পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এক কথায় অবিশ্বাস্য! মহাসম্মেলনটি শেষ হওয়ার দুই দিন পরও কেন জানি নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছি না। কিভাবে লাখ লাখ মানুষের একটি মহাসমাবেশ এত শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে শেষ হতে পারে? নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের একবারের জন্যও উঠে দাঁড়াতে হয়নি। একটিবারের জন্যও মুখ ছোঁয়াতে হয়নি বাঁশিতে। লাখ লাখ মানুষের সমাগম অথচ বিন্দুমাত্র কোলাহল বা হট্টগোল নেই। গত ২৭ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের উদ্যোগে আয়োজিত মাদরাসা শিক্ষকদের মহাসম্মেলনে উপস্থিত থাকতে পারার অভিজ্ঞতার কিঞ্চিত অনুভ‚তিটি এতক্ষণ বর্ণনা করছিলাম আমি। যুগ যুগ ধরে অবহেলিত বাংলাদেশের মাদরাসা শিক্ষকদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জোরালো ও অগ্রণী ভ‚মিকা পালনের কারণে বাংলাদেশের লাখ লাখ মাদরাসা শিক্ষকদের কাছে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন এখন তাদের প্রাণের ও আদর্শের সংগঠন।
একসময় বাংলাদেশের মাদরাসা শিক্ষকদের কোনো অধিকার ছিল না। ছিল না কোনো সামাজিক মর্যাদা ও বেতন কাঠামোসহ কোনো আর্থিক সুবিধাদি। গ্রাম-গঞ্জে মাদরাসা শিক্ষকদের দেখা হতো শুধু করুণার দৃষ্টিতেই। অথচ বাংলাদেশের সামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়নে ও ইসলামি মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এইসব মাদরাসা শিক্ষকদের ভ‚মিকা বরাবরই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রশংসনীয়। এই গুরুত্বটি উপলব্ধি করতে পেরেই অবহেলিত মাদরাসা শিক্ষকদের অধিকার আদায়ে ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মাদরাসা শিক্ষকদের সংগঠন জমিয়াতুল মোদার্রেছীন গঠন করে ত্রাণকর্তার ভ‚মিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন আলেম সমাজের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংগঠক প্রাক্তন ধর্মমন্ত্রী ও দৈনিক ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.)। মূলত মরহুম মাওলানা এম এ মান্নানের উদ্যোগে ও তার আন্তরিক প্রচেষ্ঠায়ই বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মাধ্যমে বাংলাদেশের লাখ লাখ মাদরাসা শিক্ষক আজ মর্যাদার আসনে আসীন এবং সচ্ছলতা এসেছে তাদের আর্থিক অবস্থায়ও। যে কারণে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন এবং মরহুম মাওলানা এম এ মান্নানের প্রতি অন্তর থেকেই গভীর টান ও সীমাহীন মমত্ববোধের সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশের লাখ লাখ মাদরাসা শিক্ষকদের, যারই প্রমাণ আবারো মিলল ২৭ জানুয়ারির ঐতিহাসিক মহাসমাবেশে।
দৈনিক ইনকিলাবের প্রায় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এই পত্রিকায় কর্মরত একজন সাংবাদিক হিসেবে এবং মরহুম মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) ও তার পূত্র ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীনের ব্যক্তিগত স্নেহধন্য হওয়ার সুবাদে পত্রিকার পাশাপাশি বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের বিভিন্ন কর্মকান্ডেও পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত থাকার সুযোগ হয়েছে আমার। মাওলানা এম এ মান্নানের ইন্তেকালের পর বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটি সংগঠনের নেতারা সর্বসম্মতভাবে অর্পণ করেন ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীনের ওপর। এই খবরটি জানার সঙ্গে সঙ্গে আমি অনেকটাই ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। ব্যক্তিগতভাবে আমি কোনোভাবেই চাচ্ছিলাম না বাহাউদ্দীন ভাই এত বড় দায়িত্ব গ্রহণ করুক। আমি খুবই সন্দিহান ছিলাম, বাহাউদ্দীন ভাই আদৌ এই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন কি-না, বা এ ব্যাপারে তার আগ্রহ বা উদ্যোগ আদৌ থাকবে কি-না? কিন্তু আমার ধারণাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণ করে দিয়ে মরহুম পিতার আদর্শকে লালন করে তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার লক্ষ্যে সংগঠনের সভাপতি হিসেবে বাহাউদ্দীন ভাই যে অসাধারণ দক্ষতা ও সফলতা দেখিয়ে চলেছেন, তা শুধু দেশের লাখ লাখ মাদরাসা শিক্ষককে অনুপ্রাণিতই করেনি, সংগঠন হিসেবেও বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মর্যাদা ও গুরুত্বও বৃদ্ধি পেয়েছে বহুলাংশে। যে কারণে একজন সফল সংগঠক হিসেবেও বাহাউদ্দীন ভাই এখন বেশ সমাদৃত ও আলোচিত।
স্বতন্ত্র ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দীর্ঘদিনের দাবি আদায়ের সফলতার পেছনে তার অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে যুগ যুগ ধরে। সংগঠন হিসেবে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নমুখী রাজনৈতিক প্রলোভন ও রাজনৈতিক চাপ অব্যাহত থাকার পরও কখনোই এই সংগঠনটি কোনো রাজনৈতিক শক্তির কাছে মাথানত করেনি এবং সম্পূর্ণরুপে অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবেই নিজেদের ধরে রাখতে পেরেছে। ২৭ জানুয়ারির সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসমাবেশ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন বিষয়ে আমার সঙ্গে আলাপ করছিলেন বাহাউদ্দীন ভাই। দু-একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে দায়িত্বও দিয়েছিলেন আমাকে। ২৫ জানুয়ারি রাতে বাহাউদ্দীন ভাই আমাকে বললেন, ‘সোহাগ আমাদের সমাবেশ দারুণভাবে সফল হবে ইনশাআল্লাহ। লাখ লাখ মাদরাসা শিক্ষক ও আলেম-ওলামারা যথাসময়ে চলে আসবেন। তুমি এখন হয়তো বিশ্বাস করতে পারবে না। কিন্তু অনুষ্ঠানের দিন দেখবে কিভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ভরে যায়’। বাহাউদ্দীন ভাইয়ের কথায় সত্যি আমি কিছুটা অবাকই হয়েছিলাম এই ভেবে যে, মাত্র কয়েকদিনের প্রস্তুতিতে কিভাবে ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে লাখ লাখ শিক্ষকের সমাবেশ করা সম্ভব?
অনুষ্ঠানের দিন সকাল ৭টার মধ্যে হাজির হয়ে গেলাম অনুষ্ঠান মঞ্চের কাছে। এত সকালেও দেখলাম চারিদিকের প্রবেশ পথগুলো দিয়ে স্রোতের মতো শুধু মানুষ ঢুকছে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে। সকাল ৯টার মধ্যে পুরো অনুষ্ঠানস্থল ভরে গেল লাখ লাখ শিক্ষকের উপস্থিতিতে। অনুষ্ঠানস্থলে স্থান না হওয়ায় বিশাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারপাশে ও রাস্তায়ও অবস্থান নেন হাজার হাজার মাদরাসা শিক্ষক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী দুজনেই এত লোকের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ দেখে মুগ্ধ হওয়ার পাশাপাশি হতবাকও হয়ে যান কিছুটা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তো তার বক্তব্যে বলেই ফেললেন, ‘আমি ভেবেছিলাম হাজার হাজার শিক্ষক আসবেন এখন দেখছি হাজার নয়, লাখ লাখ শিক্ষক আপনারা উপস্থিত হয়েছেন’। অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান জনস্রোত দেখে অভিভ‚ত হয়ে আমাকে বললেন, ‘সোহাগ, এত মানুষ হবে আমি তো সেটা ভাবতেই পারিনি। বাহাউদ্দীন সাহেব অনেক ভালো একজন সংগঠক’।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এই মহাসমাবেশটি কাছ থেকে দেখাটা আমার সাংবাদিকতা জীবনের এক স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হচ্ছে, সারা বাংলাদেশ থেকে এই যে লাখ লাখ মাদরাসা শিক্ষক সারা রাত জেগে বাসে, লঞ্চে করে সমাবেশে এসেছেন, তারা সকলেই এসেছিলেন নিজ নিজ উদ্যোগে এবং সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত খরচে। সংগঠনের পক্ষ থেকে কাউকেই একটি টাকাও দেয়া হয়নি। কাউকেই এক কাপ চা-ও খাওয়ানো হয়নি। দেয়া হয়নি এক গ্লাস পানিও। অথচ তারপরও শত কষ্ট মোকাবেলা করেও দেশের দূরদূরান্ত থেকে লাখ লাখ মাদরাসা শিক্ষক রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে একই স্থানে বসে ছিলেন শুধু তাদের প্রাণের সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও মমত্ববোধের কারণে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও কারো চোখেমুখে ছিল না কোনো অপ্রাপ্তি ও বিষন্নতার ছাপ। প্রখর সূর্যের তাপ কয়েকটি ঘণ্টা সরাসরি কপালের উপরে এসে পড়েছিল লাখ লাখ শিক্ষকের। শিক্ষামন্ত্রীও এই কষ্টের বিষয়টি মঞ্চে বসে বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন তার পাশে বসা অনুষ্ঠানের সভাপতি বাহাউদ্দীন ভাইকে। অথচ তারপরও কেউ এক চুল নড়েচড়ে বসেননি। বাংলাদেশের সার্বিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থার কথা চিন্তা করলে এ ধরনের লাখ লাখ শিক্ষকের একটি সমাবেশ এত শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হতে পারে সেটা নিজের চোখে দেখার পরও বিশ্বাস করাটা আসলেই অনেক কঠিন। এই মহাসমাবেশ সফল করার জন্য অনেকেই অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তারা সকলেই বিশেষভাবে ধন্যবাদ প্রাপ্য। তার পরও আলাদা করে উল্লেখ করতেই হয় ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া এবং প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের এবং পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের আন্তরিক সহযোগিতা ও সমর্থনের বিষয়টি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।