Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সখিপুরে নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের রমরমা বাণিজ্য : সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি টাকা

| প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম


সখিপুর (টাঙ্গাইল) উপজেলা সংবাদদাতা : সরকার সহায়ক গাইড বই ক্রয়-বিক্রয় ও মজুদ নিষিদ্ধ করলেও সখিপুরসদরসহ গ্রাম-গঞ্জে বিভিন্ন প্রকাশনীর গাইড উচ্চমূল্যে বিক্রি করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ও শিক্ষকনেতা প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ছাত্রছাত্রীদের নির্দিষ্ট পাঠ্যবই বাদ দিয়ে প্রকাশনা সংস্থার বই শিক্ষক সমিতির মাধ্যমে পাঠ্যবই বানিয়ে বুকলিস্ট ছাত্রছাত্রীদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন। প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থী।
জানা যায়, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজ, মাদরাসা, কারিগরি ও কেজি স্কুলের শিক্ষার্থীদের বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত বইয়ের বাইরে নিষিদ্ধ গাইড বই কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। একই ব্যক্তি একই বই একাধিক নামে বাজারজাত করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। শুধু সখিপুর নয়, টাঙ্গাইলের প্রতিটি উপজেলায় একই অবস্থা। সূত্র জানায়, উপজেলার কিছু শিক্ষক নেতা, প্রতিষ্ঠানপ্রধান ও সহকারি শিক্ষক মোটা অঙ্কের কমিশনে নিম্নমানের গাইড কিনতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করছেন। অবৈধ ভুলে ভরা ওই গাইড বই পড়ে শিক্ষার্থীরা প্রতারিত হচ্ছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবন ধ্বংসের পাশাপাশি শিক্ষার মান ক্রমশ নিম্নমুখী হচ্ছে।
জানা যায়, এ উপজেলায় প্রায় ৫০টি লাইব্রেরি আছে। এসব লাইব্রেরিতে প্রায় শতাধিক প্রকাশনীর নিষিদ্ধ গাইড বই বিক্রি হচ্ছে। সেই সাথে ডিসকাউন্ট কুপন নামের লোভনীয় অফার সব ছাত্রছাত্রীর হাতে পৌঁছে দিয়েছে।
এ বিষয়ে বুলবুল লাইব্রেরির স্বত্বাধিকারী বলেন, নিষিদ্ধ নোট-গাইড বিক্রির বিষয়ে পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি থেকে হাইকোর্টে মামলা হয়েছে, নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত গাইড বই বিক্রি করছি।
স্থানীয় লাইব্রেরির মালিক, আবার কোথাও শিক্ষকরা নিজেরাই ওই গাইড বই এনে স্কুলের লাইব্রেরিতে বসেই বিক্রি করছেন। উপজেলা শহরের বেশ কয়েকটি স্কুলে সরেজমিন এ চিত্র দেখা যায়। সাংবাদিক কক্ষে প্রবেশের সাথে সাথে বইগুলো লুকানোর চেষ্টা করেন প্রধানশিক্ষক। এসময় তার টেবিলে বেশ কয়েকটি লিফলেট (বুকলিস্ট) দেখা যায়। জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে প্রধান শিক্ষকদের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের হাতে পৌঁছানোর জন্য এগুলো দেয়া হয়েছে।
উপজেলা শিক্ষক সমিতির (মাধ্যমিক) সভাপতি ও গোহাইলবাড়ি গণ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসুস্থতায় অজুহাতে এড়িয়ে যান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী শিক্ষক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যে নোট বা গাইডগুলো ভালো সেগুলোই কিনতে বলা হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যকি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক নিজ নামে এবং সমিতির নামে প্রকাশনীগুলোর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের কমিশন নিয়ে নিম্নমানের বাংলা ব্যাকরণ ও ইংরেজি গ্রামার ও গাইড সব স্কুলেই পাঠ্য করেছেন। প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি সখিপুর শাখার সভাপতি এক প্রকাশনীর গাইড ও সাধারণ সম্পাদক অন্য প্রকাশনীর গাইড প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে পাঠ্য করেছেন বলে সরেজমিন জানা গেছে।
পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি টাঙ্গাইল শাখার সভাপতি বলেন, সমিতির কিছু সদস্য এ সিন্ডিকেটে থাকতে পারে। ক্রেতাদের চাহিদা মতে আমরা ব্যবসা করি। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা খানম বলেন, কোনো শিক্ষক বা সমিতির বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল আজিজ বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নোট বা গাইড কিনতে উৎসাহিত করলে প্রমাণসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন বলেন, সব সহায়ক নোট বা গাইড ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ ও বাজারজাত নিষিদ্ধ। কেউ যদি নিষিদ্ধ নোট বা গাইড বাজারজাত করে, তবে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ