বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ইনকিলাব ডেস্ক : সারাদেশে গতকাল পুলিশ-বিএনপি-আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য নিয়ে ডেস্ক রিপোর্ট :
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রায়কে ঘিরে গতকাল (বৃহস্পতিবার) পুলিশের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে আহত হয়েছে ২০জন। সংঘর্ষের পর খালেদা জিয়ার রায় ঘোষণাকে ঘিরে পক্ষে-বিপক্ষে সকাল থেকে নামে মাঠে নামে সরকারি দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি। সকালে ডা. শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে নগর বিএনপির নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয় চত্বরে অবস্থান নেয়। । পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী দলীয় কার্যালয় চত্বরে জড়ো হয়। বেলা পৌনে ২টায় দলীয় কার্যালয় থেকে বের হয়ে নেতাকর্মীরা নূর আহমদ সড়কে মিছিল শুরু করে। এসময় বিপুল সংখ্যক পুলিশ নেতাকর্মীদের ঘেরাও করে বেধড়ক লাঠিচার্জ শুরু করে। একপর্যায়ে মিছিলটি দলীয় কার্যালয় চত্বরে ঢুকিয়ে দেয় পুলিশ। এরপর চারিদিক থেকে ঘেরাও করে পুলিশ নির্বিচারে লাঠিচার্জ ও ধরপাকড় শুরু করে।
এদিকে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী নগরীর বিভিন্ন স্পটে অবস্থান নেয় সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বে দারুল ফজল মার্কেটস্থ দলীয় কার্যালয় চত্বরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তবে আওয়ামী লীগ বিএনপির রাজপথে অবস্থানের পরও দুই দলের মধ্যে কোন ধরনের সহিংসতা না হওয়ায় পুলিশ প্রশাসনে স্বস্তি বিরাজ করছে।
খুলনা ব্যুরো জানায়, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রায় ঘোষণার পর খুলনায় বিক্ষোভ-মিছিল করছেন দলের নেতাকর্মীরা। এ সময় দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশের লাঠিচার্জকে উপেক্ষা করে বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর শাখার সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নেতৃত্বে সমাবেশ করছেন নেতাকর্মীরা। পুলিশের লাঠিচার্জে ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। খুলনায় আন্দোলনে খুলনা জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনে মিছিলে ১৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।
বিশেষ সংবাদদাতা, ময়মনসিংহ থেকে জানান, ময়মনসিংহে দক্ষিন জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর মাহমুদ আলম ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক লিটন আকন্দের নেতৃত্বে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল যুবদল-ছাত্রদল। এ সময় পুলিশের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটলে পুলিশ ১৮ রাউন্ড ফাঁকা ছুড়েঁ। এতে কমপক্ষে আলমগীর মাহমুদ, লিটন আকন্দ’সহ কমপক্ষে ১০জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরীর গাঙ্গিনাড়পাড় এলাকা থেকে মিছিল বের হয়ে নতুন বাজার পৌঁছলে এ ঘটনা ঘটে। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন যুবদল নেতা জগলু, জামান, ছাত্রদল নেতা জনি, জিএস মাহাবুব, এজিএস রানা, তানভীর আহমেদ রবিন প্রমূখ।
এদিকে, একই ইস্যুতে গৌরীপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে উত্তর জেলা যুবদল ও ছাত্রদল। বৃহস্পতিবার বিকেলে পৌর শহরের মধ্য বাজারে এ বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করলে যুবদল-ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে যুবদল নেতা ভিপি শামছু, সৈয়দ তৌফিক, ও ছাত্রদল নেতা ঝুলন, মামুন, সোহেল, ইলিয়াস।
এদিকে, দেশনেত্রীর রায়ের প্রতিবাদে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ার ময়মনসিংহ জেলা আইনজীবী সমিতিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে আইনজীবী ফোরাম।
নোয়াখালী ব্যুরো জানায়, জিয়া আফরানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষনার পর নোয়াখালীর বিভিন্ন স্থানে হামলা ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। বিকাল তিনটায় রায় ঘোষনার পর জেলা জজকোর্ট এলাকায় জাতীয়তাবাদী আইনজীবি ফোরামের উদ্যোগে একটি মিছিলে ছাত্রলীগ সমর্থকরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে । এতে ৫জন আহত হয় । জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি এডভোকেট আবদুর রহমান অভিযোগ করেন যে, শান্তিপূর্ণ মিছিলের উপর ছাত্রলীগ পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায় । এসময় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরিত হয় । এক পর্যায়ে মিছিলকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধে। এসময় শামীম নামক এক বিএনপি কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়। হতিয়া উপজেলার ওছখালী প্রধান সড়কে বিএনপির একটি বিক্ষোভ মিছিলে আওয়ামীলীগ সমর্থকরা হামলা চালায় । এতে বিএনপি’র ৫ কর্মী আগত। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলী বর্ষন করে ।
সিলেট ব্যুরো জানায়, ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের মধ্যে দফায় দফায় সশস্ত্র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় ছাত্রদল নেতাকর্মীদের হামলায় ভাংচুর হয় সিলেট সিটি করপোরেশনের ময়লা ফেলার একটি ট্রাক গাড়ি। বেলা আড়াইটা থেকে তিনটা থেকে এ সংঘর্ষ চলে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এসময় কয়েকরাউন্ড গুলি বিনিময়ের ঘটনাও ঘটেছে। উভয় পক্ষে সংঘর্ষে ২ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১০ থেকে ১২ জন আহত হয়েছেন। এরমধ্যে গুলিবিদ্ধ একজন হচ্ছেন জেলা ছাত্রদল নেতা সৈয়দ মোস্তফা কামরুল। অন্যজনের নাম জানা যায়নি। অন্যদিকে আদালতপাড়ায় অবস্থান নেন বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। রায় ঘোষণার পরপরই উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এক পক্ষ অন্যপক্ষের বিরুদ্ধে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় গুলিবিনিময়ও হয় পাল্টাপাল্টি। দু’জন গুলিবিদ্ধ হন।
ল²ীপুর সবাদদাতা জানান, বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রায়ের পর ল²ীপুরে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি’র মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে তিন সাংবাদিকসহ কমপক্ষে আহত হয়েছেন ১০ জন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৩ টার দিকে শহরের গোডাউন রোডে এ ঘটনা ঘটে। এসময় বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক ও সাবেক এমপি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির বাস ভবনে হামলা চালানো হয়েছে। এসময় ছাত্রলীগ ও যুবললীগ নেতা কর্মীরা সংবাদ কর্মীদের ছবি ও ভিডিও করতে বাধা দেয় এবং ক্যামরা চিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। পরে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।এসময় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের আনন্দ মিছিলের মুখোমুখি হলে দুইপক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। যমুনা টেলিভিশনের জেলা সংবাদদাতা আনিস কবির, , বিএনপি নেতা মাইন উদ্দিন চৌধরী রিয়াজ, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হারুনুর রশিদ,ছাত্রদল নেতা ফয়েজ আহমদ, স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা জামাল হোসেন, শাহীন, মুকুল, যুবলীগ কর্মী সাইফ উদ্দিন আপলু, মিঠু ও সজিবসহ ১০ জন আহত হন। এছাড়া রায়ের প্রতিবাদে ল²ীপুর সদর.রায়পুর,দালাল বাজার ও রাখালিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করে তারা।
হবিগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার ৫ বছর ও তারেক রহমানসহ অপর পাঁচ আসামির ১০ বছর কারাদন্ডের রায় ঘোষণায় হবিগঞ্জ শহরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে ২৪ রাউন্ড টিয়ারশেল ও ৫০ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে আহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন। গ্রেফতার করা হয়েছে ৭ বিএনপির নেতাকে। অপরদিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আগুন দিয়ে জালিয়ে দিয়েছে শিবির অফিস। এদিকে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় ইট পাটকেলের আঘাতে কমপক্ষে ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকাল ৩ টার দিকে পৌর শহরে এ ঘটনা ঘটে।
ফেনী জেলা সংবাদদাতা জানান, পুলিশের হামলায় যুবদল ছাত্রদলের ১২ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। বিএনপি থেকে অভিযোগ করা হয়, সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা তার বাড়ী ঘরে হামলা করে ব্যাপক ভাংচুর করেছে। এ ব্যাপারে সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মোয়াজ্জম হোসেন জানান খুরশিদের নেতৃত্বে মিছিল থেকে যুবদল-ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা পু্লশিকে লক্ষ করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৩টি ককটেল উদ্ধার করেছেন বলেও তিনি জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।