Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নরসিংদীতে শহীদ মিনার ভিত্তিক কেন্দ্রিকতা থাকছে না

| প্রকাশের সময় : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

নরসিংদী থেকে সরকার আদম আলী : এবারও একুশে ফেব্রæয়ারী শহীদ দিবস পালনে শহীদ মিনার ভিত্তিক কেন্দ্রীকতা থাকছে না। প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এ বছরও নরসিংদী সরকারী কলেজ শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করছে না। জেলা প্রশাসন নরসিংদী স্টেডিয়াম চত্বরে পুষ্পস্তবক অর্পণের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। পক্ষান্তরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হিসেবে নরসিংদী সরকারী কলজ শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের প্রস্তুতি নিয়েছে নরসিংদী সরকারী কলেজ কর্তৃপক্ষ। এতে এবারও প্রশাসন ও জনগণ একত্রিত হয়ে শহীদ দিবস পালনের সুযোগ থাকছে না। শহীদ দিবস উদযাপনে প্রশাসন ও জনগণের মধ্যে বিচ্ছিন্নতার কারণে নরসিংদীতে দিবসটির ভাবগাম্ভীর্য বিনষ্ট হচ্ছে। বিনষ্ট হচ্ছে শহীদ মিনার ভিত্তিক বাঙালী জাতির জাতীয় ঐক্যমত্যের অপরিহার্য আঞ্চলিক ঐক্য ও কেন্দ্রীকতা। ২০০৮ সালে শহীদ মিনার বিভাজনের সময় যেমন ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ রহস্যজনক নিরবতা পালন করে, ঠিক তেমনি এবারও এই অবস্থা দূরীকরণে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।
জানা গেছে, ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের পর শহীদানদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনার্থে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো নরসিংদী সরকারী কলেজ ক্যাম্পাসে শহীদ মিনার তৈরী করেন তৎকালীন ছাত্র শিক্ষকরা। এই শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন নরসিংদীর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সাধারণ জনগণ। সেই থেকে নরসিংদী সরকারী কলেজ শহীদ মিনারটি একটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। কিন্তু ২০০৮ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক অমৃত বাড়ৈ হঠাৎ নরসিংদী স্টেডিয়াম চত্বরে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ শুরু করেন। এই ঘটনা জানাজানি হবার পর স্থানীয় জনমনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এই নিয়ে নরসিংদীর রাজনৈতিক অঙ্গন, শিক্ষাঙ্গনসহ সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে চাপা ক্ষোভ দেখা দেয়। নরসিংদীর জনগণ তৎকালীন টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজি উদ্দিন আহমেদ রাজুকে ঘটনাটি জানালেও রহস্যজনক কারণে তিনি এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। পরে জানা যায় তিনিই জেলা প্রশাসনের উপর প্রভাব করে শহীদ মিনারের কেন্দ্রীকতাকে বিচ্ছিন্ন করে স্টেডিয়াম চত্বরে পাল্টা শহীদ মিনার করেন। সেই থেকে নরসিংদীতে একুশে ফেব্রæয়ারী শহীদ দিবস তথা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের কেন্দ্রীকতা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ২০১৬ সালে জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে আমূল পরিবর্তন এলে নরসিংদী থেকে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন নরসিংদীর এমপি লে. কর্ণেল (অব:) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরু। অনেকের ধারণা ছিল কর্ণেল হিরু প্রতিমন্ত্রী হবার পর নরসিংদী সরকারী কলেজ শহীদ মিনারটি পুনরায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হিসেবে মর্যাদা ফিরে পাবে। কি কারণে অর্ধ শতাব্দীকালের স্বাক্ষী নরসিংদী সরকারী কলেজ শহীদ মিনারটির কেন্দ্রীকতা বিনষ্ট হয়েছে তা মানুষ জানতে পারবে। কিন্তু দীর্ঘ ৪ বছরধিককাল কেটে গেছে নরসিংদীর মানুষ আজও জানতে পারেনি কেন, কী কারণে নরসিংদীর শিক্ষাঙ্গনের কেন্দ্র নরসিংদী সরকারী কলেজ শহীদ মিনারটি এর কেন্দ্রীয় মর্যাদা হারিয়েছে। কী কারণে বিগত কয়েক বছরেও নরসিংদী সরকারী কলেজের শহীদ মিনারটি এর কেন্দ্রীয় মর্যাদা ফিরে পাচ্ছে না। চলতি বছরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্টেডিয়াম চত্বরের শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের কর্মসূচী ঘোষণা করার পর জনমনে ব্যাপক প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ