Inqilab Logo

সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

নওগাঁর পুনর্ভবা যৌবন হারিয়ে এখন শুধুই স্মৃতি

| প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা : নওগাঁর সাপাহার উপজেলার সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত এক সময়ের খরস্্েরাতা নদী পুনর্ভবা এখন শুধুই স্মৃতি। গ্রামের গৃহবধূদের গোবরের ঘুঁটে শুকানোর প্রান্তরের রূপ ধারন করেছে। চৈত্র মাস আসতে এখনও অনেক সময় বাকি থাকতেই এরই মধ্যে এক কালের খরস্্েরাতা পুনর্ভবা নদীর পানি শুকিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে।
জানা গেছে, নদীটি ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদহ জেলার মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বামন গোলা ও তপন থানার বটতলী এবং ল²ী নারায়ন গ্রামের কোল ঘেঁষে বাংলাদেশের সাপাহার উপজেলার পাতাড়ী, হাঁড়িপাল, আদাতলা, কলমুডাঙ্গা ও পোরশা উপজেলার দুয়ারপাল, নিতপুরের কোল ঘেঁষে গোমস্তাপুর হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মহানন্দা নদীতে মিলিত হয়েছে।
স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, এককালে বার মাসই বহমান ছিল এই পুনর্ভবা নদী। বৃটিশ ও পাক- শাসনামলে এলাকার সকল রাস্তাঘাটগুলি অবহেলিত অবস্থায় থাকায় সে সময়ে এই নদীই ছিল বিভিন্ন শহরের সাথে যোগাযোগের একমাত্র পথ। নদীর বুক চিরে ছোট বড় হরেক রকমের পালতোলা নৌকা দিয়ে মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে একস্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করে থাকত এমন কি নদীতে বিবাহের বর যাত্রীদের নৌকার বহরও চোখে পড়ত। সেই সময় এই নদীতে চলত মাল বোঝাই ছোট বড় নৌকা, লঞ্চ ও স্টিমার।
নৌকায় করে মানুষ তাদের উৎপাদিত ফসল ধান, গমসহ বিভিন্ন পণ্য বহন করত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রহনপুর হাটে। অনেকেই বিভিন্ন কাজে এই পথে নৌকা যোগে রহনপুরে গিয়ে ট্রেনযোগে রাজশাহী, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে গিয়ে থাকত। সে সময় পাতাড়ীর কাবলীর ঘাটসহ বিভিন্ন ঘাটে ঘাটে নৌকা জমতো। অতিতে এলাকায় কোন গভীর, অগভীর নলকুপ না থাকায় ঠাঁ ঠাঁ বরেন্দ্র এলাকায় এই নদীর পানি সেচ কাজে ব্যবহার করে এলাকার মানুষ শত শত একর জমিতে বিভিন্ন জাতের ফসল উৎপাদন করত। বর্তমানে দেশের শহর বন্দরসহ গ্রামাঞ্চলের প্রায় সর্বত্রই উন্নয়নের ছোঁয়াসহ নদীর উজানে ভারতীয় অংশে ভারত সরকারের বাঁধ নির্মাণের ফলে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হওয়ায় কালের আবর্তনে হারিয়ে গেছে নদীর শাসন ব্যবস্থা সেই সঙ্গে নদীও হারিয়ে ফেলেছে তার ঐতিহ্য। এখন অতি সহজে মানুষ বাস, ট্রাক যোগে স্বল্প সময়ে পৌঁছে যাচ্ছে তাদের গন্তব্যে। সহজেই তারা তাদের বিভিন্ন মালামাল পরিবহন করতে পারছে। এখন নদীপথের প্রয়োজন অনেকটাই ফুরিয়ে যাওয়ার ফলে সীমান্ত এলাকার এই পুনর্ভবা নদীটি হারিয়ে ফেলেছে তার অতীত ইতিকথা। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানির তোড় ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নদীটি তার পূর্ণ যৌবন ফিরে পেলেও চৈত্র মাস আসতে না আসতেই নদীটি মরা খালে পরিণত হয়ে বুক ভরা বালি নিয়ে শুধুই স্মৃতি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। খরা মৌসুমে হঠাৎ কেউ দেখলে মনেই হবে না এটি একটি নদী। বর্তমানে সীমান্ত ঘেঁষা পুনর্ভবা এই নদীটি ড্রেজিং ব্যবস্থায় সংস্কার করে তার নাব্যতাকে ফিরিয়ে আনলে নদীটি ফিরে পেত তার পূর্ণ যৌবন। সেই সাথে কৃষি কাজে ব্যবহার হতো তার পানি। উপকৃত হতো নদী পাড়ের হাজার হাজার লোকজন। বর্তমান সরকার সীমান্তবর্তী এই অঞ্চলের জন সাধারনের কষ্টের কথা চিন্তা করে এই নদীর বুকে কলমুডাঙ্গা ও হাপানিয়া ঘাটে দু’টি ব্রীজ নির্মাণ করেছে।
বর্তমানে নদীটির উত্তরে দেশের অভ্যন্তরে উৎপত্তি স্থল উত্তর পাতাড়ীগ্রাম হতে দক্ষিণে প্রায় ১০কোটি টাকা ব্যয়ে ১১২০মিটার দেশের অভ্যন্তরে নদীর পূর্ব পাড়ে বøক বসিয়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের দিকে। চলতি বছরের জুন মাস নাগাদ এই কাজ সমাপ্ত হবে বলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে। বাঁধ নির্মাণের পর সীমান্ত এলাকার অবহেলিত জনপদের উন্নয়নে এলাকাবাসী নদীটি সংস্কারের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আকুল আবেদন জানিয়েছেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ