Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লোহাগাড়ায় একজনকে ফাঁসাতে ২১ পরিবারের সর্বনাশ

| প্রকাশের সময় : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম


তাজ উদ্দীন, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম ঃ লোহাগাড়া উপজেলার মোহাম্মদ হারুন নামে এক যুবককে ফাঁসাতে গিয়ে তার পরিবাসহ একে একে ২১ টি পরিবারকে বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে সর্বশান্ত করে দিয়েছে লোহাগাড়া থানার ওসি শাহজাহান পিপিএম। হারুন লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর ইউনিয়নের সর্দারনী পাড়ার মৃত সিদ্দিক আহমদের পুত্র।
জানা গেছে, ২০১৪ সালে লোহাগাড়া থানার এস,আই মোহাম্মদ সোলেমান পাটোয়ারী লোহাগাড়া বটতলী মোটর স্টেশন থেকে হারুনসহ তার ২ বন্ধুকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরদিন থানা থেকে জনপ্রতি ২৫ হাজার টাকা করে নিয়ে ছেড়ে দেন। ছাড়া পেয়ে মোহাম্মদ হারুন পুলিশের উর্ধ্বতন মহলে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে তাদের ডাকা হলে এসআই সোলেমান পাটোয়ারী হারুনকে টাকা ফেরত দিয়ে ক্ষমা চেয়ে পার পেয়ে যান। কিন্তু ক্ষোভ রেখে দেয় এসআই সোলেমান পাটোয়ারী। তিনি পরবর্তীতে একটি অস্ত্র মামলার আসামী করেন। কিন্তু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আব্দুল আউয়াল মামলা থেকে হারুনকে বাদ দিয়ে দেন। তবে এ জন্য হারুনকে ২০ হাজার টাকা দিতে হয়। পরবর্তীতে এসআই সোলেমান পাটোয়ারী কৌশলে মোহাম্মদ হারুনকে স্থানীয় কিছু বখাটে দিয়ে বেদম পিটুনি খাওয়ায়। এ ঘঠনায় হারুন থানায় মামলা করতে যায়। ওসি মামলা নিতে অস্বীকার করেন। পরে হারুন ওসির বিরুদ্ধে পুলিশের উপর মহলে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ১০ মে ২০১৬ তারিখ লোহাগাড়া থানার একদল পুলিশ সাদা পোষাকে হারুনের বাড়ীতে হারুনকে ধরতে যায়। হারুন পালিয়ে গেলেও তার ছোট ভাই আনোয়ার হেসেনকে জোর করে ধরে নিয়ে আসে। আসার সময় হারুনের ভাবী ও বোনের সাথে পুলিশের বেশ জোর জবরদস্তী হয়। হারুনের ভাই আনোয়ারকে থানায় নিয়ে এসে রাতভর নির্যাতন করে। পরদিন তাকে পুলিশের কাজে বাধা প্রদানের মামলার আসামী করে আদালতে প্রেরন করে। আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ও তার ভাবী মাইমুনা বেগম বাদী হয়ে আদালতে ওসিসহ ৭ পুলিশের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন । পুলিশ এতে আরো ক্ষেপে গিয়ে একে একে হারুনের ভাই বোনসহ হারুনকে ফাসানোর জন্য বিভিন্ন নিরীহ লোককে ফাসিয়ে দিয়েছে। হারুনের ভাই আনোয়ার হোসেন চট্টগ্রাম কলেজের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র। এখন সে পুলিশের কাজে বাধা প্রদানও দুটি ৫৭ ধারায় তথ্য প্রযুক্তি আইনের মামলার আসামী। মামলা হামলা ভয়ে সে পরীক্ষা দিতে পারেনি। হারুনের বড় ভাই মাদরাসা শিক্ষক দেলোয়ার হোসেনকে ২ টি রাজনৈতিক, ২ টি ৫৭ ধারায় ও ২ টি অস্ত্র, ডাকাতি মামলার আসামী করেছে। বর্তমানে সে পলাতক রয়েছে। হারুনের মেঝভাই প্রবাসী মোহাম্মদ হেলালকে অস্ত্র ও ডাকাতি মামলায় ২ টি মামলার আসামী করে। বর্তমানে সে জামিনে রয়েছে। হারুনের মানসিক ভারসাম্যহীন ভাই মোহাম্মদ বেলালকে মাদক ও পুলিশের কাজে বাধা প্রদান মামলার আসামী করা হয়। এছাড়াও হারুনের কলেজ পড়–য়া ছোট বোন হামিদা বেগম ও তার ভাবী মায়মুনা বেগমের বিরুদ্ধে পুলিশের কাজে বাধা প্রদান আইনে মামলা দায়ের করেন। অপরদিকে মোহাম্মদ হারুন অস্ত্র, ডাকাতি,পুলিশের কাজে বাধা, ৫৭ ধারার মামলাসহ ৯ টি মামলার আসামী। এরই ধারাবাহিকতায় বিগত চার মাস আগে ১০ আগষ্ট ২০১৭ তারিখ চকরিয়া থেকে ১২ দিনমজুর হারুনের বাড়ীতে দৈনিক ৫ শত টাকা মজুরিতে ধান লাগানোর কাজে আসে। রাত ১০ টায় পুলিশ তাদের ধাওয়া করে ডাকাত সাজিয়ে অস্ত্র ও চাইনিজ কুড়াল উদ্ধার নাটক সাজিয়ে ডাকাতি ও অস্ত্র মামলায় কোর্টে চালান করে দেয়। উক্ত মামলায় হারুন ও তার ভাইকেও আসামী করা হয়। এদিকে হারুনের ভাবীর দায়ের করা মামলার স্বাক্ষী স্থানীয় পান দোকানদার মোহাম্মদ আমিনকে অস্ত্র ও ডাকাতি মামলায় ফাসিয়ে দেয় পুলিশ। ৩ মাস জেল খেটে সে বর্তমানে জামিনে রয়েছে। এছাড়াও হারুনের বাড়ীতে মোহাম্মদ মিজান নামের চকরিয়ার এক দিনমজুর ছিল। সে জমিতে ট্রাক্টর চালাত। ওসির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার স্বাক্ষী হওয়ায় তাকে অস্ত্র ও ডাকাতির ২ টি মামলার আসামী করা হয়। সর্বশেষ মামলার আরেক স্বাক্ষী সুলাল বড়–য়া নামে এক পঙ্গু লোককে বিগত দুই মাস আগে ৬ অক্টোবর স্থানীয আধুনগর বাজার থেকে ধরে নিয়ে ১ হাজার পিচ ইয়াবা, অস্ত্র ও ডাকাতি মামলার আসামী করে কোর্টে চালান করে দেয় লোহগাাড়া থানা পুলিশ। বর্তমানে সে জেল হাজতে রয়েছে। এদিকে সর্বশেষ হারুনের মানসিক প্রতিবন্ধী ভাই বেলালকে থানায় আটক করে থানা হেফাজতে থাকাবস্থায় আবার মোবাইল কোর্ট বসিয়ে সাজা প্রদান করে। এ ব্যাপারে মোহাম্মদ বেলাল হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন। কোর্ট গত ২৯ জানুয়ারী লোহাগাড়া থানার ওসি মোহাম্মদ শাহজাহান পিপিএমকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। হারুনকে ফাঁসাতে হারুনের পরিবার ও নিরীহ মানুষকে হয়রানির ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে ওসি মোহাম্মদ শাহজাহান মোবাইলে বলেন, মামলা বা আসামী সবই আইনানুগভাবে হয়েছে। যে যে অপরাধ করেছে সে সে মামলার আসামী হয়েছে। মিড়িয়া সুযোগ সুবিধা নেওয়ার জন্য এসব মিথ্যা নিউজ করে যাচ্ছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ