পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা বিলুপ্ত হচ্ছে। এখন করা হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮। নতুন এই আইন নিয়ে মিডিয়াকর্মী তথা অংশিজনেরা নিরাপত্তাহীনতায় শঙ্কিত-উৎকন্ঠিত। নতুন আইনটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্রই বইছে সমালোচনার ঝড়। সংবাদকর্মীরা এই আইনের কয়েকটি ধারা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছেন ফেসবুক-ব্লগ-টুইটারে। টিভির টকশোগুলোতে মানবাধিকারকর্মী-সিনিয়র সাংবাদিক ও বিশিষ্টজনেরা একদিকে আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারায় দায়ের করা সব মামলা রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে প্রত্যাহারের দাবি করছেন; অন্যদিকে নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। তাদের বক্তব্য- ৫৭ ধারা বিলুপ্ত করে ‘নতুন বোতলে পুরনো মদ’ প্রবাদের মতোই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হচ্ছে। এই ‘নিরাপত্তা’ আইন বাস্তবায়ন হলে তা হবে সংবাদকর্মীদের জন্য নিরাপত্তাহীনতার অন্যতম কারণ। উঠে যাবে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর ৩২ ধারায় বলা হয়েছে, ‘সরকারি আধা সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে বেআইনিভাবে প্রবেশ করে তথ্য উপাত্ত ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে গোপনে রেকর্ড করা গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ।’ অপরাধ প্রমাণিত হলে ১৪ বছরের কারাদন্ড, ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড হতে পারে। প্রশ্ন হলো প্রশাসনে দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে লেখালেখি কি নিষিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে?
প্রথমেই বিতর্ক উঠেছে বিলুপ্ত আইসিটি ৫৭ ধারা দায়ের করা মামলাগুলোর কি হবে? আইজিপি ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন ‘৫৭ ধারার পুরনো মামলাগুলো চলবে’। প্রশ্ন হলো আইনের যে ধারা বিলুপ্ত, আইন অস্থিত্বহীন; সে ধারার দায়ের করা মামলা আদালতে অব্যাহত থাকে কেমন করে? আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা কার্যত একটি কালো আইন হিসেবে চিহ্নিত। আইনের ধারাটি বিলুপ্ত করায় সরকার অভিনন্দন পাচ্ছেন; কিন্তুু আইন বিলুপ্তির সঙ্গে ওই আইনের অপব্যবহার করে দায়ের করা মামলাগুলোর বিলুপ্তি ঘটাবে না কেন?
বিতর্কিত আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারা ভয়ঙ্করভাবে ব্যবহৃত হয়েছে মিডিয়াকর্মীদের দমন-পীড়নে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হওয়ায় প্রথম থেকেই নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব), বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, সুশীল সমাজ, বিভিন্ন পেশাজীবী পরিষদ, দেশের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, দেশি-বিদেশেী সংস্থা ৫৭ ধারা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে। তারপরও বিগত ৫ বছর ৫৭ ধারা প্রয়োগ হয়েছে যাচ্ছেতাই ভাবে। এক সময় দেশে আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারায় মামলা করার হিড়িক পড়ে যায়। দেশে মিডিয়াকর্মীদের দমন-পীড়ন হয়ে পড়ে স্বাভাবিক ঘটনা।
সাইবার সিকিউরিটি ট্রাইব্যুনালের তথ্য মতে ২০১৭ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত সারাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে দায়ের করা হয় ৭শ’ ৪০টি মামলা। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ মামলা ৫৭ ধারার। ২০১৩ সালে প্রথম আইসিটি’র ৫৭ ধারায় ৩টি মামলা হয়। ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁগায় ৩৩টি। ২০১৫ সালে এসে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫২। ২০১৬ সালে ৫৭ ধারায় দায়ের করা মামলার সংখ্যা ২শ’ ৩৩টি; ২০১৭ সালের জুলাই পর্যন্ত এই ধারায় মামলা হয় ৩শ’ ১৯টি। ৫৭ ধারায় দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা বৃদ্ধিই প্রমান দেয় কত ভয়ঙ্করভাবে নিবর্তনমূলক আইনটির ব্যবহার হয়েছে। শুধু মামলাই নয়; এ মামলার পর সাংবাদিকদের গ্রেফতার, কারাগারে দেয়া এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতারে আইন শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর অতি উৎসাহ ও বাড়াবাড়ি সংবাদকর্মীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। বিলুপ্ত ৫৭ ধারায় প্রথম মামলা দায়ের করা হয় দৈনিক ইনকিলাবের বিরুদ্ধে। অতপর ঢাকার কয়েকটি মিডিয়ার সম্পাদক-সাংবাদিক এবং মফস্বল পর্যায়ের সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেও ৫৭ ধারায় মামলা হয়। ৫৭ ধারা কার্যকর করার আগ থেকেই মিডিয়াকর্মী, মানবাধিকারকর্মী ও বিশিষ্টজনেরা প্রতিবাদী হয়ে উঠেন। তারা গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরণের নিবর্তনমূলক আইন প্রণয়ন থেকে বিরত থাকার আহবান জানায়। তাদের প্রতিবাদের মুখে আইনটি কার্যকর করা হয়। যাদের বিরুদ্ধে এই ধারায় মামলা করা হয় তাদের গ্রেফতারের চেষ্টায় যা হয় তা সত্যিই দুঃখজনক। ওই ধারাটির প্রতি আইন শৃংখলা বাহিনী এতোই উৎসাহী হন যে থানায় মামলা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতারের ঘটনা ঘটে। কয়েকজন সাংবাদিককে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠালেও তারা জামিনে মুক্ত হন। ইনকিলাবে কর্মরত সাংবাদিকদের গ্রেফতারের চেস্টায় পত্রিকা অফিসে তল্লাসী, ইনকিলাব সম্পাদকের বাসায় তল্লাসী এবং সাংবাদিকদের বাসায় তল্লাসীর নামে নজীরবিহীন ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়। ৫৭ ধারায় দায়ের করা মামলায় পত্রিকা সম্পাদক ও সাংবাদিকদের আদালতে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকা, শত শত মাইল পাড়ি দিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে হাজিরা দেয়ার এক বিভীষিকাময় অবস্থার সৃষ্টি হয়। তাই মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা বাতিলের সিদ্ধান্তের পর সর্বমহলে দাবি উঠেছে রাষ্ট্রের নিজ উদ্যোগেই ৫৭ ধারায় দায়ের করা পুরনো সব মামলা প্রত্যাহার করা হোক। যে আইন বিলুপ্ত সে আইনে পুরনো মামলা চলবে কেন? দেশের বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ, পেশাজীবী, আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী, সংবাদকর্মী এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, বøগ, টুইটার ও মিডিয়ার পাঠক মতামতে এই দাবির স্বপক্ষ্যে ঝড় উঠেছে। বিলুপ্ত ৫৭ ধারায় দায়ের করা মামলাগুলো প্রত্যাহার কার্যত জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়ে গেছে। অন্যদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে নতুন আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে চূড়ান্ত হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য গোপনে ধারণ করে প্রকাশ-প্রচার করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ? দেশের সংবিধান বিশেষজ্ঞ, আইনজীবী, সিনিয়র সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের মতে বিতর্কিত ৫৭ ধারা বিলুপ্ত করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বিতর্কিত সেই ধারার বিধান আরো বিস্তারিতভাবে যুক্ত হয়েছে। এতে মিডিয়ার গলা টিপে ধরাই শুধু নয়; আইন কার্যকর হলে সাধরণ মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতায় অধিকতর নিয়ন্ত্রিত হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ নামে প্রধানমন্ত্রীর নের্তৃত্বে ১১ সদস্যের ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠন করা হবে। ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কেউ প্রোপাগান্ডা করলে ১৪ বছরের জেল, এক কোটি টাকার জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। এ ছাড়াও ২৮ ধারায় বলা হয়েছে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করলে ১০ বছরের জেল ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা; উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ২৯ ধারায় বলা হয়েছে মানহানিকর কোনো তথ্য দিলে ৩ বছরের জেল ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা; উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। কেউ বেআইনিভাবে কারও ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে তাকে ৭ বছরের জেল ও ২৫ লাখ টাকা জরিমানা; উভয় দন্ড দেওয়া হবে। বেআইনিভাবে অন্য সাইটে প্রবেশ করার পর যদি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হন; তবে ১৪ বছরের জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানা- বা উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আবার কেউ বেআইনিভাবে কারও ডিভাইসে প্রবেশ করলে; কারও ডিভাইসে প্রবেশে সহায়তা করলে ৩ বছরের জেল ও ৩ লাখ টাকা জরিমানা; বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ যদি জনগণকে ভয়ভীতি দেখায় বা রাষ্ট্রের ক্ষতি করে তাহলে ১৪ বছরের জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানা; বা উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ২৫ ধারায় বলা হয়, কেউ ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল মাধ্যমে আক্রমণাত্মক ভয়ভীতি দেখালে ৩ বছরের জেল ও ৩ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড। ৩০ ধারায় বলা হয় না জানিয়ে কেউ কোনও ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করে ব্যাংক-বীমায় ই-ট্রানজেকশন করলে ৫ বছরের জেল ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা; বা উভয় দন্ড। ৩১ ধারায় বলা হয়, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ অরাজকতা সৃষ্টি করলে ৭ বছরের জেল ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা; বা উভয় দন্ড। ৫৭ ধারার আইন বাতিলের প্রস্তাবের বিষয়ে ক্যাম্পেইনার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেছেন, নতুন আইনের বিধানগুলো আসলে কতটা নতুন? একটি ধারার বিষয়গুলো এখন ৪টি ধারাতে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। ৫৭ ধারায় যে উপাদান ছিল তা মানুষকে দমনপীড়নমূলক। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-১৮ ধারার ২৫, ২৮, ৩০ এবং ৩১ ধারা কার্যত আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার আরো বর্ধিতরূপে এসেছে। দেশের কয়েকজন আইনজীবীর এ প্রসঙ্গে মতামত জানতে চাইলে তারাও অভিন্ন মত দেন। আর সংবাদকর্মী তথা অংশিজনদের মধ্যে ৫৭ ধারায় দায়ের করা পুরনো মামলা বাতিলের দাবি উঠেছে। একই সঙ্গে তাদের উৎকন্ঠা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ সাংবাদিকদের ‘নিরাপত্তার’ বদলে নতুন করে ‘নিরাপত্তাহীনতা’ ফেলতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।