পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হোসাইন আহমদ হেলাল : আগমি জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরেই শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে কৌশলগত লড়াই। বিগত ২০১৪ সালের আলোচিত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর প্রথম ১ বছর মাঠে থাকার চেষ্টা করেছে বিএনপি। কিন্তু ২০১৫ সালে তীব্র আন্দোলন করে সফলতার মুখ না দেখলেও পরে বিএনপি তার অবস্থান পরিবর্তন করে। সেই থেকে মাঝের ৩ বছর প্রধান দু’টি দল একে অপরের বিরুদ্ধে কৌশলগত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এর আেেগ মাঠে তারা একে অপরের মুখোমুখি হয়নি। আওয়ামী লীগ দাবী করছে, মাঠে থাকার মত বিএনপির আর শক্তি নেই। অপরদিকে বিএনপি বলছে, তারা নির্বাচনমুখি ও গনতান্ত্রিক দল। তাই শান্তিপূর্ণ পথেই তারা সরকারকে মোকাবেলা করার পথ খুঁজছে। এসব দাবি ও বাস্তবতার মধ্যে অসংগতি যাই থাকুক, দেশবাসি অন্তত কিছুদিন স্বস্থিতে ছিলো। দু’দলের কোন্দলে জনজীবন বিপন্ন হওয়ায় মানুষ ক্ষুদ্ধ। বড় দু’দলের রাজনৈতিক কৌশলের ফলে মানুষ যে আতঙ্কমুক্ত ও স্বস্তিতে ছিলো বর্তমান রাজনৈতিক পেক্ষাপটে তাও শেষ হবার পথে। দু’দলের কৌশলগত ধৈর্য্যরে পর্ব যেন শেষ হতে চলেছে। মাঠ পর্যায়ে সংগঠন ও কর্মসূচি উভয় পক্ষের কাছেই প্রধান হয়ে উঠেছে। দু’টি দলের মুখোমুখি অবস্থান শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাড়ায় সেটিই এখন দেখার বিষয়। আজ বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রায় হতে চলেছে। এ রায়ের কারনে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারন করছে। ঢাকার দক্ষিনের মেয়র প্রতিটি ওয়ার্ডে সতর্ক অবস্থানে থাকার জন্য তার কাউন্সিলরদের নির্দেশ দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, রায়ে খালেদা জিয়ার সাজা হলে জেলকোড অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
আগামি জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে বিএনপির যে আশঙ্কা তার সাথে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর তেমন কোন মতপার্থক্য নেই। বিএনপি বরাবর দাবি করেছে, সরকার ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য ১৪ সালে নিজেদের অধীনে নির্বাচন করেছে। এবার তারা এরকমটাই ফন্দি আটছে। তত্ত¡াবধায়ক সরকার প্রশ্নে আরো ২ মেয়াদের জন্য আদালত যে পর্যবেক্ষন দিয়েছিলো বিএনপি তার ওপর ভর করে নির্বাচনকালীন তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দাবি করে আসছে। কিন্ত তত্ত¡াবধায়ক প্রশ্নে আওয়ামী লীগ অনঢ় অবস্থানে থাকায় বিএনপি এখন জাতীয় কিংবা সহায়ক সরকারের কথা বলছে। কিন্তু মুল দাবি থেকে তারা কখনো সরে আসেনি।
বিএনপি নেতাদের দাবি দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, ও জনগন এ দাবির সাথে একমত হলেও আওয়ামী লীগ ৫ জানুয়ারির মতো আরও একটি নির্বাচন করতে চাচ্ছে। বিএনপির এ দাবিকে অবশ্য সরকার এখনো পর্যন্ত ভুল প্রমানের জন্য কিছু করতে পারেনি। যদিও সরকার সুষ্টু নির্বাচন ও দেশকে এগিয়ে নেয়ার কথা বলে আসছে। কিন্তু সেজন্য নির্বাচনি ব্যবস্থার কোন পরিবর্তন প্রয়োজন আছে বলে তারা মনে করছে না। ফলে দু’দলের মধ্যে নির্বাচনের প্রশ্নে কোনো সমঝোতা ও ঐক্য এখনো দেখা যায়নি।
বিএনপি কর্মীরা মনে করছে, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তারা ক্ষমতার বাইরে থাকায় তাদের সামাজিক ও আর্থিক সক্ষমতা অনেকটাই তলানির দিকে। এ অবস্থায় যদি আগামি নির্বাচনে ক্ষমতায় না আসা যায় কিংবা যদি আওয়ামী লীগ আরো এক মেয়াদের জন্য ক্ষমতায় থাকতে পারে তাহলে বিএনপির অস্থিত্ব টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়বে। ফলে বিএনপি সমর্থক ও নেতা-কর্মীরা সক্রিয় হবার চেষ্টা করছে। বিএনপির উচ্চ পর্যায়েও এ নিয়ে কাজ চলছে। কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত সকল স্থলে দলের ঐক্য আরো সুদৃঢ় করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আজ রায়ে খালেদা জিয়াকে জেলে যেতে হলেও দলটির সিনিয়র সহ-সভাপতি তারেক জিয়ার পরামর্শে ৭ সদস্যের নীতি নির্ধারনি ফোরাম সকল সীদ্ধান্ত গ্রহন করবে।
দলটির প্রথম সারির নেতাদের নিস্ক্রিয়তায় ইতিমধ্যে ২য় সারির নেতারা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন। সম্প্রতি ঢাকার রাজপথে বিভিন্ন কর্মসূচি সফল করার ক্ষেত্রে ২য় সারির নেতাদেরকেই সামনে দেখা গেছে।
বিএনপির এই ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা আওয়ামী লীগ সহজেই সফল হতে দেবেনা। যার কারনে ৩০ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত মাত্র ৭ দিনে ২ হাজারেরও বেশি বিএনপি নেতা-কর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ কর্মীরা বিএনপি নেতাদের রুখে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের অন্যতম মুখপাত্র ড. হাসান মাহমুদ তার দলীয় নেতা-কর্মীদের এই ভূমিকা নিতে আহবান জানিয়েছেন। সম্প্রতি খালেদা জিয়ার রায়কে কেন্দ্র করে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ৭, ৮ ও ৯ ফেব্রæয়ারি আমরা রাজপথে থাকবো। যদি আবারো শ্রমজীবী মানুষের ওপর পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করা হয়, হামলা করা হয়, সেটি শুধু প্রতিহত নয়, হামলাকারিদের ধরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর হাতে তুলে দিতে হবে।
কিন্তু বর্তমানে সক্রিয় তরুণ নেতৃত্ব এখনো এতদূর আসতে সামর্থ্য অর্জন করেনি। খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে তরুণরাই দায়িত্ব পালন করবেন। তবে তরুণ নেতৃত্ব সঠিকভাবে কাজে লাগানো না গেলে বিএনপি আরো কঠিন অবস্থায় পড়বে। অপরদিকে আওয়ামী লীগ টানা এক যুগ ক্ষমতায় থাকলেও তাদের কর্মীরাও স্বস্তিতে নেই। আগামি নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব হুমকির মূখে পড়বে। খালেদা জিয়াকে বাড়ি ছাড়া করা, তার পুত্র কোকোর মুত্যু, তারেক রহমানকে প্রবাসে থাকতে বাধ্য করাসহ বিএনপি কর্মীদের গুম খুনের পাল্টা প্রক্রিয়ার ভয় রয়েছে আওয়ামী লীগ ও তাদের সমর্থকদের। ফলে বিএনপির ক্ষমতায়ন যাতে না ঘটে সেজন্য যা কিছু করার তা-করতে একমত আওয়ামী লীগ। এক কথায় দু’দলের মধ্যে চলছে অস্থিত্ব ও নিজেদের রক্ষার লড়াই।
৩ ফেব্রæয়ারি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় বক্তব্যকালে দলীয় নেতা-কর্মীদের হুশিয়ারি দিয়ে খালেদা জিয়া বলেছেন, দল ভাঙ্গার চেষ্টা করা হলে, ক্ষমা করা হবেনা। যারা সকল আন্দোলন সংগ্রামে ছিলো, বেইমানি করেনি, দলে তাদের ভালো জায়গায় অবস্থান দেয়া হবে। ভবিষ্যতে সুষ্ঠ নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তারা মূল্যয়ন পাবেন। কিন্তু যারা বেইমানি করবে একপা এদিকে অপর পা অন্যদিকে তাদের কোন মূল্যায়ন নেই। ক্ষমা একবারই হয়। বার বার নয়।
দু’টি মামলার রায়কে সামনে রেখে নতুন আইন করতে চাচ্ছে সরকার। যাতে কারো কারো বিচারিক আদালতে সাজাপ্রাপ্ত হলে পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন। এ লক্ষ্যে আইনের খসড়া প্রণয়নের কাজ চলছে। যদিও এটা এখনো চূড়ান্ত নয়। এটা নির্ভর করবে আগামী দিনের রাজনৈতিক পেক্ষাপটের ওপর। খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষনা করে নির্বাচনে যাবার পরিকল্পনা সরকারের। এ পরিস্থিতিতে দলের একটি পক্ষ নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে নির্বাচন পর্যন্ত যেতে চায়। অপর পক্ষ দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক রায় হলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখানোর পক্ষে। খালেদা জিয়ার প্রতি দেশের মানুষের সমবেদনাকে তারা কাজে লাগাতে আগ্রহী। নেতারা এসব বিষয়কে সামনে রেখে কর্মীদের উজ্জীবিত করছেন। চেষ্টা করছেন দেশবাসীর সমর্থন আদায়েরও।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেছেন, আমরা বার বার লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড দাবি করে আসছি। কিন্তু প্রধান মন্ত্রীর নির্বাচনী প্রচার অভিযান লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের নমুনা নয়। প্রধানমন্ত্রী যখন আনুষ্ঠানিক ভোট চাচ্ছেন আমরা তখন আদালতের বারান্দায় ঘুরছি। এ অবস্থায় বিএনপি নেতাকর্মীরা নির্বাচনে যেতে চাইবেনা।
বিএনপি কর্মীরা তারেক রহমানকে নির্বাচনে পাচ্ছেননা সেজন্য খালেদা জিয়াকেও হারাতে চাচ্ছেনা।
এদিকে দীর্ঘ ১ যুগের মতো ক্ষমতার শেষ দিকে এসে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে অভ্যন্তরীন কোন্দলের পাশাপশি পরবর্তী নির্বাচনে দল ফের ক্ষমতায় আসবে কিনা তা নিয়ে চিন্তিত। তাদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি যেদিকে ধাবিত হচ্ছে এতে স্পষ্ট দু’দলের ঘুম ভাংছে। অনুশীলনের দিন শেষ, মাঠ পযায়ের সহিংস রাজনীতির বিস্তার দেখতে খুব বেশি সময় অপেক্ষা করার দরকার পড়বে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।