Inqilab Logo

বুধবার, ১২ জুন ২০২৪, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সরকার দলীয় এমপির বিরুদ্ধে স্থানীয় আ’লীগের অভিযোগ সিলেটে তোলপাড়

| প্রকাশের সময় : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম


সিলেট ব্যুরো : সিলেটে আওয়ামীলীগ সমর্থিত এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েছের বিরুদ্ধে বহুমুখী অভিযোগ উঠেছে। সংবাদ সম্মেলন করে তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তুলেছে খোদ আ’লীগের নেতাকর্মীরা। এমপির নির্বাচনী গুরুত্বপূর্ণ এলাকা দক্ষিণ সুরমা উপজেলা আ’লীগ এ অভিযোগ তোলায় এখন তোলপাড় সর্বত্র। আগামী নির্বাচনে দলের টিকিট বর্তমান এমপি বাগিয়ে নিল্ওে, তার পক্ষে যে মাঠে দলের নেতাকর্মীরা কাজ করবেন না এমন ঘোষণা প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তারা স্পষ্ট করে দিয়েছে। যে কারনে দলের নেতাকর্মীসহ ভোট রাজনীতি বিশ্লেষকদের নিকট এ সংবাদ সম্মেলন অর্থবহ হয়ে উঠেছে। মাঠ পর্যায়ে সরকার দলের জনপ্রিয়তা যেখানে নড়েবড়ে, সেখানে দলের স্থানীয় সমর্থন এমপি কয়েছের বিরুদ্ধে চলে য্ওায়ায় তার অবস্থা এখন নাজুক।
দলীয় নেতাকর্মীরা অভিযোগে বলেন, সিলেট-৩ আসনে মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী কয়েসকে ‘প্রতিহিংসাপরায়ণ, আভিজাত্যের অহমিকায় অন্ধ, পরশ্রীকাতর’।‘ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার অসৎ উদ্দেশ্যে উপজেলা আ’লীগকে সাংগঠনিকভাবে তছনছ করে দিচ্ছেন’ এমপি কয়েস। প্রধানমন্ত্রীর সিলেট সফর উপলক্ষে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা আ’লীগ ২৭ জানুয়ারি বর্ধিত সভায় দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনকে প্রধান অতিথি, সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে প্রধান বক্তা এবং মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি বদর উদ্দিন কামরান, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লুৎফুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ ও এমপি মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরীর নাম বিশেষ অতিথি হিসেবে রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছিল। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মাহমুদ-উস-সামাদ চাটুকারদের সহযোগিতায় নিজেকে প্রধান অতিথি উল্লেখ করে বর্ধিত সভার মঞ্চে জোরপূর্বক একটি ব্যানার টানান। তার অপতৎপরতায় সভায় উপস্থিত নেতাকর্মীরা প্রতিবাদমুখর হলে এমপির পোষ্য গুন্ডারা জামায়াত-শিবির ও বিএনপির চিহ্নিত সশস্ত্র ক্যাডারদের দলের নিরীহ নেতাকর্মীদের উপর লেলিয়ে দেন তিনি। ছাত্রদলের চিহ্নিত ক্যাডার আব্বাস, মঞ্জু, কুটন, বাবুল ও রুহুলসহ বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এমপির পোষ্য ও ভাড়াটে গুন্ডাবাহিনীর হামলায় আ’লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এমপির নির্দেশে দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ ৭৬ রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে। সন্ত্রাসী হামলা ও গুলিবর্ষণের ফলে দলের ৩০ নেতাকর্মী আহত হয়।’ ওই ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে জেলা আ’লীগের প্রতি আহবান জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। এছাড়া অভিযোগ করা হয়, ‘২০১৪ সালে উপজেলা নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ আবু জাহিদকে মেনে নিতে না পেরে এমপি কয়েস বিরোধিতা করেন। আ’লীগ প্রার্থীর বিজয় ঠেকাতে চাটুকার, মোসাহেবদের মাঠে নামান তিনি। তার এই বিরোধিতার তথ্য প্রধানমন্ত্রীর অফিসে যায়। প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে এমপিকে দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধাচরণ না করতে নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু নির্দেশ উপেক্ষা করে ভোটের দিন পর্যন্ত এমপি দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধাচরণ এবং জামায়াতের প্রার্থীর প্রতীকে ভোট দিতে ভোটারদের উৎসাহ দেন। আবু জাহিদের বিজয় ঠেকাতে না পেরে তিনি যাতে উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালিত করতে না পারেন, সে লক্ষ্যে ষড়যন্ত্র শুরু করেন এমপি কয়েস। উপজেলা প্রশাসনকে ব্যবহার করে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের কোটার উন্নয়ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ করে রেখেছেন। ফলে গত ৪ বছর ধরে দক্ষিণ সুরমায় উন্নয়ন হচ্ছে না। উপজেলার রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই করুণ, বিদ্যালয়ে আসবাবপত্র সংকট বিরাজ করছে, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতি হয়নি। দক্ষিণ সুরমার প্রতি এমপির বিমাতাসুলভ আচরণের ফলেই এ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এমপি কয়েসকে ‘নানা দুষ্কর্মের হোতা’ উল্লেখ করে বলা হয়, ‘২০১৬ সালে ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ন্যাক্কারজনক ভ‚মিকা রাখেন এমপি। প্রতিটি ইউনিয়নে তৃণমূল নেতাদের বাছাই করার ফলে এমপির নিজের লোকেরা প্রার্থী হতে পারেনি। এতে প্রতিহিংসাপরায়ণ এমপি দলীয় প্রতীকের বিরোধিতা করে অন্য দলের প্রার্থীদের সমর্থন করেন। দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে এমপির বিরোধীতার কারণে দক্ষিণ সুরমায় ৭টি ইউনিয়নের ৫টিতেই নৌকার প্রার্থী পরাজিত হন’। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলা হয়, ‘২০০৪ সালে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়েছিল। প্রায় ১৪ বছর গত হতে চলেছে, অথচ উপজেলা আ’লীগের সম্মেলনের কোন খবর নেই। নিজের চামচাদের সুবিধাজনক পদে রাখা যাবে না দেখে টালাবাহানা করে এমপি উপজেলা সম্মেলন পিছিয়ে রাখছেন।’ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৩ আসনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে এলাকার সচেতন ভোটারদের ‘চাওয়া-পাওয়াকে মূল্যায়ন করে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত সুযোগ্য ব্যক্তিকে’ মনোনয়ন প্রদানের জন্য আ’লীগের হাইকমান্ডের প্রতি আহবান জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

 



 

Show all comments
  • আকাশ ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৩:৩৩ এএম says : 0
    সবে তো শুরু হলো.............
    Total Reply(0) Reply
  • জাহিদ ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৩:৩৪ এএম says : 0
    পরাজয়ের সময় এলে এরকমই হয়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ