Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খুঁটি আছে ডাস্টবিন নেই

ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনের ময়লা ফেলার মিনি ডাস্টবিন প্রকল্প

| প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার :  রাজধানীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতির জন্যে শহরের মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছিল মিনি ডাস্টবিন। দুই সিটি কর্পোরেশনের এলাকায় ডাস্টবিন বসানো প্রকল্পে খরচ হয়েছিল প্রায় ৬ কোটি টাকা। পুরো প্রকল্পই এখন প্রায় ভেস্তে যাচ্ছে জনগণের সচেতনতার অভাব ও দুই সিটি কর্পোরেশনের তদারকি অবহেলার কারণে। কর্তব্যরতদের অবহেলার কারণে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ডাস্টবিন প্রকল্পকে প্রায় মৃত বলা চলে। একই অবস্থা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ডাস্টবিন প্রকল্পের বেলায়ও। দুই সিটি কর্পোরেশনের কর্মকরতারা ডাস্টবিন লাগানো পর্যন্তই কাজ করেছেন। ডাস্টবিনগুলোর সঠিক ব্যবহার ও পরবর্তী রক্ষণাবেক্ষণে তাদের কোনো মনোযোগই ছিল না। ফলে দুই সিটি কর্পোরেশনকে এখন ৬ কোটি টাকার লোকসান গুণতে হচ্ছে।
এর ফলে দুই সিটি কর্পোরেশনের এলাকায় লাগানো অধিকাংশ ডাস্টবিনের খুঁটিগুলো রয়ে গেলেও বিন নেই। আবার যেটির খুঁটি ও বিন দুই-ই আছে সেটিও ব্যবহারযোগ্য নয়। ডাস্টবিন প্রকল্প রাজধানীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে কোনো ভূমিকাই রাখতে পারেনি। এটিকে শুধুমাত্র সিটি কর্পোরেশনের টাকা অপচয় ছাড়া আর অন্য কিছু বলার জো নেই।
২০১৬ সালে বনানী থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত রাস্তার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় প্রায় ১৫০ মিটার দূরত্বে মিনি ডাস্টবিন বসিয়েছিল ডিএনসিসি। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, অধিকাংশ ডাস্টবিনের খুঁটি ছাড়া বিনের কোনো অস্তিত্ব নেই। আবার কিছু জায়গায় গোড়া থেকে ডাস্টবিন উধাও। গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীর শাহবাগ, আজিমপুর, ধানমন্ডি, ফার্মগেট, বনানী এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। অন্যদিকে কিছু কিছু এলাকায় ডাস্টবিনের অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। আবার কোথায় কোথায় দেখা গেছে, অনেক আবাসিক এলাকায় ডাস্টবিন হাতের নাগালে থাকা সত্তে¡ও এর ব্যবহার না করে রাস্তায় ময়লা ফেলা হচ্ছে। এক শ্রেণির অস্বাদু চক্র ডাস্টবিনগুলোকে নষ্ট করে কিছুদিন পরে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে।
নগর পরিকল্পনবদিদের মতে, নাগরিকদের ডাস্টবিন ব্যবহারে সচেতন করার বিষয়টি নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে তেমন কোন উদ্যোগ ছিল না। ফলে সবার চোখের সামনে এই ডাস্টবিন প্রকল্পটি ব্যর্থ হয়ে গেছে।
রাজধানীর ইন্দিরা রোডের বাসিন্দা নুভা বলেন, প্রথম যখন ডাস্টবিনগুলো লাগানো হয়েছে তখন নিয়মিত ব্যবহার করতাম। কিন্তু পরে দেখি ডাস্টবিনের ময়লা প্রতিদিন সরানো হয় না এবং এর আশপাশে ময়লার স্তুূপ হয়ে থাকে। এরপর থেকে আর ব্যবহার করিনি। রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ নূর হোসেন বলেন, রাস্তায় শুধু তো খুঁটি দেখি, বিন তো নাই। তাহলে ময়লা আবর্জনা ফেলব কোথায়। প্রশাসনের লোকদের চোখের সামনে টোকাইরা বিনগুলো চুরি করে নিয়ে গেছে, কেউ কিছু বলে নাই। আসলে লোক দেখানো কাজ করে সমস্যার সমাধান হবে না। এদিকে ডাস্টবিন প্রকল্প ব্যর্থতা ঘুচতে না ঘুচতে উত্তর সিটি কর্পোরেশনে শুরু হয়ে গেছে নতুন ডাস্টবিন প্রকল্পের কাজ। আবার নতুন করে বসানো হবে নতুন ডিজাইনের ডাস্টবিন। এর জন্য নাকি নগরবাসীর কাছ থেকে ডিজাইন ও পরামর্শও চাওয়া হবে বলে ডিএনসিসি’র সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে জানা গেছে।
এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের এই ডাস্টবিনগুলো তেমন একটা সাড়া ফেলতে পারেনি সবার মধ্যে। তাই আমরা এখন ব্যবহার উপযোগী ও ঢাকার মানুষের কথা মাথায় রেখে নতুন ডিজাইনের ডাস্টবিন বসানোর পরিকল্পনা করছি। এজন্য নগরবাসীর কাছ থেকেও মতামত নেব। তিনি বলেন, ডিজাইন পেলে পুরাতন ডাস্টবিনগুলো সরিয়ে নতুন ডাস্টবিন বসানো হবে। আর এই কাজ চলতি বছরেই আমরা শেষ করব বলে আশা করি।  অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই সিটিতে ১০ হাজার ডাস্টবিন বসানো হয়ছিল। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে প্রায় ছয় হাজার ডাস্টবিন। তাদের দেওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ডিএসসিসি এলাকায় ২২০টি বিন চুরি হয়েছে। ৭০০টি বিন নষ্ট বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় এক হাজার ডাস্টবিন ব্যবহার হচ্ছে না। বাকিগুলো ঠিকঠাক চলছে।
তবে বাস্তবে এই চিত্র দেখা গেছে উল্টো। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকার অধিকাংশ ডাস্টবিনই উধাও। খুঁটি থাকলেও বিন নেই, বিন থাকলে ব্যবহার অনুপযোগী আবার অনেক জায়গায় দেখা গেছে কিছুই নেই।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তদারকি ও মানুষের সচেতনতার অভাবে এমনটা হয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থার উন্নতির জন্য বসানো হলেও তা কাজে আসেনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রকল্প


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ