পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হোসাইন আহমদ হেলাল : শীতকাল শেষ হয়ে যাচ্ছে। শীতের সবজির চাষির খরচ ওঠে না, ক্রেতার কাছে বিক্রি হচ্চে পাঁচগুণ চড়া দামে। সবজি বাজারে কি রাজনীতির ভূত আচর করেছে? মধ্যসত্বভোগীরা কারা? কৃষক আর ক্রেতার মাঝখানে পাঁচগুণ দাম কারা হাতিয়ে নিচ্ছে? সরকারি সংশ্লিষ্ট সংস্থা মনিটরিং এর মাধ্যমে তা কি বের করতে পেরেছেন? মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্যমূল্যে নিয়ন্ত্রণে সরকার কি পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে? নাকি অবহেলা করছে মধ্যসত্বভোগীরা নিজ দলের মনে করে? শুধু সবজি বাজার কেন সব বাজার এখন সরকার সমর্থক মধ্যসত্বভোগীর নিয়ন্ত্রণে। সর্বত্রই সরকার ও দলের নাম ব্যবহার করেই সিন্ডিকেট গড়ে ওঠেছে দেশের তৃণমূল থেকে রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত। কোথাও বাজার নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেই। রাজধানী ঢাকায় কাঁচা বাজারগুলোতে দু’ সিটি কর্পোরেশনের সাইনবোর্ড ঝুলে থাকলেও তাও সিন্ডিকেডের নিয়ন্ত্রণে। সাইনবোর্ডে বিক্রয় তালিকায় চক দিয়ে মূল্য লেখা হচ্ছে না। মূল্য তালিকার সাইনবোর্ড অনেক স্থানে অস্তিত্ব নেই।
ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার সবজি চাষি মতিউর রহমান নিজের দেড় বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছেন। স্থানীয় সবজি বাজারে তিনি প্রতিটি কপি ৫ থেকে ৮ টাকা দরে বিক্রি করলেন। ফলন বেশ ভাল হলেও প্রত্যাশিত দাম না পাওয়ায় হতাশ তিনি। বর্তমান বাজার দরে কপি বিক্রি করে তিনি বীজ, সেচ, সার ও কীটনাশক এর খরচ ওঠাতে পারছেন না। নিজের পরিশ্রমে দাম যোগ করলে সবজি চাষে মতিউরের লোকসানের অংকটা বেশ বড়।
এ অবস্থায় পরিবরের ভরণপোষণের পাশাপাশি দু’সন্তানের পড়াশোনার ব্যয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় তিনি। মতিউর রহমানের মত সবজির প্রত্যাশিত দাম না পেয়ে চরম বেকাদায় পড়েছেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহসহ ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোর সবজি চাষিরা। অনেকে আগ্রহ হারিয়ে পেশা পরিবর্তনের চিন্তায়ও করছেন।
কৃষক ন্যায্য দাম দাম না পেলেও ক্রেতাদরে কাছে সবজি বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। রাজধানীর পাইকারি বাজারে প্রতিটি ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২২ টাকায়। আর খুচরা বাজারে এটা বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়। নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ এলাকা থেকে আসা বিভিন্ন সবজি পাঁচ গুণ বেশী দামে কিনছেণ রাজধানীর ক্রেতা সাধারণগণ। কয়েক দফায় হাত বদলের কারণে বাড়ছে সবজির দাম। ফলে একদিকে চাষিরা সবজির উৎপাদন কছর ওঠাতে পারছেন না। অন্যদিকে আকাশচুম্বি দামের কারণে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস ওঠছে।
সারাদেশের গ্রামাঞ্চলের সবজির দাম ক্রেতাদের নাগালেই আছে। নায্য দাম না পাওয়ায় সবজি চাষিদের মধ্যে হতাশাও আছে। একই সবজি রাজধানী ঢাকার পাইকারি বাজারে এসে বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ দামে, খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতারা দাম বাড়াচ্ছেন আরও অন্তত দুই গুণ, গ্রাম ও শহরে সবজির দামের পার্থক্য নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও বাজার বিশ্লেষকরা ও কিছুটা উদ্বিগ্ন। সারাদেশে সবিজর বাম্পার ফলন হয়েছে। গ্রাম এলাকায় তুলনামূলক কম দামেই বিক্রি হচ্ছে সবিজ। ফলে কৃষক নায্য দাম পাচ্ছে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. শামছুল আলম ইনকিলাবকে বলেন, গ্রাম ও শঞরের বাজারে পচনশীল সবজির দাম অর্ধেক ব্যবধান হতে পারে। কয়েক দিনের ব্যবধানে সবজি নষ্ট হয়ে যায়। এ হিসাবে কেন্দ্রীয় বাজারের দামের অর্ধেক যদি কৃষক পেয়ে থাকেন; তাহলে বলতে হবে বাজার কার্যকর আছে। আর অর্ধেক অর্থও যদি চাষিরা না পান, তবে বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভাবতে হবে। প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সরকার সড়ক অবকাঠামোতে যথেষ্ট উন্নতি করেছে। তবে পণ্য পরিবহনে বাধা দূর করতে পদেক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করে আসা সংগঠন কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট হুমায়ূন কবির ইনকিলাবকে বলেন, নজিরদারির অভঅবে রাজধানীর বাজারে সবজির দাম বাড়ছে। বেশ কয়েকটি পণ্যের প্রতিটিতে শতভাগ বাড়ছে সবিজর দাম। তিনি বলেন, সাধারণ চাষিদের বাজারে প্রবেশে বাধা দেয়া হচ্ছে। কেউ সবজি ঢাকায় আনতে চাইলে রাজনীতির প্রবেশ পথে নিজেদের মনগড়া দামে এসব সবিজ কিনে নিচ্ছে ফড়িয়ারা। বাজার নিয়ন্ত্রণে বাজারে সবার প্রবেশাধিকার নিশ্চিতের পাশাপাশি নজরদারি আরও বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
গতকাল সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে আলু ২২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। একই আলু কারওয়ান বাজারের আড়তে ১২ থেকে ১৪ থেকে কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আড়ত ব্যবসায়ী সবুজের সাথে আলাপকালে সে জানায়, বগুড়া থেকে ১০ টাকা কেজি দরে আলু কেনা হয়েছে। পরিবহন, শ্রমিক ও আড়তের খরচের সাথে লাভ যোগ করে পাইকারি দাম নির্ধারণ হয়েছে ১৪ টাকায়। আর খুচরা বিক্রেতারা কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা লাভ করছেন। অথচ একই আলু বিক্রি করে কেজিতে ৭/৮ টাকা পাচ্ছেন গ্রামের কৃষকরা। গফরগাঁও বাঁধাকপি ১০ থেকে ১২ টাকা, একই কপি যশোরে ৫ থেকে ১০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন আড়তদের আবদুর রহমান। এ কপি আমরা বিক্রি করি ১৫-২০ টাকা। খুচরা বাজারে ৩০-৩৫ টাকা, আড়তে ১৫-২০ টাকা কেজি টমেটো বিক্রি করতে দেখা যায়। আড়তদার আলম জানান, গত শুক্রবার শিম বিক্রি হয়েছে ২০ টাকায়। শসার দাম পাইকারি বাজারে ২০ থেকে ২২ টাকা নেমে এসেছে।
রাজধানীর বাজারে সব সচেয়ে বেশী সবজি আসে যশোর থেকে। গ্রামের বাজারে ফুলকপি ১৫-২০ টাকা, টমেটো ১৫-২০ টাকা, বাঁধা কপি ৫-৮ টাকা, লাউ ১৫-২০ টাকা, শসা ২০-২২ টাকা, গাঁজর ২০ টাকা, শিম ১৫-২০ টাকা, বেগুন ২০-২৫ টাকা। রাজধানীতে প্রতিকেজি টমেটো ৫০-৫৫ টাকা, শসা-৪০-৫০ টাকা, বেগুন ৬০-৬৫-৭৫ টাকা, শিম ৪৫-৬৫ টাকা, বাঁধাকপি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, লাউ ৬০-৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।