পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : ৫০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর পরেও চাহিদা মতো টিকিট পাচ্ছেন না ঢাকা-কলকাতা রেলপথের মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাত্রীরা। জরুরী চিকিৎসার প্রয়োজনে কলকাতাগামী অনেক যাত্রী সময়মতো মৈত্রীর টিকিট না পেয়ে নিরাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। ভুক্তভোগিদের অভিযোগ, তদবির ছাড়া মৈত্রী ট্রেনের টিকিট পাওয়া যায় না। নির্ধারিত দিনে কাউন্টারে লাইনে দাঁড়িয়ে হাতো গোনা কয়েকজন টিকিট পেলেও অনেক সময় লাইনের মধ্যেই টিকিট শেষ হয়ে যায়। এর বাইরে ইমিগ্রেশনের ভোগান্তিতো আছেই। মৈত্রীতে যারা নিয়মিত ভ্রমণ করেন তাদের কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে বুথের সংখ্যা কম হওয়ায় ইমিগ্রেশনের জন্য যাত্রীদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ইমিগ্রেশন করতে অনেক সময় ২/৩ ঘণ্টা লেগে যায়। আবার ভারতের কলকাতাতেও একই অবস্থা। সেখানেও ইমিগ্রেশন ও চেকিংয়ের সময় যাত্রীদের নানাভাবে হয়রানি করা হয়। রেলমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক এর আগে যাত্রীদের হয়রানি লাঘবে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে ইমিগ্রেশন চালুর উদ্যোগ নেন। মন্ত্রীর সেই উদ্যোগের পরও হয়রানি বন্ধ না হওয়ায় যাত্রীরা ক্ষুদ্ধ। সাজ্জাদ নামে এক যাত্রী বলেন, ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে বুথের সংখ্যা আরও বাড়ানোসহ যাত্রীদের মাথার উপর ছাউনির ব্যবস্থা করা উচিত। তিনি বলেন, ভারতে ইমিগ্রেশন ও চেকিংয়ের নামে যাত্রীদের প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হতে হয়।
২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল ঢাকা- কলকাতা রেলপথে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন চালু হয়। শুরুতে এই ট্রেনে যাত্রী পাওয়া যায়নি। তখন অনেকটাই যাত্রীশূণ্য অবস্থায় যাতায়াত করতো ট্রেনটি। প্রথম দিকে এই ট্রেনের যাত্রীদেরকে ভারতের অংশে ইমিগ্রেশনের সময় চরম হয়রানির শিকার হতে হতো। যাত্রীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সেই হয়রানি বন্ধের উদ্যোগ নেন রেলমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক। এজন্য তিনি ইমিগ্রেশন পদ্ধতি আগের তুলনায় অনেকটা সহজ করার উদ্যোগ নেন।
গত বছরের এপ্রিলে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনটি পুরো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করা হয়। সে সময় ট্রেনটির কেবিনে প্রতি আসনের ভাড়া ২০ ডলার ও চেয়ারের ভাড়া ১২ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছিল। তার উপর উভয় ক্ষেত্রেই রয়েছে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। এ ছাড়া টিকিটের সঙ্গে ৫০০ টাকার ট্রাভেল ট্যাক্স যোগ করা হয়। এরপর গত ৮ ডিসেম্বর থেকে মৈত্রীর ভাড়া ৫০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
হঠাৎ ভাড়া বৃদ্ধিতে অনেকটাই বিপাকে পড়েন যাত্রীরা। রেলওয়ের তথ্যমতে, মৈত্রী ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে গত বছর থেকেই আলোচনা চলছিল। প্রাথমিকভাবে ২৫ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর কথা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ৫০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়। এক্ষেত্রে কেবিনে প্রতি আসনের ভাড়া ৩০ ও চেয়ারের ভাড়া ২০ ডলার করা হয়েছে। এছাড়া উভয় ক্ষেত্রেই ১৫ শতাংশ ভ্যাট বহাল রাখা হয়েছে। পাশাপাশি সব শ্রেণির টিকিটের সঙ্গে ৫০০ টাকার ট্রাভেল ট্যাক্সও রয়েছে। সব মিলিয়ে এসি আসনে ৩৪০০ টাকা ও এসি চেয়ারে ২৫০০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে এরপরও মিলছে না মৈত্রীনের টিকিট। গত মঙ্গলবার কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, মৈত্রীর টিকিট না পেয়ে খালি হাতে ফিরেছেন অনেকেই। কাউন্টার থেকে জানানো হয়েছে, সব টিকিট শেষ। কাউন্টার থেকে খালি হাতে ফিরে একজন যাত্রী জানান, তিনি একজন রোগির চিকিৎসার জন্য কলকাতা যাবেন। রোগির অবস্থা ভালো না হওয়ায় ট্রেন অথধবা বিমানে যেতে হবে। বাসে যাওয়ার মতো অবস্থা নেই। বিমানে যাওয়ার মতো সামর্থও নেই। তিনি বলেন, সময় মতো যেতে না পারলেও ডাক্তারের সাক্ষাতও মিলবে না। ভুক্তভোগি যাত্রীদের অভিযোগ, তদবির ছাড়া মৈত্রীর টিকিট পাওয়াই যায় না। যাদের তদবিরের লোক আছে তারা সহজেই টিকিট সংগ্রহ করতে পারে। আর যারা অনলাইনে টিকিট কাটে তাদের জন্য সুবিধা। বাকীদের টিকিটের জন্য দিনের পর দিন কাউন্টারে ধরনা দিতে হয়। যদিও রেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, টিকিট নিয়ম অনুসারেই ছাড়া হয়। এখানে তদবিরের কোনো বিষয় নেই। এমনকি কাউন্টারের বাইরে টিকিট বিক্রিরও কোনো সুযোগ নেই।
রেলওয়ের কর্মকর্তাদের দাবি, ঢাকা ও কলকাতায় ইমিগ্রেশন ও চেকিং সম্পন্ন করায় মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাত্রীদের সীমান্তে আর চেকিং করা লাগছে না। শুধু ইঞ্জিন পরিবর্তনের জন্য ট্রেনটি শুধু ১০ মিনিটের বিরতি দেয়। এতে ট্রেনটির যাত্রা সময় অনেক কমে গেছে। ফলে যাত্রী চাহিদা আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। এক মাস আগে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হলেও ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে তা বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। এতে অনেকেই টিকিট পাচ্ছে না।
এদিকে, খুলনা-কলকাতা রেলপথে দ্বিতীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস বন্ধন যাত্রা শুরু করে গত বছরের ১৬ নভেম্বর থেকে। এই ট্রেনে এসি কেবিনের আসনে ১৫ ডলার ও এসি চেয়ারে ১০ ডলার ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। উভয় ক্ষেত্রেই রয়েছে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। সব শ্রেণির টিকিটের সঙ্গে ৫০০ টাকার ট্রাভেল ট্যাক্স যুক্ত আছে। এ ট্রেনের এসি আসনের ভাড়া দুই হাজার টাকা ও এসি চেয়ারের ভাড়া দেড় হাজার টাকা।
উল্লেখ্য, বর্তমানে মৈত্রী এক্সপ্রেস ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে ছাড়ে সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে আর কলকাতা পৌঁছায় বিকাল ৪টায়। আর কলকাতা স্টেশন থেকে ফিরতি ট্রেন ছাড়ে সকাল ৭টা ১০ মিনিটে। সেটি ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে পৌঁছায় বিকাল ৪টা ৫ মিনিটে। সপ্তাহে তিনদিন করে মোট ছয়দিন যাতায়াত করে ট্রেনটি।
অন্যদিকে, বন্ধন এক্সপ্রেস সপ্তাহে একদিন যাতায়াত করে। এটি খুলনা থেকে ছাড়ে দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে ও কলকাতা পৌঁছায় সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে। আর কলকাতা থেকে ফিরতি ট্রেন ছাড়ে পরের দিন সকাল ৭টা ১০ মিনিটে। সেটি খুলনায় পৌঁছায় দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।