রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
যশোর থেকে রেবা রহমান : সব ধরনের সম্ভাবনা আছে। নেই শুধু উদ্যোগ। সম্ভাবনাটি হচ্ছেÑ যশোরকে দেশের তৃতীয় বাণিজ্যিক নগরী হিসেবে গড়ে তোলা। অবিভক্ত বাংলার প্রথম জেলা যশোরে রয়েছে বাণিজ্যিক নগরী গড়ে তোলার জন্য সকল ধরণের সুযোগ-সুবিধা। বেশ আগে থেকেই এখানে সৃষ্টি হয়েছে কৃষি ও শিল্পপণ্য উৎপাদনে রেকর্ড। পরিকল্পনাও ছিল, এর বাস্তবায়ন করা হবে। কিন্তু হয়েও হচ্ছে না। যশোরে বাণিজ্যিক নগরী গড়ে তুললে গোটা অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে বলে সংশিষ্টদের অভিমত। সাধিত হবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। কিন্তু সব সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বৃহত্তর স্বার্থে প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেই। শুধুমাত্র সরকারি উদ্যোগের অভাবেই যশোর বাণিজ্যিক নগরী হিসেবে গড়ে উঠছে না।
গত ২০১০ সালের ডিসেম্বরে যশোর সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন, যশোরে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সুধী সমাবেশে তিনি বলেছিলেন, যশোরের মাটি উর্বর। এখানে খেজুরের গুড়, মাছের রেণুপোনা, সবজি, তুলা ও ফুল উৎপাদনের রেকর্ড রয়েছে। রয়েছে সার্বিক কৃষি ও শিল্পের সম্ভাবনা। এসব কারণেই যশোরকে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলা হবে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় যশোরবাসী দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণে আশান্বিত হয়ে ওঠে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। বাস্তবায়নের ব্যাপারে সরকারি যেমন উদ্যোগ নেই, সংশ্লিষ্ট বিভাগরও কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। তেমনি যশোরের জনপ্রতিনিধিরাও এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম দায়িত্ব পালন করেননি বলে অভিযোগ। বিশেষ করে যশোরের এমপিরা একজোট হয়ে এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নে কোনো আবেদন-নিবেদন ও ভ‚মিকা রেখেছেন এমন রেকর্ড নেই। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়ন হলে খুব সহজেই দেশের তৃতীয় বাণিজ্যিক নগরী গড়ে উঠত।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খান ও প্রবীণ ব্যক্তিত্ব প্রফেসর আবুবকর সিদ্দিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার প্রতিনিধিদের কথা, অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়িত হলে শুধু যশোর অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে না। কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বিদেশে রফতানির মাধামে সমৃদ্ধ হবে বৈদেশিক মুদ্রা ভাÐার। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা গবেষণা করে সম্ভাবনাগুলোকে প্রকৃতভাবে কাজে লাগাতে পারবেন। শুধু কৃষি ও শিল্পপণ্য উৎপাদনে রেকর্ড নয়, দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল ও শিল্পশহর নওয়াপাড়ায় রয়েছে নদীবন্দর, যশোরের পাশেই রয়েছে আরো দু’টি স্থলবন্দরÑ ভোমরা ও দর্শনা। এসব কারণেও বাণিজ্যিক গুরুত্ব রয়েছে। তা ছাড়া রয়েছে যশোরের অতীত ঐতিহ্য ও গৌরবোজ্জ্বল ভ‚মিকা। একসময় যশোর জেলার আওতাধীন ছিল খুলনা মহুকুমা। সেই খুলনা এখন বিভাগীয় নগরী। নানা কারণে বরাবরই যশোর জেলাটি পিছিয়ে থাকছে। অথচ দেশের মোট চাহিদার বেশির ভাগ সবজি, রজনীগন্ধা, মাছের রেণুপোনা, খেজুরের গুড় ও পাটালি, পাটজাত ও হস্তশিল্প পণ্য এবং নারিকেলের ছোবড়া থেকে সাদা আঁশ তৈরি হয় যশোরে। এ ছাড়া বাউকুল, কলা, পান, সুপারি, নারিকেল, কাঁচা তুলা ও সফেদাসহ অনেক কৃষিপণ্য উৎপাদনেও এসেছে অনেক সাফল্য। অযতœ ও অবহেলায় উৎপাদন হয় প্রচুর পরিমাণে ‘লোকাট’ বা আঁশ ফল। এসব পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে পার্শ্ববর্তী ভারতসহ বিভিন্ন দেশে। যশোরে রয়েছে বিশাল এয়ারপোর্ট। কক্সবাজার থেকে যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের জন্য চিংড়ি পোনা কার্গো বিমানে যশোর আসে। বিদেশের সাথে যশোর এয়ারপোর্টের কার্গো বিমান লিঙ্ক করে দিলে খুব সহজেই যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি ও শিল্পপণ্য বিদেশে রফতানি হবে। অনেক পণ্য অভ্যন্তরীণ রফতানিতে বিরাট সাফল্য এলেও বিদেশের বাজারে প্রবেশের সুযোগকে কাজে লাগানো হচ্ছে না।
জানা যায়, গুরুত্ব অনুধাবন করে স্বাধীনতার পর যশোরকে বাণিজ্যিক নগরী গড়ে তোলার প্রস্তাবনা নেয়া হয় দুইদফায়। যা আজো বাস্তবায়ন হয়নি। কৃষিশিল্প নগরী গড়ে তোলার প্রস্তাবনারও একরকম মৃত্যু ঘটেছে। কৃষি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদসহ সংশিষ্ট পÐিতদের বক্তব্য, আন্তর্জাতিক চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে কৃষি ও শিল্পপণ্য সরবরাহ প্রক্রিয়া জোরদার করার পরিকল্পনা নেই। বৈদেশিক বাজারে কৃষি ও শিল্পপণ্য ঢোকানো কিংবা রফতানি বাজার খুঁজে বের করার বিষয়টি রয়েছে অনুপস্থিত। যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি ও শিল্পপণ্য রফতানি হয় নামকাওয়াস্তে।
যশোরে বছরের বারোমাসই সবজি উৎপাদন হয়। সবজিচাষিরা আর্থিকভাবে খুব একটা উন্নতি করতে পারেনি। কারণ কোনো নিয়মনীতিতে বাজার পরিচালনা না হওয়ায় উৎপাদক চাষি ও ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন। লাভবান হয় মধ্যস্বত্বভোগীরা। বিদেশের বাজারে যশোরের সবজির চাহিদা ব্যাপক। যশোর অঞ্চলে টমেটোর জুস ও অন্যান্য বারোমাসি ভেজিটেবল দিয়ে অত্যন্ত সস্তায় ফুড প্রোডাক্টস ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। যশোরে রয়েছে রজনীগন্ধা, গø্যাডিউলাস, জার্বেরা, লাল গোলাপ, সাদা গোলাপ, হলুদ গোলাপ, গাঁদা, জবা, ঝাউকলম, জুই ও লিলিয়ামসহ বিভিন্ন ফুল উৎপাদনের রেকর্ড। যশোরের ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বিদেশের বাজারে।
দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর হওয়ায় গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্য বেনাপোলকেন্দ্রিক। সেখান থেকে সরকার প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে থাকে। কিন্তু বেনাপোল ও যশোরের উন্নয়নে ওই টাকা কখনো ব্যয় হয় না। কৃষি ও শিল্পপণ্য রফতানির দিকে জোর দিলে শিল্প কলকারখানা, কৃষি ও কৃষকের অভাবিত উন্নয়ন ঘটত। বেনাপোল, দর্শনা, নওয়াপাড়া ও ভোমরাকে ঘিরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পর খুব সহজেই দেশের তৃতীয় গুরুত্বপুর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব। ভৌগলিক দিক দিয়ে যশোর এ অঞ্চলের মধ্যস্থল হওয়ায় এর সম্ভাবনা উজ্জ্বল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।