পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : ‘আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী পরে/ সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে মোরা পরের তরে’ (কামিনী রায়)। বিজ্ঞানের বদৌলতে পৃথিবীকে বলা হয় ‘গ্লোবাল ভিলেজ’। বংলাদেশ বিমানের শ্লোগান ‘ছোট হয়ে আসছে পৃথিবী’। কবির ‘বাণী’ বা বিমানের ‘শ্লোগান’ বর্তমান যুগে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। দেশে দেশে সীমানা প্রাচীর বা কাঁটা তারের বেড়া থাকলেও উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শান্তি-শৃংখলা রক্ষাসহ যাপিত জীবনে সবাই সবার জন্য অপরিহার্য। শুধু মানুষ কেন! পশু-পাখির ক্ষেত্রেও এটা দেখা যায়। শীতের সময় সুদূর সাইরেরিয়া থেকে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে অতিথি পাখিরা বাংলাদেশে আসে; মুখরিত করে তোলে ডোবা নালা বন বাদার। আবার শীত শেষ হতে না হতেই তারা ফিরে যায় নিজ দেশে। আবার ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের কথাই ধরুন। পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে বাংলার দামাল ছেলেরা দেশমার্তৃকার যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। যুদ্ধের পাশাপাশি যদি বিশ্বজনমত গঠিত না হতো, বিশ্বের দেশে দেশে জ্ঞানীগুনী বন্ধুরা যদি বাংলাদেশের পাশে না দাঁড়াতেন; তাহলে কী পাকিস্তানকে পরাজিত করে ৯ মাসে বাংলাদেশের অভ্যূদ্বয় ঘটানো সম্ভব হতো?
বলা হচ্ছে এটা নির্বাচনের বছর। সংবিধানের বিধান অনুযায়ী ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন ডিসেম্বরের শেষ দিকে ভোট গ্রহণ হবে। প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। কিন্তু নির্বাচনের বছরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া একটি মামলায় কারদÐে তিনি বর্তমানে কারাগারে। এতে এক পক্ষ্যের নির্বাচনী প্রচারণা অন্য পক্ষ্যের আদালতে দৌঁড়ঝাপ চলছে। আবার সেই আশির দশক থেকে দেখা যাচ্ছে নির্বাচন ইস্যুতে ক্ষমতাসীন দলের নেতানেত্রীদের ‘মুখের ভাষা’ এবং বিরোধী দলের নেতানেত্রীদের ‘মুখের ভাষা’ প্রায় অভিন্ন। ক্ষমতাসীন দল বদল হয় মানুষ বদল হয় কিন্তু ভাষা বদল হয় না। যারা ক্ষমতার চেয়ারে থাকেন তারা যে ভাষা ব্যবহার করেন; বিরোধী দলে গেলে কথামালায় শব্দ প্রয়োগে ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে যান। আবার যারা বিরোধী দলে থাকেন তারাও ঘুরে যান ১৮০ ডিগ্রী। যার কারণে দেশের সুশীল সমাজ ক্ষমতার চেয়ারকে ‘মিউজিক্যাল চেয়ার’ নামকরণ করেছেন। ’৯০ পূর্ববর্তী সময়ে নির্বাচন ইস্যুতে জাতীয় পার্টি, ’৯৪ থেকে ৯৬ সালে বিএনপি, ’৯৯ থেকে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ, ২০০৫-০৬ সালে বিএনপি, ২০১৩ আওয়ামী লীগ এবং বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতারা ‘অভিন্ন ভাষায়’ কথা বলেছে। পক্ষান্তরে ওই সময়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দলগুলো বিপরীত মুখ তথা অভিন্ন ভাষায় কথাবার্তা বলেন। নেতাদের এই কথামালায় কখনো কখনো জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত হলেও কখনো কখনো ভোটের অধিকার হারিয়েছে। রাজনৈতিক বিরোধের এই সময়ে জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন য্ক্তুরাষ্ট্র, ভারতসহ উন্নয়ন সহয়োগী দেশ ও সংস্থাগুলো বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার রক্ষায় বিবাদমান দুই পক্ষ্যের বিরোধ সুরাহায় মধ্যস্থতার চেষ্টা করেছে। কখনো সফল হয়েছে আবার কখনো দলগুলোর গোয়ার্তুমির কারণে ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেন বিদেশী কূটনীতিকরা আবার বৃহৎ দুই দলের মধ্যে সমঝোতার উদ্যোগে নড়েচরে উঠেছেন। ‘সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন’ পরামর্শ দিতে গত কয়েক দিনের কূটনৈতিক তৎপরতা দেখে সেটাই মনে হচ্ছে।
বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারবেন কিনা সে সংক্রান্ত বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক স্ববিরোধী কথাবার্তা এবং খালেদা জিয়ার রায়ের কপি দিতে বিলম্ব করায় কূটনৈতিক তৎপরতা যেন বেড়ে গেছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণার পরের দিনই বৃটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন বাংলাদেশ সফরে আসেন। তিনি জানিয়েছেন উন্নয়ন সহযোগী দেশ হিসেবে বৃটেন চায় সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন। বাংলাদেশের সার্বিক অবস্থা দেখতে ইউরোপীয় ইইউনিয়নের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করেন। ১৪ ফেব্রæয়ারী ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের (ইপি) ওই প্রতিনিধি দল সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সকল দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ দেখতে চায়। এর আগে জ্যঁ ল্যামবাটের নের্তৃত্বে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলটি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেন। তারা সিইসির কাছে জানতে চান নির্বাচনে সব দলকে অংশগ্রহণে কি ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে। এর আগে প্রতিনিধি দলটি বিএনপির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। তারা ক্ষমতাসীন দলের নেতা, সুশীল সমাজ ও বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশের রাজনীতির সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ঢাকায় কর্মরত বিদেশী কূটনীতিক ও দাতাদেশ-সংস্থা ও বিদেশীদের তৎপরতা ও দৌঁড়ঝাপ নতুন কোনো ঘটনা নয়। নিকট অতীত ২০০৬ সালেও ক্ষমতাসীন বিএনপির মহাসচিব মরহুম আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক কোথায় হবে সেই নিরপেক্ষ ভেন্যু নিয়ে বির্তক দেখা দেয়। এক পর্যায়ে আবদুল জলিল প্রস্তাব দেন দুই দলের মহাসচিব পর্যায়ে বৈঠক হতে পারে ঢাকায় কর্মরত মার্কিন রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাসের বাসা। ওই কূটনীতিকের বাসাই হতে পারে নিরপেক্ষ ভেন্যু। পরবর্তীতে যদিও ওই বৈঠক জাতীয় সংসদ ভবনে হয়েছে কিন্তু সে বৈঠকে রাজনৈতিক সংকটের কোনো সুরাহা হয়নি। আবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা রাজনৈতিক বিরোধের কারণে একে অপরের মুখ দেখাদেখি বন্ধ করেন, কেউ কারো সঙ্গে কথা বলেন না; সংলাপে আগ্রহী নন; অথচ বিদেশী কূটনীতিকরা দাওয়াত দিলে দুই দলের নেতারা একসঙ্গে হাজির হন।
এক সময় বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে বিদেশীদের নাক গলানো ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখা হতো। এগুলোকে ‘বাড়াবাড়ি’ এবং কোনো দেশের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ’ মনে করা হতো। বিশ্বায়নের যুগে এখন আর সেটা মনে করা হয় না। কবির ‘প্রত্যেকে মোরা পরের তরে’ পংক্তির মতোই। তা না হলে সব দেশ ‘উন্নয়ন, পরিবেশ রক্ষা ও সন্ত্রাস দমন’ ইস্যুগুলো এক দৃষ্টিতে দেখতো না। জাতিসংঘের অধীনে শান্তি রক্ষা মিশনে বিশ্বের বহুদেশের সৈনিকরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনী সেই মিশনের গৌরবোজ্বল ভূমিকা পালন করছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিরোধ মিমাংসার জন্য প্রথম বিদেশীদের দারস্থ হন দেশের সুশীল সমাজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। ’৮৮ সালে জাতীয় কবিতা উৎসবে স্বৈরশাসক এরশাককে উদ্দেশ্য করে পটুয়া কামরুল হাসান ‘দেশ আজ বিশ্ব বেহায়ার খপ্পরে’ কার্টুন এঁকে সারাবিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ওই সময় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও বাম দলগুলোর জোট তথা ‘ ঐতিহাসিক তিন জোটের’ আন্দোলন তুঙ্গে। এ অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষক আবুল কালাম মনজুর মোরশেদের নের্তৃত্বে কয়েকজন শিক্ষক মিছিল নিয়ে যান আমেরিকান দূতাবাসে এরশাদের পদত্যাগে চাপ সৃষ্টির দাবিতে।
’৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ঐকমত্যের ভিত্তিকে প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতি থেকে সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তন করেন সংসদীয় সরকার প্রবর্তন করা হয়। কিন্তু মাগুরা ও ঢাকার মিরপুরের উপ-নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতি’ নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবীতে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত প্রবল গণ-আন্দোলন গড়ে তোলে। সে আন্দোলনের সময়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অনমনীয় অবস্থান; তিনি সংবিধানের তত্ত¡াধায়ক সরকারের কোনো বিধান নেই দাবি করে ‘শিশু ও পাগল ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়’ মন্তব্য করেন। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের এমপিরা সংসদ থেকে এক সঙ্গে পদত্যাগ করলে নির্বাচন নিয়ে বিরোধ চরম পর্যায়ে যায়। সেই বিরোধ মেটাতে কমনওয়েলথের সেক্রেটারি জেনারেল এমেকা এনিয়াকুর প্রতিনিধি হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক গভর্নর জেনারেল স্যার নিনিয়ান স্টিফেন ঢাকায় আসেন। তিনি দীর্ঘ ৩০ দিন বিবাদমান দুই পক্ষ্যের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে মধ্যস্থতার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান। ক্ষমতাসীন বিএনপির সংবিধান নিয়ে অনমনীয়তার কারণে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারি ষষ্ট সংসদ নির্বাচন করা হয় একতরফা। বিএনপি সরকার গঠন করে এবং সংসদে নির্বাচনকালীন সময়ে নির্দলীয় তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিধান সংবিধানে যুক্ত করে ১১ দিনের মধ্যে সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণার মাধ্যমে পুনরায় নির্বাচন দিতে বাধ্য হন। ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেয়ার রাতেই বিচারপতি লুতিফুর রহমান ১৮ জন সচিবকে বদলী করে ‘প্রশাসনের দলবাজীর মেরুদÐ’ ভেঙ্গে দেন। ফলে বিরোধ তেমন স্থায়ী হয়নি। ২০০৫ সালে নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে রাজনৈতিক বিরোধ ভয়াবহ রূপ নেয়। ক্ষমতাসীন বিএনপি সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে চাকরিতে বিচারপতিদের বয়স বাড়িয়ে বিচারপতি কে এম হাসানকে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদে বসাতে চায়। আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের শরিকরা এটা মেনে নেয়নি; বরং তারা রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচন প্রতিহতের চেষ্টা করে। সে সময় আন্দোলনের মুখে আত্মসম্মান বাঁচাতে বিচারপতি কে এম হাসান প্রধান উপদেষ্টার পদে বসতে অস্বীকার করেন। আর প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ সংবিধানে নির্ধারিত পদক্ষেপগুলো উপেক্ষা করে নিজেই প্রধান উপদেষ্টার পদ দখন করে নেন। প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট পরিচালিত রাজপথের আন্দোলন সহিংস রূপ নেয়। রাজপথে লগি-বৈঠায় বিভৎসভাবে মানুষ হত্যা করা হয়। খালেদা জিয়ার অনড় অবস্থান সংবিধান অনুযায়ী পূর্বঘোষিত ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে চলেন। নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে এরশাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়। ওই নির্বাচন এক এগারোর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মাধ্যমে ভÐুল হয়ে যায়। এ সময় রাজনৈতিক সংকট নিরসনে ঢাকায় কর্মরত বৃটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী, ভারতের হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন, আমেরিকার রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাস, প্রেট্রিসিয়া এ বিউটিনিসসহ অসংখ্য বিদেশী কূটনীতিককে দৌঁড়ঝাপ করতে দেখা যায়। ঢাকাস্থ কূটনৈতিক কোরের ডিন ফিলিস্তিনী রাষ্ট্রদূত শাহতা জারাব তো বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধ মেটানোর অন্যতম ব্যাক্তিতে পরিণত হয়ে যান। এরশাদের আমল থেকে পরবর্তী দশ বছর রাজনৈতিক বিরোধ হলেই সবাই ছুঁেট যেতেন শাহতা জারাবের কাছে। অতপর ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের শাসনামলে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নের্তৃত্বাধীন মহাজোট একইভাবে তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। তারা মুন সিনেমা হল নিয়ে উচ্চ আদালতের সংক্ষিপ্ত ও বিভক্ত আদেশকে কাজে লাগিয়ে ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থাই বাতিল করে দেয়। তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল সংক্রান্ত সাজেদা চৌধুরীকে চেয়ারম্যান ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে কো চেয়ারম্যান করে যে সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়; তার সব সদস্যই তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রেখে কিছু পয়েন্ট সংশোধনের প্রস্তাব দেন। এমনকি হাইকোর্টের অ্যামিকার্স কিউরিরাও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রয়োজনে ব্যবস্থাটি ধরে রাখার পরামর্শ দেন। কিন্তু হঠাৎ করে তা বাতিল করে দেয়া হয়। এরপর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থান ছিল-সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে; এ থেকে তিনি একচুলও নড়বেন না। এ সময়ও জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ দূত হিসেবে সংস্থার সহকারী মহাসচিব জর্জ ফার্নান্দেজ তারানকো ঢাকায় আসেন। তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও বিএনপির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন। যদিও তিনি সে বৈঠকে সফল হতে পারেননি; কিন্তু ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর বিতর্কিত নির্বাচন মেনে নেয়নি আন্তর্জাতিক মহল। সংবিধান রক্ষার জন্য নির্বাচন করে পুরনায় সংসদ নির্বাচন দেয়া হবে এমন কথা আওয়ামী লীগের নেতারা বললেও ভোটের পর ভারতের কারণে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। এখানে উল্লেখ্য যে ভোটের আগে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং ঢাকায় এসে জাতীয় পার্টির এরশাদসহ নেতাদের আওয়ামী লীগের প্রস্তাব মতো নির্বাচনে অংশ নেয়ার পরামর্শ দেন। যা জনসম্মুখে প্রকাশ করে দেন এইচ এম এরশাদ। এখন আবার সেই পুরনো অবস্থায় ফিরে গেছে রাজনীতি।
দার্শনীকের উক্তি হলো ‘ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না। যারা নেয় না তাদেরকে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির মাশুল গুনতে হয়’। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। নেতাদেরও মাসুল গুনতে হচ্ছে। চেয়ারে গেলে কেউ বাইরের কথা মনে করেন না। শুধু বাংলাদেশ কেন বিশ্বের বহু দেশের রাজনীতির ইতিহাসে এর ভূরি ভূরি উদাহরণ রয়েছে। জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট গ্যাব্রিয়েল মুগাবে ৩৭ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। তিনি শ্বেতাঙ্গ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতার মর্যাদা পেয়েছিলেন। আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয় মুগাবেকে কিউবার সাবেক প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ট্রোর সঙ্গে তুলনা করা হতো। বলা হতো নেলসন ম্যান্ডেলার সমান। সেই আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয় রবার্ট মুগাবেকে অপমানজনক অবস্থায় ২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর ক্ষমতা ছাড়তে হয়। ইতিহাস কী নির্মম! দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার বিদায়ের কাহিনী কী বার্তা দেয়? দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষমতাসীন দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের (এএনসি) জীয়নকাঠি ছিলেন জুমা। অথচ নিজ দলের চাপের মুখে তাকে লজ্জাজনক ভাবে পদত্যাগ করতে হলো! ভারতের বিজেপি নেতা অটল বিহারী বাজপেয়ীর পরই ছিল লালকৃজ্ঞ আদভানীর অবস্থান। দলে বর্তমানের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অবস্থান ছিল ওই দুই নেতা থেকে যোজন যোজন মাইল দূরে। অথচ সেই আদভানীর কোনো খবর নেই। সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদ দু’দিন আগে আত্মোপোলব্ধিমূলক কথা বলেছেন। তিনি বলেন, চীরকাল আমি ক্ষমতায় ছিলাম, আওয়ামী লীগও থাকবে না’। দেরিতে হলেও এরশাদের এই বোধদয় অন্যান্য নেতারা উপলব্ধী করবেন এ প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের।
বর্তমান পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে আসন্ন নির্বাচনে অংশ গ্রহণ থেকে বিরত থাকা বিএনপির জন্য যেমন কঠিন; তেমনি ৫ জানুয়ারীর মতো আরেকটি ভোটারবিহীন নির্বাচন করা প্রায় অসম্ভব। এ অবস্থায় দেশি-বিদেশী যারাই হোক আসন্ন নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার পরিবেশ সৃষ্টি অত্যান্ত জরুরী। নির্বাচনে জনগণ যাকে ভোট দেবেন তারাই সরকার গঠন করবেন। কিন্তু গণতান্ত্রিক দেশে জনগনের ভোট ছাড়া যেতনেত নির্বাচনের দিন কার্যত শেষ হয়ে গেছে। গেøাবালাইজেশনের যুগে এখন সেটা সম্ভব নয় সে জন্যই হয়তো সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন নিশ্চিত করতে দৌঁড় ঝাপ শুরু করেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।