বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
স্টাফ রিপোর্টার, নরসিংদী থেকে :- অবশেষে বিভিন্নমুখী আলোচনা সমালোচনার পর নরসিংদী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মরহুম এড. আসাদোজ্জামানের মৃত্যুবার্ষিকীর পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী লে. কর্ণেল (অব:) নজরুল ইসলাম হিরুসহ জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন ভূঁইয়া, মনোহরদী-বেলাব’র এমপি এড. নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, আড়াই হাজারের এমপি নজরুল ইসলাম বাবু। এর আগে জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক নেতাদের সমন্বয়ে আসাদোজ্জামানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন আড়াই হাজারের এমপি নজরুল ইসলাম বাবু। সাথে ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এড. এস এ হাদী, অধ্যাপক অহিভূষণ চক্রবর্তী, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এস এম কাইয়ূম। এছাড়া নরসিংদী জেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন ভূঁইয়া পৃথকভাবে মরহুম আসাদোজ্জামানের স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
জানা গেছে, নেতৃত্ব নিয়ে জেলা আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরে দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্নমুখী দ্বন্ধ কলহ চলে আসছে। আওয়ামীলীগের জন্মকাল থেকে নরসিংদীর বিভিন্ন প্রশাসনিক নামে আওয়ামীলীগের সভাপতি ছিলেন মরহুম মুসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া। তার নেতৃত্বাধীন সর্বশেষ কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন মরহুম এড. আসাদোজ্জামান। ১৯৯৮ সালে মুসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া মারা যাবার পর জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নির্বাচিত হন মরহুম এড. আসাদোজ্জামান। এরপর থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি জেলা আওয়ামীলীগের কর্ণধার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রায়পুরার এমপি রাজি উদ্দিন আহমেদ রাজু মন্ত্রী হবার পর ডিস্ট্রিক্ট মিনিস্টার হিসেবে তিনি জেলা আওয়ামীলীগের উপর একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। এ নিয়ে মেয়র লোকমানের সাথে তৎকালীন মন্ত্রী রাজি উদ্দিন আহমেদ রাজুর সাথে দ্বন্ধ কলহের সৃষ্টি হয়। এরই জের তথা আওয়ামীলীগের পুরনো অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধে ২০১১ সালে নরসিংদী পৌর মেয়র লোকমান হোসেন নিহত হবার পর আওয়ামীলীগের পুরনো দুই গ্রæপের বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠে। পরে আওয়ামীলীগের সভাপতি থাকাবস্থায়ই এড. আসাদোজ্জামান নরসিংদী জেলা পরিষদের প্রশাসক নিযুক্ত হন। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত আওয়ামীলীগের জেলা কাউন্সিলে মরহুম এড. আসাদোজ্জামানসহ জেলা আওয়ামীলীগের পুরনো নেতাদের বেশীরভাগই বাদ পড়ে যান। এই নিয়ে পুরনো নেতারা আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সাথে যোগাযোগ করেও কোন ফলোদয় ঘটাতে পারেননি। সেই থেকে জেলা আওয়ামীলীগের ভিতরে দুটি গ্রæপ বিরাজমান। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাবস্থায়ই এড. আসাদোজ্জামান ২০১৭ সালের ১ ফেব্রæয়ারী মারা যান। মরহুম এড. আসাদোজ্জামানের জানাজায় সারা জেলা থেকে আওয়ামীলীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক যোগ দেন। এই বিশাল জানাজাকে মরহুম এড. আসাদোজ্জামানের জনপ্রিয়তার মাপকাঠি ধরা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল এড. আসাদোজ্জামানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। অনেকের ধারণা ছিল জেলা আওয়ামীলীগ দিনটি দলীয় মর্যাদায় পালন করবে। কিন্তু জেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে মৃত্যুবার্ষিকীর এই দিনে কোন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়নি। এ অবস্থায় মরহুম এড. আসাদোজ্জামানের সহধর্মিনী পরিবারের পক্ষ থেকে আসাদোজ্জামানের মৃত্যুবার্ষিকীর কর্মসূচী গ্রহণ করেন। পরিবারের পক্ষ থেকে মৃত্যুবার্ষিকীর চিঠি বিলি হবার পর পরই শুরু হয় আলোচনা ও সমালোচনার ঝড়। আওয়ামীলীগের প্রবীণ-নবীন নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতাকর্মী বলেছেন, আজকের জেলা আওয়ামীলীগের পিছনে এড. আসাদুজ্জামানের ব্যাপক অবদান রয়েছে। আসাদুজ্জামান দলকে এতটুকু এগিয়ে না নিয়ে এলে আজকে অনেকেই নেতা হতে পারতেন না। সরকারের গুরুত্বপূর্ন পদেও অধিষ্ঠান পেতেন না। মরা মানুষের সাথে রাজনীতি চলে না। মানুষ মরে গেলে আর ফিরে আসে না। কাজেই মৃত ব্যক্তিকে ভয়ের কিছু নেই। আসাদুজ্জামানের মৃত্যুবার্ষিকী দলীয়ভাবে পালন করা হলে আওয়ামীলীগের ঐক্য আরো সুদৃঢ় হতো। বর্তমান নেতৃত্বের বিরোধী আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা আস্থা ফিরে পেতো। কিন্তু একজন ত্যাগী নেতার মৃত্যু বার্ষিক পালন না করায় আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে একটি খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। এসব আলোচনা সমালোচনার মুখে গতকাল জেলা আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ সবাইকে তাক লাগিয়ে মরহুম আসাদোজ্জামানের পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।