Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

জুমার নামাজে কয়েক লাখ মুসল্লির অংশগ্রহন

উরশ শরিফ উপলক্ষে বিশ্ব জাকের মঞ্জিল মুখী জনস্রোত শুরু

| প্রকাশের সময় : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : ফরিদপুরের বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে মহাপবিত্র বিশ্ব উরশ শরিফ উপলক্ষে গতকাল কয়েক লাখ মুসুল্লী জুমার নামাজে অংশ গ্রহনের পরে মিলাদ শরিফ শেষে বিশ্বওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের রওজা শরিফ জিয়ারত করেন। উরশ শরিফ উপলক্ষে ইতোমধ্যেই সারা দেশ থেকে লাখ লাখ ধর্মপ্রান মানুষের জনস্রোত এখন বিশ্ব জাকের মঞ্জিলমুখী। বাস, লঞ্চ, ট্রাক সহ বিভিন্ন যানবাহনে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলমুখী এ জনজনস্রোত ক্রমশ বড় হচ্ছে। বরিশাল -ফরিদপুর মহাসড়কের পুকুরিয়া ও তালমা মোড় ছাড়াও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মালিগ্রাম এবং চর ভদ্রাসন এলাকা থেকে সড়ক পথে জনশ্রোত অব্যাহত রয়েছে। এবারো দেশের বাইরে থেকে বিপুল সংখ্যক জাকেরান ও আশেকানবৃন্দ বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের উরশ শরিফে অংশ নিচ্ছেন। বিশেষ করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, আসাম, মেঘালায় ও ত্রিপুরা থেকেও অনেক আশেকানবৃন্দ উরশ শরিফে যোগ দিচ্ছেন। প্রতিবছর বাংলা ফাল্গুন মাসের প্রথম শনিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে এ উরশ শরিফ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
উরশ শরিফ উপলক্ষে ইতোমধ্যে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। গত প্রায় ৩মাস ধরে বিশ্ব জাকের মঞ্জিল ও এর আশে পাশের প্রায় ২৫ বর্গকিলোমটার এলাকা জুড়ে উরশ শরিফের প্রস্তুতি কাজ চলছিল। অংশগ্রহনকারী সকলের আহার, অজু গোসল ও নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছ বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে। শান্তিÑশৃংখলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করনে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের কয়েক হাজার সেচ্ছাসেবক ছাড়াও পুলিশ ও র‌্যাবও মোতায়েন করা হয়েছে।
আপন পীর উপমহাদেশের প্রখ্যাত সুফী সাধক হজরত মাওলানা শাহ সুফী সৈয়দ খাজা ইউনুস আলী এনায়েতপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের নির্দেশে বাংলা ১৩৫৪ সালে শাহ সুফি সৈয়দ খাজাবাবা ফরিদপুরী (কু:ছে:আ:) ছাহেব ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার আটরশী গ্রামে ইসলাম প্রচারে নিয়োজিত হন। সেদিন খেজুরের খোলের বেড়া ও ছনের ছাউনি দেয়া ঘর কিনে তিনি আটরশীতে ‘জাকের ক্যাম্প’ প্রতিষ্ঠা করে ইসলাম প্রচার শুরু করেছিলেন। কালের বিবর্তনে সেই জাকের ক্যাম্পই আজকের ‘বিশ্ব জাকের মঞ্জিল’। বিশ্ব ওলী হজরত মাওলানা শাহ সুফি সৈয়দ খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) তার জীবদ্বশায় বিশ্ব জাকের মঞ্জিল থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষকে হেদায়াত প্রদান করে গেছেন। নানা গঞ্জনা ও প্রতিকূলতা অতিক্রম করেও ২০০১-এর ১মে ওফাত লাভ পর্যন্ত তিনি ইসলাম প্রচারে ব্রতী ছিলেন।
উরশ উপলক্ষে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পীর ছাহেব হজরত মাওলানা খাজাবাবা ফরিদপুরী(কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের আধ্যাতিক উত্তরাধিকারী ও বড় ছাহেবজাদা আলহাজ খাজা মাহফুজুল হক মুজাদ্দেদী ছাহেব ও মেজ ছাহেবজাদা আলহাজ খাজা মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদী ছাহেবদ্বয় সমেবত জাকেরান ও আশেকানবৃন্দকে সাক্ষাত প্রদান সহ নানা অসিহত প্রদান করছেন।
আজ থেকে প্রায় ৭০বছর আগে বিশ্বওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেব যখন আটরশীতে আসেন, তখন এখানের মুসলমানরা ইসলামের বিধি বিধান সম্পর্কে মোটেই ওয়াকিবহাল ছিলেন না। তারা ঈদ ও কোরবানীর দিন লাঙ্গল-জোয়াল নিয়ে জমিতে যথারীতি হাল চাষ করতে যেত। অথচ পূজাÑপার্বনে নতুন জামা কাপড় পড়ে প্রতিমা দর্শনে বের হত।
সে অবস্থাতেই পীর ছাহেব ‘জাকের ক্যাম্প’ প্রতিষ্ঠা করে ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করেন। তার প্রতিষ্ঠিত জাকের ক্যাম্প ক্রমেই জাকের মঞ্জিল থেকে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের রূপ নিয়ে সারা বিশ্বে ইসলামের দাওয়াত পৌছে দিচ্ছে। বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পীর ছাহেব-এর আপন পীর খাজা এনায়েতপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেব শনিবার সুবেহ ছাদেকের সময় জন্ম গ্রহন করেছিলেন। তিনি ওফাত লাভ করেন রবিবার দুপুর সোয়া ১২টায়। তার দাফন হয় সোমবার বাদ আসর। আর বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পীর ছাহেব এর দাদা হুজুর, হজরত মাওলানা শাহ সুফি সৈয়দ ওয়াজেদ আলী(রঃ)ছাহেব ওফাত লাভ করেন মঙ্গলবার। আপন পীর ও দাদা হুজুরের জন্ম-মৃত্যুর এসব দিবসকে হিসেব করেই প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের প্রথম শনিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে ৪দিনব্যাপী মহাপবিত্র বিশ্ব উরশ শরিফ উদযাপিত হয়ে থাকে। বিশ্ব জাকের জাকের মঞ্জিলের পীর ছাহেব নিজেও সোমবার দিবাগত মধ্যরাতের পরে ওফাত লাভ করেন। এসবেরই ধারাবাহিকতায় গতকাল থেকে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে উরশ শরিফের কার্যক্রমের সূচনা হচ্ছে।
আগামী মঙ্গলবার ফজর নামাজ বাদ ফাতেহা শরিফ ও খতম শরিফ আদায়ন্তে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত এবং মিলাদ ও দুরুদ শেষে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পীর ছাহেবের মাজার শরিফ জিয়ারতের নিয়তে পুনরায় ফাতেহা শরিফ পাঠন্তে আখেরী মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। এরপরে দিনব্যাপী ওয়াজ ও পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত শেষে বাদ আসর পর্যন্ত উরশ শরিফের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানা গেছে।
আপন পীরের নির্দেশে বাংলা ১৩৫৪ সালে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পীর ছাহেব হজরত মাওলানা শাহ সুফী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেব নিজ বাড়ী শেরপুরের পাকুরিয়া গ্রাম ছেড়ে আটরশীতে এসে ইসলাম প্রচার শুরু করেছিলেন। তিনি ছিলেন সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর গ্রামের হজরত মাওলানা শাহসুফী খাজা এনায়েতপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) ছাহেবর একজন যোগ্য খলিফা। খাজা এনায়েতপুরী (কুঃছেঃ) আজীজ ছাহেব ছিলেন খাজা ওয়াজেদ আরী (রঃ) ছাহেবের খলিফা। খাজা ওয়াজেদ আলী (রঃ) ছাহেবও ফরিদপুর শহরের অদুরে গের্দা এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। কিন্তু ইসলাম প্রচারে তৎকালীন জমিদারদের অত্যাচারে তিনি একসময়ে ফরিদপুর ত্যাগ করে কোলকাতায় হিযরত করতে বাধ্য হন। সেখানে তিনি আজীবন ইসলাম প্রচার করেন। কোলকাতার চিত্তরঞ্জন হাসপাতালের পেছনে গোবরাবাগে তার মাজার শরিফ সহ মাদ্রাসা ও মসজিদ রয়েছে। খাজা ওয়াজেদ আলী (রঃ) ছাহেবের পীর ছাহেব হজরত মাওলানা শাহসুফী ফতেহ আলী কুঃ ছেঃ আজীজ ছাহেবের মাজার শরিফ কোলকাতারই মানিকতলায় অবস্থিত। সেখানে তার মসজিদও রয়েছে। ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের ফতেহপুর জেলার সেরহিন্দ শরিফে তরিকায়ে নকসবন্দীয়া মুজাদ্দেদিয়ার ইমাম হজরত শায়খ আহমদ সেরহিন্দী মুজাদ্দেদ আলফেসানী (রাঃ)-এর দরবার ও মাজার শরিফ রয়েছে।

 



 

Show all comments
  • মামুন ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৩:৩৭ এএম says : 2
    এই নিউজটি দেখে খুব ভালো লাগলো।
    Total Reply(0) Reply
  • কাওসার আহমেদ ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৩:৩৮ এএম says : 0
    আল্লাহ সবাইকে দ্বীনের সহিহ বুঝ দান করুক।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নামাজ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ