Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কাল নরসিংদীতে শুরু হচ্ছে বাউলমেলা

| প্রকাশের সময় : ৩০ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে নরসিংদীর ঐতিহাসিক বাউলমেলা। বাউল ধর্মীয় রীতিতে মাঘী পুর্ণিমা তিথিতে যজ্ঞানুষ্ঠানের মাধ্যমে এই মেলার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। নরসিংদীর মেঘনা তীরবর্তী কাউরিয়াপাড়া এলাকায় বিগত পাঁচশত বছর ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এই বাউলমেলা। মেলাটি বাউলের মেলা হলেও আসলে এটি একটি গ্রামীণ মেলা। পাঁচশত বছর আগে নরসিংদীর তৎকালীন অজপাড়া গাঁ কাউরিয়াপাড়া গ্রামে বাউল ঠাঁকুরের আখড়াধাম প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই এই মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এই মেলা প্রথমে ক্ষুদ্রাকৃতির থাকলে বিগত পাঁচশত বছরে পাক-ভারত-বাংলাদেশ উপমহাদেশের একটি বৃহৎ মেলায় পরিণত হয়েছে। মেলার সময় হলেই বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকাসহ উপ-মহাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাউলরা এই মেলায় এসে জমায়েত হতে থাকে। মেলায় তৈরি হতে থাকে বিভিন্ন ধরনের ছোট-বড় অসংখ্য স্টল। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব স্টলে আমদানি করা হয় কাপড়, তৈরি পোশাক, কাঠের তৈরি আসবাবপত্র, কাঠ, লোহা, ও মাটির তৈরি বিভিন্ন তৈজষপত্র, নকশীকাঁথা, খেলাধুলার সামগ্রী, কাঠ, মাটি, প্লাস্টিক ও রাবারনিমির্ত শিশুদের খেলনা, লোহা, পিতল ও কাসার তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র, গ্রামীণ গুড়ের জিলাপি, চিনির জিলাপি, আমৃতি, বালুসাইর, রসগজা, কাঠগজা, কদমা, মুড়ির মোয়া, চিড়ার মোয়া, তিলের মোয়া, তিলের নাড়–, নারকেলের নাড়–, নিমকি, সাধারণ ধানের খই, বিন্নি ধানের খই, মুড়ি, খাস্থা, গুড়ের মুরালি, চিনির মুরালি, মেরাপিঠা, পুলিপিঠা, ফুলপিঠা, হাত নাটাইপিঠা, পাটিসাপটা পিঠাসহ গ্রামীণ জনপদের রকমারি ও মজাদার খাবার। আরো রয়েছে বিভিন্ন ধরনের দানাদার শস্য বিশেষ করে মাষ, মুগ, মটর ও ছোলা, কলই, মসুর ডালসহ বিভিন্ন দানাদার শস্য ও খাবার। এ ছাড়া ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলাসমূহ থেকে আধুনিক ইলেকট্রনিক সামগ্রী, ইলেকট্রিক্যাল জিনিসপত্র, উন্নতমানের শীতের কাপড়, দামি প্যান্ট, শার্ট পায়জামা, পাঞ্জাবি, মেয়েদের হরেক রকম থ্রি পিসসহ বিভিন্ন তৈরি পোশাক ও দামি শাড়িকাপড় নিয়ে বড় বড় ব্যবসায়ীরা প্যাভিলিয়ন সাজিয়ে বসে। বাউলমেলায় বাউলরা মেলায় আসে তাদের ধর্মীয় কারণে। আর বিভিন্ন ধর্ম ও শ্রেণিপেশার মানুষ মেলায় আসে এ সব ঘর গৃহস্থালীর জিনিসপত্র ক্রয় করার জন্য। মেঘনা নদীর তীরে একটু মুক্ত হাওয়ায় ঘোরাফেরা করার জন্য। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ এই মেলায় কেনাকাটা করতে আসে। মেলা পরিদর্শন করতে আসে উচ্চ শ্রেণির লোক তথা ধনার্ঢ্য ব্যক্তিরাও। মেলার তত্বাবধায়ক বাউল ঠাঁকুরের আখড়াধামের সেবায়েত প্রাণেশ কুমার বাউল (ঝন্টু) জানিয়েছেন, ঐতিহাসিক এই মেলাটি বাউলরা আয়োজন করলেও গ্রামীণ মেলা হিসেবে মুসলমান, হিন্দুসহ সকল শ্রেণিপেশার দেশের মানুষ মেলা অনুষ্ঠানে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে থাকে। এ ছাড়া নরসিংদী জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, মেলার সার্বিক নিরাপত্তা বিধান করে থাকে। মেলার আয়োজক ডা. শ্রী মনিন্দ্র চন্দ্র বাউলের পুত্র সাধন চন্দ্র বাউল, মৃদুল বাউল (মিন্টু), শীর্ষেন্দু বাউল (পিন্টু), মলয় বাউল (রিন্টু) জানিয়েছেন, পাঁচশত বছর ধরে নরসিংদীর কাউরিয়াপাড়ার স্থানীয় জনগণসহ নরসিংদীর সকল শ্রেণিপেশার মানুষ মেলা অনুষ্ঠানে বাউলদের সহযোগিতা করে আসছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ