Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ডিএসইএক্স সূচক পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন

| প্রকাশের সময় : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

পতন রক্ষায় সম্পদ ব্যবস্থাপকদের বিনিয়োগের অনুরোধ
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল মূল্যসূচকের ব্যাপক পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন ডিএসই প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৩৩ পয়েন্ট। যা চার মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত বছরের ২৯ নভেম্বর এ সূচকটি পাঁচ হাজার পয়েন্ট হয়েছিল। সর্বশেষ ওইদিন ডিএসইতে আগের দিনের তুলনায় লেনদেন সামান্য বেড়েছে। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই চিত্রে লেনদেন শেষ হয়েছে।
এদিকে গতকাল রোবাবর ব্যাপক দরপতনের কারণে ‘পুঁজিবাজারে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে’ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জর (ডিএসই) বোর্ড রুমে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), ডিএসই ব্রোকারর্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) এবং ডিএসই শীর্ষ ৩০ ব্রোকারের নেতৃবৃন্দ এক জরুরী বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন বিএমবি প্রেসিডেন্ট নাছির উদ্দিন চৌধুরী। পুঁজিবাজারের পতন রক্ষায় মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবস্থাপকদের বিনিয়োগে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবস্থাপকদের অনুরোধ করবো যদি তাদের নতুন কোনো ফান্ড থাকে, তা বিনিয়োগ করে বাজারে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য। কারণ আমরা পুঁজিবাজারকে দীর্ঘ মেয়াদে ভালো দেখতে চাই।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সক্ষমতার অভাবে পুঁজিবাজার দরপতন চলছে। যে কারণে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর পতন হচ্ছে। কমে যাচ্ছে সূচক। এমনটি মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সীমা গণনার ক্ষেত্রে শেয়ারের দাম বাজার দরের পরিবর্তে কস্ট প্রাইসে কেনার দাম বিবেচনা করার আহবান জানিয়েছেন তারা।
বিএমবিএ সভাপতি মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে সেসব সমস্যা তৈরি হচ্ছে; সেগুলো সমাধান করতে হবে। বিশেষ করে এক্সপোজারের সমস্যা। কারণ আমরা বাজারকে দীর্ঘ মেয়াদে স্থিতিশীল করতে চাই। সাময়িক সাপোর্ট দিয়ে বাজারকে ইতিবাচক করা সঠিক সমাধান নয়।
তিনি বলেন, আমরা শীর্ষ ব্রোকারেজ প্রতিনিধিদের বক্তব্যের ভিত্তিতে বেশ কিছু প্রস্তাব নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে দিতে চাই। এর মধ্যে কস্ট প্রাইসে এক্সপোজার বিবেচনা, বন্ডে বিনিয়োগকে এক্সপোজারের বাইরে দেখা, হাউজগুলোর নতুন শাখা খোলার অনুমতি, লেনদেন ডাটার গোপনীয়তা রক্ষাসহ বেশ কিছু প্রস্তাব রয়েছে। এসব বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন হলে দীর্ঘ মেয়াদ পুঁজিবাজার ভালো থাকবে বলে মনে করেন তিনি। বিএমবিএ সভাপতি বলেন, লেনদেনের ডাটার গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে প্রোপার টেকনোলজি সাপোর্ট আছে কিনা তা যাচাইয়ের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে। যাতে লেনদেনের ডাটার গোপনীয়তা রক্ষা করা যায়।
গতকাল বাজার বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স গতকাল ১৩৩ দশমিক ১৫ পয়েন্ট বা দুই দশমিক ২১ শতাংশ কমে ছয় হাজার ৮৮৮ পয়েন্টে অবস্থান করে। ডিএসইএস বা শরিয়াহ্ সূচক ১৯ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট বা এক দশমিক ৪২ শতাংশ কমে এক হাজার ৩৭৭ দশমিক ২১ পয়েন্টে অবস্থান করে। আর ডিএস৩০ সূচক ৩৬ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট বা এক দশমিক ৬৩ শতাংশ কমে দুই হাজার ১৯১ পয়েন্টে অবস্থান করে। এদিন ডিএসইর বাজার মূলধন কমে চার লাখ ১১ হাজার ২৫৪ কোটি ৬৮ লাখ ৫৪ হাজার টাকা হয়। ডিএসইতে গতকাল লেনদেন হয় ৩৬৪ কোটি ৯০ লাখ ৮৫ হাজার টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট। আগের দিন লেনদেন হয় ৩২৯ কোটি ৪৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে প্রায় ৩৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এদিন ১১ কোটি ৯ লাখ তিন হাজার ৫৮০টি শেয়ার ৯০ হাজার ৩৩০ বার হাতবদল হয়। লেনদেন হওয়া ৩৩৬টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ২৩টির, কমেছে ৩০২টির, অপরিবর্তিত ছিল ১১টির দর।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল সিএসসিএক্স মূল্যসূচক ২৪৩ পয়েন্ট কমে ১১ হাজার পাঁচ দশমিক ৭৬ পয়েন্টে এবং সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৪০৪ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট কমে ১৮ হাজার ২১৯ দশমিক ২৪ পয়েন্টে অবস্থান করে। এদিন সর্বমোট ২২১টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৪টির, কমেছে ১৯৫টির ও অপরিবর্তিত ছিল ১২টির দর।
সিএসইতে এদিন ১৬ কোটি ৬৩ লাখ ৫৩ হাজার ৭৯৩ টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট লেনদেন হয়। লেনদেনের শীর্ষে ছিল ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড। দ্বিতীয় স্থানে ছিল লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট লিমিটেড। টাকার অঙ্কে লেনদেনের শীর্ষে উঠে আসে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড। এর পরের অবস্থানে ছিল লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, স্কয়ার ফার্মা, বেক্সিমকো ফার্মা, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, মুন্নু সিরামিক, সিটি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, উসমানিয়া গøাস ও ইফাদ অটোস।
গতকাল ডিএসইতে টপটেন গেইনার বা দর বাড়ার শীর্ষে রয়েছে বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড। গেইনারের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মুন্নু জুট স্ট্যাফলার্স লিমিটেড। তালিকার তৃতীয় স্থানে থাকা উসমানিয়া গøাসের ছয় টাকা ২০ পয়সা বা পাঁচ দশমিক ৮৩ শতাংশ দর বেড়েছে। তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হলো জাহিন স্পিনিং, রংপুর ফাউন্ড্ররি, ফনিক্স ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, এনভয় টেক্সটাইল, লিন্ডে বিডি, ভ্যানগার্ড এএমএল বিডি ফিন্যান্স মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়া ও এএমসিএল (প্রাণ)। দরপতনের শীর্ষে ছিল মাইডাস ফাইন্যান্স লিমিটেড। লুজারের দ্বিতীয় স্থানে থাকা অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এক টাকা বা ৮ দশমিক ৭০ শতাংশ দর কমেছে। তালিকার তৃতীয় স্থানে থাকা সামিট অ্যালায়েন্স পোর্টের দুই টাকা ১০ পয়সা বা ছয় দশমিক ৪৬ শতাংশ দর কমেছে। লুজার তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হলো সাইফ পাওয়ারটেক, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, ফাইন ফুডস, ন্যাশনাল ফিড মিল, ফার কেমিক্যাল, শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ও সোনালী আঁশ লিমিটেড।
এদিনের দরপতন বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ এ হাফিজ মনে করেন, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মানুষের মধ্যে আতংকের কারণের পাশাপাশি বাজারে তারল্য সংকটকে দরপতনের অজুহাত হিসেবে দেখাচ্ছেন। বাজারে তারল্য সংকট রয়েছে। এ সংকট কেটে গেলে বাজার পুনরায় ঘুরে দাঁড়াবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ