Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

মাদরাসায় কোনো জঙ্গি নেই -স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ৯:৫৬ এএম, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

চট্টগ্রাম ব্যুরো, ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী সংবাদদাতা : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন খালেদা জিয়ার বিচার আইন মেনে চলছে। এ ব্যাপারে আমার ও সরকারের কোন হাত নেই। আইন চলবে তার নিজস্ব গতিতে । তিনি গতকাল (শুক্রবার) বিকেলে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরসায় হেফাজতে ইসলামের আমির ও মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে সাক্ষাতকালে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, মাদরাসায় কোন জঙ্গি নেই উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন মাদরাসায় ভাল মানুষ তৈরী হয়। মাদরাসায় কোন জঙ্গি-সন্ত্রাসী নেই, আগেও ছিল না। রাতে চট্টগ্রাম চেম্বারের উদ্যোগে দুইদিনের চেম্বার উৎসবের উদ্বোধনকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন আমরা সন্ত্রাস দমনেও সফল হয়েছি। বর্তমান সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ডের বর্ননা দিয়ে উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রাখতে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহবান জানান তিনি।
সরকার সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে আন্তরিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেজন্য জঙ্গি দমনে বিশ্বের একটা মডেল হয়েছে বাংলাদেশ। দেশীয়, আন্তর্জাতিকভাবে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। একটার পর একটা হচ্ছে। জনগণ ও নিরাপত্তা বাহিনী তা প্রতিহত করছে। মানুষ এগিয়ে যাবে। মানুষ আলোকিত বাংলাদেশ বানাবে। দেশে জঙ্গিবাদের স্থান নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন তারা এদেশে থাকতে পারবে না। আমরা তাদের প্রতিহত করছি। দেশ সুন্দর অবস্থানে ফিরে আসছে। আপনারাও তার ফল ভোগ করছেন। আমরা যদি নিরাপত্তা দিতে না পারি তাহলে সবকিছু অর্থহীন হয়ে যাবে। চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও এম এ লতিফ এমপি।
এদিকে সকালে চট্টগ্রাম আসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ফটিকছড়ির নানুপুরে জামেয়া ইসলামিয়া ওবায়দিয়া মাদরাসায় জুমার নামাজ আদায় শেষে তিনি হাটহাজারী দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদরাসায় আসেন। তিনি হেফাজত আমিরের সাথে স্বাক্ষাতে মিলত হন। এসময় আল্লামা শফী কওমি সনদের স্বীকৃতি প্রদান বিষয়ে আলেম-ওলামাদের দীর্ঘদিনের দাবির বিষয়টি মন্ত্রীকে তুলে ধরেন। জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান তিনি বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করবেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন এ দাবিও ইনশাল্লাহ পূরণ হবে। এসময় মন্ত্রী আল্লামা শফীর শারিরিক অবস্থার খোঁজ খবরও নেন। পরে মন্ত্রী সেখান থেকে রেব হয়ে যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। মন্ত্রী জানান তিনি আল্লামা শাহ আহমদ শফীর দোয়া নিতে এসেছেন। তার সাথে আন্তরিক পরিবেশে আলাপ আলোচনা হয়েছে।
আল্লামা শফীর সাথে সাক্ষাত
ফটিকছড়ি নানুপুর ওবাইদিয়া মাদরাসার বার্ষিক সম্মেলনে যোগদান শেষে তিনি ফটিকছড়ি থেকে সড়ক পথে বিকেল ৪ টা ২৬ মিনিটে হাটহাজারী মাদরাসায় প্রবেশ করেন। এসময় তাকে উৎসুক মাদরাসা শিক্ষার্থীরা দেখতে ভীড় জমায়। সেখানে তিনি গাড়ী থেকে নামার পর তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান, মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক মুফতি জসিম উদ্দিন। পরে তিনি মাদারা ক্যাম্পাস ঘুরে কয়েকটি ভবন পরিদর্শন করেন। এরপর তিনি হেফাজতে ইসলামের আমির ও হাটহাজারী মাদরাসার মহা পরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সাথে সাক্ষাত করেন। ৫৮ মিনিট হাটহাজারী মাদরাসায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবস্থান করলেও হেফাজত আমীরের কার্যালয়ে তিনি ৪০ মিনিট আলাপচারিতায় ছিলেন। এ সময় তিনি বলেন, হাটহাজারীতে এতবড় কওমি মাদরাসা রয়েছে তিনি আগে জানতেন না। তিনি হাটহাজারী মাদরাসায় এসে নিজেকে ধন্য মনে করেছেন। ছাত্রদের চলাফেরা দেখে তিনি মুগ্ধ। তিনি সাক্ষাতকারে আরো বলেন, কওমি মাদরাসার ছাত্ররা যে বাংলা, ইংরেজী ও আরবীতে এত পারদর্শী তা কখনো কল্পনা করিনি। মাদরাসা শিক্ষায় ছাত্রদের আদর্শ নাগরিক তৈরী করে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। আল্লামা আহমদ শফীর সাথে কওমি মাদরাসার ছাত্রদের সরকারী সনদের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ইনশাআল্লাহ এই সনদের কাজ চলছে। এটা অত্বিসত্তর সংসদে উত্তাপন করা হবে। হেফাজত আমীরের সাথে সাক্ষাত শেষে তিনি শিক্ষা ভবনের বিভিন্ন অংশ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে, আমার মূলত আসা নানুপুর মাদরাসার বার্ষিক মাহফিলে। সেখানে আমি জুমার নামাজ পড়েছি। তার পর সেখান থেকে হাটহাজারী মাদরাসায় এসেছি। শুনেছি হুজুর অসুস্থ। তাই ওনাকে দেখার জন্য ও দোয়া নেওয়ার জন্য এসেছি। তিনিও আমাকে আমার জন্য ও দেশের জন্য হাত তুলে আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন। তিনি বলেন, এদেশের মানুষ অত্যন্ত শান্তি প্রিয়, তারা কখনো হামলা ভাংচুরের বিশ^াসি নয়। এসময় হেফাজত আমিরের সাথে ছিলেন, হাটহাজারী মাদরাসার শিক্ষক মুফতি জসিম উদ্দিন, মাওলানা আনাস মাদানী, মাওলান আবু আহমদ, মাষ্টার জাহেদ, মাওলানা ইয়াহইয়া প্রমুখ।এদিকে স¦রাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে ছিলেন আবু রেজা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভী এমপি, সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডি আই জি ড. এসএম মনিরুজ্জামান, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোঃ জিল্লুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ।
মাদরাসা জ্ঞানের আলো ছড়ায়
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বাদ জুমা ফটিকছড়ির নানুপুর ওবাইদিয়া মাদরাসার বার্ষিক ইসলামী মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেছেন, ইসলাম শান্তিময় একটি ধর্ম; এ ধর্মের প্রচার-প্রসারে ভারতের দেওবন্দ মাদরাসার অনুকরণে বাংলাদেশের কওমি মাদরাসাসমূহ আলেম তৈরীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। কওমি মাদারাসার ছাত্র-ছাত্রীরা এখন দেশের বোঝা নয়; সম্পদে পরিণত হচ্ছে। তারা কেউ বেকার নেই। কওমি ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে অন্যদের সামনে মাথা নেয়াতে না হয়; সে জন্য দাওয়ারে হাদীসকে এমএ পাস মর্যাদা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোপূর্বে তা নিয়ে অনেক সময় ক্ষেপন করা হলেও জননেত্রী শেখ হাসিনা আলেম সমাজের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধাশীল বলে এ স্বীকৃতি দিতে দেরী করেনি। আলেমরা যাতে আরো উন্নত ইসলামি শিক্ষা গ্রহণ এবং তার উপর গবেষণা করতে পারে; তার জন্য ইসলামি আরবি বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আমাদের চিন্তা করতে হবে কাদের মাধ্যমে দেশে ইসলামের প্রচার-প্রসার হচ্ছে। তিনি বলেন, ইসলামে মানুষ খুনের বিধান নেই। আজকে বিশে^ শান্তির ধর্ম ইসলামকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এব্যাপারে আমাদের সচেতন হতে হবে। আমি বলতে চাই- দেশের কোন মাদরাসায় জঙ্গি-সন্ত্রাসী নেই; ছিলও না। ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে এ মাদরাসা।
মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা শাহ মুহাম্মদ ছালাহ উদ্দীন নানুপুরীর সভাপতিত্বে দু’দিন ব্যাপী এ মহাসম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী এমপি, সাবেক এমপি মজহারুল হক শাহ চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কামাল উদ্দীন আহমদ, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি ড. এসএম মনিরুজ্জামান, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা মুহাম্মদ ফখরুল আনোয়ার, ফটিকছড়ি পৌর মেয়র মোহাম্মদ ইসমাঈল হোসেন, ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুল হক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দীন মুহুরী।
মুফতি শওকত বিন হানিফের সঞ্চালনায় এ মহাসম্মেলনে তাকরির পেশ করেন হেফাজতের মহাসচিব ও হাটহাজারী মাদরাসার নায়েবে মুহতামিম আল্লামা হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরী, ফেনীর লালপোল মাদরাসার মুহতামিম মুফতি সাঈদ হোসাইন, শায়খুল হাদিস আল্লামা শেখ আহমদ, ইসলামী শিক্ষাবিদ ড. আফম খালেদ হোসাইন, মাওলানা ফরিদ উদ্দীন আল মোবারক, মুফতি মাহমুদ হাসান, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মাওলানা মুহাম্মদ হেলাল উদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা মুহাম্মদ বেলাল উদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা মুহাম্মদ শিহাব উদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা মুহাম্মদ কুতুব উদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা মজহারুল ইসলাম প্রমূখ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একটি বেসরকারি হেলিকপ্টারে করে ফটিকছড়ির নানুপুর লায়লা-কবির ডিগ্রী কলেজ মাঠে নেমে সেখান থেকে আল জামিয়া ইসলামিয়া ওবাইদিয়া মাদরাসার বার্ষিক ইসলামি মহাসম্মেলনে যোগ দেন এবং পবিত্র জুমা আদায় করেন। জুমার পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি ব্যক্তিগত সফরে এসেছি; এখানে কোন রাজনৈতিক যোগসূত্র নেই। হেফাজতের আমির আল্লাম শাহ আহমদ শফিকে বলেছেন চট্টগ্রাম গেলে যেন তার সাথে দেখা করি। এ জন্য আমি ওনাকে দেখতে যাচ্ছি। এর বাইরে অন্য কিছু নয়। আজ এখানে রাজনৈতিক বক্তব্য দেব না। পরে তিনি হাটহাজারী মাদরাসার উদ্দেশ্যে ফটিকছড়ি ত্যাগ করেন।
আল্লামা শফীর সাথে বিএনপি নেতা মীর নাছিরের সাক্ষাত
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হাটহাজারী মাদরাসায় আল্লামা আহমদ শফীর সাথে সাক্ষাত করে বের হওয়ার ১০ মিনিট পর হাটহাজারী মাদরাসায় প্রবেশ করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক প্রতিমন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। তিনিও হেফাজতের আমির আল্লামা আহমদ শফীর সাথে সাক্ষাত করেন। এসময় তিনি আল্লামা আহমদ শফীর খাস কামরায় দীর্ঘ ১৫ মিনিট অবস্থান করেন। এসময় বিএনপি নেতা নুর মোহাম্মদসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তবে দুই জনের মধ্যে কি বিষয়ে আলাপ হয়েছে তাহা জানা যায়নি। হেফাজত আমিরের কার্যালয় থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বের হওয়ার ১০ মি. মাথায় মীর নাছিরের সাক্ষাতকারকে ঘিরে এলাকাবাসীর মনে নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এই নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় হাটহাজারীর রাজনৈতিক অঙ্গনে

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ