Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারপ্রাপ্ত ডিডির বিরুদ্ধে ঘুষ দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ

নরসিংদী পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ

| প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম


স্টাফ রিপোর্টার, নরসিংদী থেকে : নরসিংদীর পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে অনিয়ম দূর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণ, সীমাহীন স্বেচ্ছাচারিতা ও নারীঘটিত বিস্তর অভিযোগ পাওয়া গেছে। নরসিংদী পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মচারীরা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে মহা-পরিচালকের নিকট এ মর্মে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ পত্রে বলা হয়েছে, আব্দুর রাজ্জাক নিয়ম বহির্ভূতভাবে মনোহরদী পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে ইউএফপিও হিসেবে একাধারে ৮ বছর চাকরি করেছেন। তিনি ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর মনোহরদী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএফপিও) হিসেবে যোগদান করেন। দীর্ঘ ৭ বছর তিনি মনোহরদীতে এই পদে চাকুরীকালীন ২০১৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারী তাকে নরসিংদীর ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালকের দায়িত্ব দেয়া হয়। মনোহরদী ইউএফপিও থাকাকালীন তিনি দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ৭ বছর চাকরির সুযোগে দুহাতে টাকা কামাতে থাকেন। তিনি বাজেটের কন্টিজেন্সির টাকা দিয়ে অফিসের কেনাকাটা না করে পুরো টাকাই আত্মসাৎ করেছেন। মনোহরদী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের মাঠ কর্মীদের টিএ বিলের অর্ধেক টাকা আত্মসাৎ করেছেন। স্থানীয় একদুয়ারিয়া ইউনিয়নের পরিবার কল্যাণ সহকারি শামীমা আক্তার ও শিউলী আক্তারের সাথে স্বামী-স্ত্রী’র মতো সম্পর্ক গড়ে তোলেন। আর এ নিয়ে দুই মহিলার সংসারে ঝগড়া ফ্যাসাদ লেগেই থাকতো। শিউলীকে নিয়ে মাঝে মাঝে মা ও শিশু কেন্দ্রে রাত্রীযাপন করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। নরসিংদীর ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তার দূর্নীতি সীমা ছাড়িয়ে যায়। তিনি নরসিংদীর উপ-পরিচালক হলেও তার কোন ভাড়া করা বাসা নেই। সপ্তাহে ৩/৪ দিন তিনি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের গেষ্ট রুমে রাত্রীযাপন করেন। তিনি মনোহরদী উপজেলার ২ আনসারের ২ মাসের বেতন ও বোনাস আত্মসাৎ করেন। এ কথা কাউকে না জানানোর জন্য তিনি হিসাবরক্ষকের মাধ্যমে সাদা কাগজে ও বিলপত্রে সই রেখে দিয়েছেন। বদলীযোগ্য না হওয়া সত্বেও নরসিংদী সদরের ২ জন পরিবার কল্যাণ সহকারি (এফডবিøউএ)’র নিকট থেকে ২০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে নরসিংদী সদরে বদলী করেছেন। পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক পদে প্রশাসনিক কারণ ছাড়া বদলীর কোন নীতিমালা নেই। এতদসত্বেও ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক ৫০ হাজার টাকা ঘুষের বিনিময়ে নজরপুর ইউনিয়ন হতে মো: এনামুল নামে একজন পরিদর্শককে পৌরসভায় বদলী করেছেন। এনামুল হকের স্ত্রী বর্তমানে নজরপুর ইউনয়ন পরিবার কল্যাণ সহকারি পদে কর্মরত রয়েছেন। এনামুল হকের কোন পৈত্রিক সম্পত্তি নরসিংদীতে নেই। তার স্ত্রীকে নরসিংদী পৌরসভায় বদলী করারও তদবির চলছে। আর এসব দূর্নীতির মাধ্যম হচ্ছেন এফপিআই এনামুল হক। ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক সদর উপজেলার মৃত পরিবার কল্যাণ সহকারি বেগম নাহিদা নারগিসের নিকট থেকে এনামুল হকের মাধ্যমে ৭৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে পেনশন মঞ্জুরীর আদেশ দিয়েছেন। নরসিংদীতে ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক পদে যোগদানের পর থেকে তার অফিসের কন্টিজেন্সী বাবদ ৬-৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ইন্টারনেটের জন্য বরাদ্দকৃত ডিডি অফিসের ২০ হাজার টাকা কোন কাজ না করেই আত্মসাৎ করেছেন। গরীব অফিস সহায়ক মো: আব্দুল লতিফের নিকট থেকে ১৮ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে ল্যাম্পগ্র্যান্ট মঞ্জুরীর আদেশ দিয়েছেন। শিবপুরের উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জাকিয়া জেসমিনের ফেয়ারওয়েলের জন্য এনামুল হকের মাধ্যমে চাঁদা উত্তোলন করে সব টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এমসি ডবিøউসিতে কর্মরত দাইনার্স নাদিরা বেগম তার নিজস্ব দায়িত্ব ছেড়ে দিন-রাত স্ত্রীর মতো উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাকের সেবাযতেœ ব্যস্ত থাকেন। প্রত্যেক উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে কম্পিউটার, প্রিন্টারগুলো নষ্ট হয়ে গেছে বলে ড্রাইভার দিয়ে অফিসের গাড়ী পাঠিয়ে ঢাকা থেকে ঠিক করে এনে প্রত্যেক উপজেলা হতে ১০ হাজার টাকা করে নিয়ে প্রিন্টার ফেরত দিয়েছেন। এসব টাকা ডিডি আব্দুর রাজ্জাক আত্মসাৎ করেছেন। ডিডি আব্দুর রাজ্জাক প্রায় সবসময়ই নিজের আত্মপ্রচার ও আত্মপ্রশংসা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। কেউ বিরক্তি প্রকাশ করলে তিনি তাদেরকে অশালীন ভাষায় গালাগাল করেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করার পর থেকে তিনি পৌরসভার এফপিআই এনামুল হকসহ ২-৩ জন এফপিআই তার অফিস কক্ষে নিয়োগ ও বদলী বাণিজ্যের সভা করে থাকেন। অভিযোগকারীরা এসব ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাকের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবী জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে ডিডি আব্দুর রাজ্জাকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি অনেকের দাবী পূরণ করতে পারিনি বলে তারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। উর্ধতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করবেন প্রমাণিত হলে আমার সাজা হবে। আমি আমার উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে সব জানিয়েছি।

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ