Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আশাশুনিতে নিম্নমানের ও অবৈধ বইয়ের রমরমা বাণিজ্য

| প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

আশাশুনি (সাতক্ষীরা) থেকে জি এম মুজিবুর রহমান : আশাশুনিতে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবৈধ নোট বই ও চুক্তিবদ্ধ গাইড বই ধরিয়ে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার গোপন তৎপরতা আবারও শুরু হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে অভিজ্ঞজন, বিদ্যানুরাগী, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও সচেতন মহলের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বা নির্ধারিত কতিপয় শিক্ষক বেশ কয়েকটি প্রকাশনীর সাথে গোপনে চুক্তিবদ্ধ হয়ে মোটা টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদেরকে নিম্নমানের বা নির্ধারিত বই কিনতে বাধ্য করছে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বলছেন, পরীক্ষায় ঐ বই থেকে প্রশ্ন করা হবে। শিক্ষকদের এমন আশ্বাসে বই কিনতে বাধ্য হচ্ছে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের ফরমায়েস মানতে প্রথমে এক প্রকাশনীর বই কিনলেও পরবর্তীতে আবার অন্য প্রকাশনীর বই কিনতেও বাধ্য করে থাকেন এমন অভিযোগও রয়েছে। ফলে বছরে অনেক স্কুলের শিক্ষার্থীদের একাধিক প্রকাশনির বই কিনতে বাধ্য করা হয়ে থাকে। এ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে এস এস সি পরীক্ষায় নিম্নমানের বইয়ের কারণে প্রশ্নের ধরণ ও উত্তর নিয়ে শিক্ষক-অবিভাবকদের মধ্যে বাক-বিতন্ডাও হতে দেখা গেছে।
সরজমিন ঘুরে বিভিন্ন লাইব্রেরি, প্রতিষ্ঠান প্রধান, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার তুয়ারডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বিছট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ত্রয়োদশপল্লী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, বাইনতলা আরসি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গোয়ালডাঙ্গা ফকিরবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মিত্র তেতুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কাদাকাটি আরার মাধ্যমিক বিদ্যালয়, খরিয়াটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাড়িয়ালা মাধ্যমিক ্িবদ্যালয়, গুনাকরকাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, খাজরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হাড়িভাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ উপজেলার অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আদিল প্রকাশনী, জুপিটর, পাঞ্জেরী প্রকাশনীর বই বেশী পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া ফুলকুড়ি, গেøাবাল, অগ্রযাত্রা, লেকচার, গøাক্সী প্রকাশনীর বইও কোন কোন স্কুলে ধরা হচ্ছে। এসব স্কুলগুলোর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদের বই কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক অভিভাবক ও শিক্ষক জানান, শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত শিক্ষকরা বইয়ের ব্যবসায়ে জড়িয়ে পড়েছেন। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা প্রতিবাদ করেও কোন কাজ হচ্ছে না। তারা উপজেলা প্রশাসনকেও ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করছেন। অভিভাবকরা আরো বলেন, শিক্ষকরা যদি শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে তাহলে আমাদের কিছুই করার থাকে না। এব্যাপারে তুয়ারডাঙ্গা, মিত্র তেঁতুলিয়া, কাদাকাটি আরার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বা সহকারী প্রধান শিক্ষকদের সাথে কথা বললে তারা কোন প্রকাশনীর সাথে চুক্তিবদ্ধ হননি দাবি করে জানান, এবছর আশাশুনিতে সমিতির কার্যক্রম সচল না থাকায় বই ধরার ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। কোন প্রতিষ্ঠান চুক্তিবদ্ধ হলে সেটি তারা নিজ দায়িত্বে করবেন। শিক্ষাথীরা বই কিনলে বা প্রাইভেট শিক্ষকদের কথায় বই কিনলে সেটি তাদের নিজস্ব ব্যাপার।
এব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার বাকী বিল্লাহ জানান, গাইড বইয়ের ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পত্রের প্রেক্ষিতে সকল বিদ্যালয়কে গাইড বই ব্যবহার না করতে চুড়ান্ত নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। কেউ প্রশাসনের নাম ভাঙালে সেটি স্রেফ ভাওতাবাজি মাত্র। ইতোমধ্যে আমরা প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে গইড বই ব্যবহার না করতে চিঠি করেছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ