Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অপ্রতুল ক্যান্সারের চিকিৎসা

বিশেষজ্ঞ সঙ্কট

হাসান সোহেল : | প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

চিকিৎসায় ১৬০টি সেন্টার দরকার, আছে ১৮টি ষ প্রতিবছর দুই লাখ রোগীর মৃত্যু, ২৫ জনে ১ জন আক্রান্ত ষ প্রাথমিকভাবে সনাক্ত হলে ৫০ ভাগ রোগীকে সুস্থ করা সম্ভব ষ জেলায় নেই চিকিৎসার ব্যবস্থা
প্রতিনিয়ত দেশে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ সে তুলনায় খুবই কম। দেশে এই রোগের চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ১১০ জনের মতো। একই সঙ্গে সারাদেশে জেলা হাসপাতালগুলোতে নেই ক্যান্সার চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা। মেডিকেল কলেজগুলোতেও চিকিৎসক ও শয্যার সংখ্যা অপ্রতুল। এমনকি ক্যান্সার রোগীদের সেবা করার জন্য নেই প্রশিক্ষিত অনকোলজিস্ট নার্স।
সূত্র মতে, দেশে ক্যান্সার চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা একেবারেই নাজুক পর্যায়ে রয়ে গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুসারে মোট জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশে ক্যান্সার চিকিৎসার ব্যবস্থা সম্পন্ন কমপক্ষে একশত ৬০ টি (প্রতি মিলিয়নে ১টি হিসেবে) সেন্টার থাকা অপরিহার্য। সেখানে আছে মাত্র ১৮টি। বেশির ভাগ সেন্টারে যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহƒত হচ্ছে তার বেশিরভাগই অকার্যকর। প্রতিটি মেডিকেল কলেজে হাসপাতালেও নেই একটি রেডিও থেরাপি মেশিন। পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দু-একটিতে অত্যাধুনিক কিছু যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য।
এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, প্রতিরোধ ও নিরাময়যোগ্য কয়েক ধরনের ক্যান্সারের ব্যাপারে এখনই সতর্ক না হলে ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে এ রোগে মৃত্যুর হার দাঁড়াবে মোট মৃত্যুর ১২ দশমিক ৭ শতাংশ। দেশের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এমিনেন্স এর তথ্যমতে, বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর প্রায় ১ কোটি ২ লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। যার মধ্যে প্রায় ৭৮ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করে। একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের দেশেও এ রোগের ভয়াবহতা বেড়েই চলেছে। ২০১০ সালে এক সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, বছরে প্রতি ৫ জন বাংলাদেশী মহিলাদের মধ্যে একজন ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করে। আমাদের দেশে এই রোগের প্রকোপ নিরুপণের জন্য যথেষ্ট গবেষণা না থাকলেও সাধারণ হিসেবে প্রতি ২৫ জন ব্যক্তির মধ্যে একজন যে কোনো ধরণের ক্যান্সারে আক্রান্ত বলে ধারণা করা হয়।
বাংলাদেশে ক্যান্সার রোগীদের ৬৬ শতাংশের বয়স ৩০ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে, এ বিষয়টি উল্লেখ করে জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার সনাক্ত করে দ্রæত নিরাময় সম্ভব না হলে এ রোগের কারণে দেশের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ কারণে ক্যান্সার নিয়ে গবেষণা ও সেবা বৃদ্ধির ওপরও জোর দেওয়া হয় ওই কর্মপরিকল্পনায়। কিন্তু দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও কয়েকটি বিষয়ে নীতি নির্ধারণ ছাড়া সামগ্রীক কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের তেমন কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
এদিকে বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ। প্রতিবছর এ রোগে দেশে প্রায় দুই লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটে। বছরে আক্রান্ত হয় প্রায় তিন লাখ মানুষ। এসব রোগীদের মধ্যে ফুসফুস, মুখগহ্বর, রক্তনালি, জরায়ু ও স্তন ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি। মহিলা রোগীদের মধ্যে শতকরা ৩০ ভাগ জরায়ু-মুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত।
বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি প্রফেসর ডা. মোল্লা ওবায়দুল্লাহ বাকী বলেন, দেশে ক্যান্সার চিকিৎসা ব্যবস্থা একবারেই অপ্রতুল। তাছাড়া চিকিৎসা বা রোগ নির্ণয়ের জন্য নেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। তিনি বলেন, প্রাথমিক ভাবে সনাক্ত করা গেলে প্রায় ৫০ ভাগ রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। বাংলাদেশে বছরে প্রায় তিন লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। এদের মধ্যে প্রায় ২ লাখ লোকের মৃত্যু হয়। এই রোগীদের মধ্যে ফুসফুস, মুখগহ্বর, রক্তনালি, জরায়ু ও স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি। তিনি বলেন, শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক এবং পর্যাপ্ত রোগনির্ণয় ব্যবস্থা না থাকায় ক্যান্সার আক্রমন ও মৃত্যুর হাত থেকে এসব রোগীকে জীবনের নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব হয় না। ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ সম্পর্কে তিনি বলেন, সারাদেশে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ রয়েছেন ১১০ থেকে ১২০জন। তবে কোন প্রশিক্ষিত নার্স নেই বলেও জানান তিনি।
ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মফিজুর রহমান ক্যান্সারের মহামারী রোধে দেশের সকল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতালে ক্যান্সার চিকিৎসার ব্যবস্থা চালুু করা দরকার বলে উল্লেখ করেন।
এদিকে ‘আমি পারি, আমরা পারি’ প্রতিপাদ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে তাল মিলিয়ে নানা উদ্যোগে দেশব্যাপি আজ বিশ্ব ক্যান্সার দিবস পালন করা হচ্ছে।
দিবসটি উপলক্ষ্যে গতকাল শনিবার রাজধানীর ইউনাইটেড হসপিটাল ক্যান্সার সচেতনতা, নির্নয়, চিকিৎসা ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই রোগের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত প্রয়াস জোরদারে নানা কর্মসূচি পালন করে।
একই সঙ্গে আর্থিক ভাবে অসচ্ছল ক্যান্সার রোগীদের শতকরা ৫০ ভাগ হ্রাসকৃত মূল্যে নূন্যতম ৭০ হাজার টাকায় রেডিওথেরাপী দেওয়ার সুবিধা ও ক্যান্সার রোগ নির্নয়ে শতকরা ২০ থেকে ৫০ ভাগ মূল্য সাশ্রয়ী স্ক্রীনিং প্যাকেজের ঘোষণা দেওয়া হয়। এ ছাড়াও ৫০ হাজার টাকায় সকল ক্যান্সার রোগীর পেট সিটি পরীক্ষা করার ঘোষনাও দেওয়া হয়। আলোচনা অনুষ্ঠানে ইউনাইটেড হসপিটালের চীফ কমিউনিকেশন ও বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ডা. শাগুফা আনোয়ার ক্যান্সারের প্রারম্ভিক সনাক্ত করনের উপর জোর দেন। এতে নাট্যকার চয়নিকা চৌধুরী ক্যান্সার রোগীদের প্রতি সমাজের সকলকে আরও ভালবাসা ও সম্মান নিয়ে এগিয়ে আসার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। সামাজিক সংগঠক ফারজানা ব্রাউনিয়া তার স¦র্নকিশোরী সংগঠনের আলোকে এ দেশের সকল কিশোরীদের ঘরে, বাইরে ও বিদ্যালয়ে ক্যান্সার সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার কথা জানান। অনুষ্ঠানে ইউনাইটেড হসপিটালের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. অসীম কুমার সেনগুপ্ত, ডা. সৌমেন বসু, ডা. রাশিদ উন নবী, ডা. মোল্লা আব্দুল ওয়াহাব ও মেডিকেল ফিজিসিষ্ট বিশেষজ্ঞ কার্তিক রাজমানি বক্তব্য রাখেন।###



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ক্যান্সার

৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ