগুলোতে যে টুকু পানির প্রবাহ আছে তাও চৈত্রের শেষার্ধে নি:শেষ হয়ে যাবে। পাবনার ফরিদপুর ,ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ৬টি নদীতে পানি নেই। গুমনী নদীর দিকে তাকালে মনে হবে এখানে কোন দিন নদী ছিল না। এই গুমনী নদী পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত পদ্মার শাখা নদী আত্রাই নদীর শাখা। এই নদী ভাঙ্গুড়া উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বড়াল নদীতে মিশেছে। গুমনী নদী বড়ালে গিয়ে উপনদীতে পরিনত হয়েছে। উপনদী গুমনী আত্রাই নদীর পানি বুকে ধারণ করে বড়াল নদীকে দেয়। গুমনী শুকিয়ে যাওয়ায় বড়াল নদী পানি পাচ্ছে না। ফারাক্কা এবং তিস্তার কারণে উত্তর ও দক্ষিণের জেলাসমূহে প্রায় ৩৪টি নদী পানি শূণ্য হয়ে পড়েছে। এ সময় অগভীর নলকূপ দিয়ে সেচ কার্য ব্যহত হয়ে পড়বে। গঙ্গার ৩০ বছরের মেয়াদি পানি চুক্তির ২২ বছর পড়েছে। চলতি বছর জানুয়ারী থেকে ফেব্রæয়ারি মাসে ৮ সাইকেলে শুষ্ক মওসুমে ফারাক্কা ব্যারেজ দিয়ে বাস্তবে চুক্তি মাফিক পানির প্রবাহ আসেনি। নদী পাড়ের মানুষ খোলা চোখে পানি প্রবাহ দেখছেন না। পদ্মা নদীতে পানির প্রবাহ না থাকায় এর মূল শাখা নদী গড়াই, আত্রাই এবং এই সকল নদীর অন্যান্য শাখা নদীতেও পানির প্রবাহ কমে গেছে। তিস্তা নদীর পানি বন্টন চুক্তি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। কবে হবে সেটি অনিশ্চিত ; হলেও গঙ্গার পানি চুক্তির মত একই অবস্থার সৃষ্টি করবে কিনা ভারত তা আগাম বলা মুষ্কিল।বর্তমানে তিস্তা নদীতে পানি না থাকায় ব্রক্ষপুত্র নদে পানির প্রবাহ কমে গেছে। ফলে যমুনা নদীও শুকিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় অসংখ্য চর জেগে উঠেছে। যমুনা নদীতে চর পড়ে নৌ-চলাচল ব্যহত হয়ে পড়েছে। উত্তারাঞ্চলের বাঘাবাড়ী নৌ-বন্দরে ভিড়তে পারছে না কার্গো-জাহাজ। রাসায়নিক সার, সিমেন্টর কিলিংকার, কয়লা বোঝাই ১৩০টি কার্গো-জাহাজ যমুনা নদীর ব্যাটারীর চর, মোল্লার চর, কৈটলা, মোহনগঞ্জ, চর পেঁচাকোলা এবং আরিচা কাছে নোঙর করে বসে আছে। ফাল্গুন মাসে দুপুরে চৈত্রের মত গরম পড়ছে। মধ্য রাতের পর সামান্য ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। যা মরু অঞ্চলের আবহাওয়ার মত। নদ-নদীর পানি সল্পতার কারণে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমশ: নিচে নেমে যাচ্ছে। অনেক স্থানে হস্তচালিত নলকূপে পানি উঠছে না। চৈত্র-বৈশাখ মাসে এই পরিস্থিতি আরো ভয়াবহরূপ নেবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। দেশের নদ-নদী বাঁচাতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ১২ ডিসেম্বর ভারতের সাথে ৩০ সালা মেয়াদি গঙ্গা নদীর পানি চুক্তি করেন।চুক্তি মাফিক জানুয়ারী মাসে ফারাক্কা ব্যারেজে প্রবাহমান পানির অর্ধেক ভাটিতে পদ্মা নদীতে আসবে। বাস্তবে তা আসে না। এপ্রিল-মে মাসকে চুক্তির শর্তে পিক শুষ্ক মওসুম ধরে ভারতের ফারাক্কা পয়েন্টে পানি প্রবাহ যাই থাক তা কোনভাবেই বাংলাদেশের পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে ৩৪ হাজার কিউসেকের নিচে নামবে না।এটিও কোন বারই বাস্তবায়িত হয়নি। জানুয়ারী- ফেব্রুয়ারী চুক্তি অনুসারে পদ্মা নদীতে পানি পাওয়া যায়নি। নদীকূলের মানুষ খোলা চোখে নদীতে তেমন পানির প্রবাহ দেখছেন না। ফারাক্কার ব্যারেজ হয়ে গঙ্গা নদীর পানি এবং অপরদিকে তিস্তা নদীর পানি না আসায় ৩৪টি নদী শুকিয়ে উঠছে। যমুনা নদীতে পানির টান পড়েছে। হুরাসাগর, বড়াল, গুমনী নদী, পাবনা শহরের নিকট দিয়ে প্রবাহিত মরা পদ্মায় পানির টান পড়েছে। শহরের মধ্য দিয়ে বহমান ইছামতি নদী শুকিয়ে গেছে বহু বছর আগেই। পদ্মা নদীতে পানি সল্পতার কারনে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে মরুকরণ অবস্থা স্থায়ী রুপ নিচ্ছে। জীব-বৈচিত্র্য হুমকীর মুখে পতিত হয়েছে। পদ্মা এবং এর শাখা নদী সমূহে পানি না কমে যাওয়ার কারণে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। মাছের বেশীর ভাগ চাহিদা পূরণ হচ্ছে পুকুরে চাষ করা হাইব্রিড মাছ দিয়ে। নদী, জলাশয়, বিলের মুক্ত মাছের স্বাদ আর পাওয়া যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক নদী পদ্মা(গঙ্গা) উজানে ভারত ফারাক্কা ব্যারেজ দিয়ে ভাগিরথী নদীর মাধ্যমে পানি প্রবাহ ঘুরিয়ে নেওয়ায় ভাটির দেশ বাংলাদেশ ক্রমেই তীব্র পানি সংকটে নিপতিত হয়। কালক্রমে প্রমত্তা পদ্মা নদীর প্রধান শাখা নদী গড়াই, আত্রাইসহ বহু সংখ্যক নদ-নদীতে পানির টান পড়তে শুরু করে। এর সুদুর প্রসারী প্রতিক্রিয়ায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যায়। পাবনা হাইড্রোলজি (বর্তমান নাম ভূ-পরিস্থ পানি জরিপ দপ্তর যা পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন) পাবনার অফিস চুক্তির পর থেকে পানি প্রবাহের কোন তথ্য সাংবাদিকদের প্রদান করেন না। জিজ্ঞেস করলে বলা হয় যৌথ নদী কমিশন দিতে পারবে। দু’একজন ব্যক্তি সামান্য তথ্য দিলেও নাম প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন। সূত্র মতে, চুক্তির পর থেকে প্রতিবারের ন্যায় এবারও শুষ্ক মওসুমের শুরুতে জানুয়ারী মাসে ভারত থেকে একটি প্রতিনিধি দল হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে এসেছেন। জানুয়ারী থেকে মে মাস পর্যন্ত তারা ১০ দিন পর পর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে নদীর বিভিন্ন স্থানে পানির প্রবাহ ও গভীরত্ব মাপজোক করেন। এই তথ্য তারা প্রকাশ্যে প্রেস ব্রিফিং করে সাংবাদিকদের অবহিত করেন না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি না হওয়ায় ইতোপূর্বে খুব দৃঢ়তার সাথে বলছেন, ‘আমরা ভাটির দেশ কতদিন পানি দেবে না। তিনি বর্ষা মওসুমে পানি ধরে রাখার জন্য নদ-নদী ড্রেজিং উপর গুরুত্বারোপ করেন।’ অত্যন্ত বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত। যদিও নদ-নদী ড্রেজিং সেই ভাবে এখনও শুরু হয়নি। নদ-নদী থেকে উত্তোলিত বালু ও মাটি কোথায় নেওয়া হবে এই রকম নীচু এলাকা নির্ধারণ করে খুব দ্রুত নদ-নদী ড্রেজিং এর কাজ শুরু করা প্রয়োজন বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।