বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
নরসিংদী থেকে সরকার আদম আলী : এবারের একুশের কর্মসূচী থেকে বইমেলা বাদ দেয়ায় নরসিংদীর লেখক, সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিক ও শিক্ষানুরাগীসহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে বইমেলার আয়োজন না করায় অনেকেই ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। কেউ দু:খ প্রকাশ করেছেন। আবার কেউ এ ব্যাপারে চরম হতাশা ব্যক্ত করেছেন। সকল হতাশা ক্ষোভ ও দু:খ প্রকাশিত হয়েছে মানববন্ধন কর্মসূচীর মাধ্যমে। গতকাল শনিবার দুপুর ১২ টায় নরসিংদী সরকারী কলেজের সামনে স্থানীয় কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষানুরাগী ও ছাত্রসমাজ যৌথভাবে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে। এতে বক্তৃতা করেন, নরসিংদী সরকারি কলেজের প্রভাষক নাদিরা ইয়াসমীন, নরসিংদী মডেল কলেজের প্রভাষক নাজমুল আলম সোহাগ, মুক্তধারা নাট্য স¤প্রদায়ের সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ সনেট, কবি সুমন ইউসুফ, কবি রবিউল আলম নবী, কবি আক্তারুজ্জামান, কবি সুমন আফ্রাদ, কবি অনির্বাণ মাহবুব, কবি এমরানুর রেজা ও বিভিন্ন কলেজের ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ। জানা গেছে, ১৯৭৭ সালে তৎকালীন নরসিংদী থানাকে মহকুমা ও ১৯৮৪ সালে মহকুমা প্রশাসনকে জেলা প্রশাসনে উন্নীত করার পর থেকে নরসিংদীতে প্রায় প্রতি বছর একুশের অনুষ্ঠানমালায় নিয়মিত বই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ২০০৮ সাল পর্যন্ত ঐতিহ্যবাহী নরসিংদী সরকারী কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হতো। এরপরে কয়েক বছর নরসিংদী স্টেডিয়াম চত্বরে বই মেলা অনুষ্ঠানের পর সর্বশেষ ২০১৬ সালে পুনরায় নরসিংদী সরকারী কলেজ মাঠে বই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। আর এই বই মেলার মাধ্যমেই একুশের অনুষ্ঠানসমূহ পূর্ণতা পেতো। নরসিংদী সরকারী কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত বইমেলাগুলোতে প্রতিবছর কমবেশী ২ শত বুকস্টল বসানো হতো। নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বই ব্যবসায়ীরা বই নিয়ে আসতো এ বই মেলায়। নরসিংদী সরকারী কলেজের বই প্রেমিক ছাত্র-ছাত্রীরাও রাজধানী ঢাকা থেকে বিভিন্ন ধরনের বই এনে মেলায় বিক্রি করতো। নরসিংদীর স্থানীয় কবি, সাহিত্যিকদের লেখা বিভিন্ন বই এ মেলায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হতো। বই মেলার অনুষ্ঠানে বাঙালীর শিক্ষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর সেমিনারের আয়োজন করা হতো। সেমিনারে স্থানীয় লেখকদের বিষয়ভিত্তিক প্রবন্ধের উপর আলোচন করা হতো। এতে স্থানীয় শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, কবি, ইতিহাসবিদগণ আলোচনায় অংশগ্রহণ করতেন। নরসিংদী সরকারী কলেজ মাঠের এ বই মেলায় নরসিংদী জেলার ৬ টি উপজেলাসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে বহু সংখ্যক বই প্রেমিক মানুষের সমাবেশ ঘটতো। হাজার হাজার অভিভাবক তাদের সন্তানদের নিয়ে বই মেলা থেকে বই কিনে নিতেন। বিকেল ৩ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গন লোকে লোকারণ্য হয়ে যেতো। একেকটি বুকস্টল প্রতিদিন হাজার হাজার টাকার বই বিক্রি করার সুযোগ পেতো। সর্বোচ্চ বিক্রেতাকে পুরস্কৃত করা হতো। বই মেলার আরেকটি দিক ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। নরসিংদীর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো জেলা প্রশাসনের কর্মসূচী অনুযায়ী একদিন করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপহার দিতো। কিন্তু দু:খজনকভাবে গত বছর নরসিংদীতে মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। এ বছরও একুশের অনুষ্ঠান থেকে বই মেলা বাদ দেয়া হয়েছে। কেন বই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না তার সঠিক কোন কারণ জানা যায়নি। তবে মানববন্ধন কর্মসূচীতে বক্তাগণ বলেছেন, স্থানীয় প্রশাসনের কলেজ কর্তৃপক্ষের মনোমালিন্যের কারণে গত বছর সরকারী কলেজ মাঠে বই মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। অনেকে বলেছেন, প্রশাসনিক ক্যাডার ও শিক্ষা ক্যাডারের মধ্যে সুপেরিয়রিটির দ্বন্ধে ২০১৬ সালে কলেজ মাঠে বই মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। তখন নরসিংদী জেলা প্রশাসক ছিলেন আবু হেনা মোরশেদ জামান। এখন নরসিংদী জেলা প্রশাসক পদের পরিবর্তন হয়েছে। এক বছর ধরে জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ^াস। নরসিংদীর শিক্ষানুরাগী মানুষ আশা করেছিলেন এ বছর নরসিংদীতে বই মেলা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু এ বছরও একুশের অনুষ্ঠানমালা থেকে বই মেলা বাদ দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে নরসিংদীর একজন বই প্রেমিক আলেকজান্ডার স্মিথ’র উদ্বৃত্তি দিয়ে বলেছেন, আলেকজান্ডার বলেছেন “বই যেন পৃথিবীর মধ্যে আরেক সূ² পৃথিবী। যখন আমি নিদ্রায় শয়ন করি, তখন বইয়ের উপর যেন আমার মস্তক শায়িত হয়”। এরপরও বই মেলা হবে না এটা আশা করা যায় না ভাবাও যায় না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।