পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের আলেম-ওলামা, মাদরাসা শিক্ষকরা দেশের দেড় কোটি ভোটারের প্রতিনিধিত্ব করে বলে মন্তব্য করেছেন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীন। গতকাল (শনিবার) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাদরাসা শিক্ষকদের ঐতিহাসিক মহাসম্মেলনে তিনি একথা বলেন। তিনি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উপস্থিত আলেম-ওলামা, মাদরাসা শিক্ষক ও শীর্ষ আলেমদের দেখিয়ে বলেন, আজকে ঢাকা শহরে ২ লাখের বেশি মাদরাসা শিক্ষক উপস্থিত হয়েছেন। তারা কেবল একজন মাদরাসা শিক্ষকই নন, এদের মধ্যেই এক লাখ মসজিদের খতিব আছেন। তারা ৮০ লাখ মাদরাসা ছাত্রছাত্রীর প্রতিনিধি, ২০ সহস্রাধিক মাদরাসার অভিভাবক। এসব আলেম-ওলামা এক লাখ মাইন্ড, তিন লাখ মাহফিলে উপস্থিত হয়ে এখানকার এক লাখ বক্তা সমাজ গঠনে বক্তব্য দিয়ে থাকেন। দেশের এসব শীর্ষ আলেমগণ দেড় কোটি ভোটারের প্রতিনিধিত্ব করেন।
এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, এখানে যারা উপস্থিত আছেন এর বাইরে বাংলাদেশ না। এখানে বাংলাদেশের যে ক্ষুদ্র চিত্র এটা প্রকৃত বাংলাদেশ। বাংলাদশের মানুষের মন-মানসিকতা, প্রকৃত গণতান্ত্রিক ভোটাধিকার, ধর্মীয়, সমাজ ও রাজনৈতিক চিন্তা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে এই আলেম সমাজ। মাদরাসার শিক্ষার্থীদের অনেক বেশি মেধাবী উল্লেখ করে ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, মাদরাসার ছাত্রছাত্রীরা মেধায় সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতদের চেয়ে অনেক বেশি যোগ্য। সাম্প্রতিককালের একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ৪৭ শতাংশ মহিলা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান। ৫৩ শতাংশ বুকের দুধ খাওয়ান না। কিন্তু বাংলাদেশের যারা মাদরাসায় পড়াশোনা করেন, কোরআনের হাফেজ হন তারা শতভাগই ছয়মাস মাতৃদুগ্ধ পান করে বড় হচ্ছেন। মেধার দিক থেকে বাংলাদেশের মাদরাসার ছাত্ররা অত্যন্ত যোগ্য। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সমাজের দরিদ্র-অনগ্রসর জায়গা থেকে মাদরাসা ছাত্রদের তুলে এনে দেশের সেরা মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে সমাজের সেবার জন্য ছেড়ে দেন আলেম-ওলামারা।
মাদককে দেশের প্রধানতম সমস্যা হিসেবে আখ্যায়িত করে এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, আমাদের সমাজে এখন ড্রাগ (মাদক) প্রধানতম সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকেই অন্তত তিন হাজার ড্রাগ ব্যবসায়ীর তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বড় শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্র নেতৃবৃন্দ, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, পুলিশের কর্মকর্তারা আছেন। সারাদেশে মাদকের জন্য একটি ভয়াবহ চিত্র। মাদকের কারণে সমাজে নানাবিধ সঙ্কট তৈরি হয়েছে। বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। কালো টাকা ও ড্রাগস মাইন্ড যদি একত্রিত হয়। তারা যদি সমাজকে বিশৃঙ্খল করতে চায়, নিরাপত্তা সঙ্কট সৃষ্টি করতে চায় সেটা সহজ হবে। এই মাদকের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এবং যে উগ্র নতুন প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে তাদের সঠিক পথে আনার জন্য আলেম সমাজ যে কাজ করছে তার কোন বিকল্প নাই।
প্রধানমন্ত্রী মাদরাসা শিক্ষার প্রতি অত্যন্ত দরদী মন্তব্য করে জমিয়াত সভাপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত মাদরাসা শিক্ষা দরদী। উনি মাদরাসা শিক্ষা, ইসলামী শিক্ষাবান্ধব এবং এদেশে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার অনুকূল উনার মনোভাব আছে। শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, দুই লাখের বেশি শিক্ষক এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসেছেন তাদের দাবি একটাই। ইবতেদায়ী স্তর থেকে কামিল পর্যন্ত এমপিওভুক্ত, নন-এমপিওভুক্ত সকল শিক্ষকের চাকরি পর্যায়ক্রমে চাকরি জাতীয়করণ করা। আরেকটি হচ্ছে প্রবীণ শিক্ষকের অনেক অভাব। শিক্ষামন্ত্রী নিজেও স্বীকার করেছেন অভিজ্ঞ ও প্রবীণ শিক্ষকের অনেক অভাব রয়েছে। সমাজকে ঠিক করার জন্য, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ঠিক রাখার জন্য তাদের কোন বিকল্প নাই। এজন্য শিক্ষকদের চাকরির বয়সসীমা কমপক্ষে ৬৫ বছর করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এটি করলে শিক্ষকরা তো উপকৃত হবেই সাথে সাথে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে রাষ্ট্র ও সমাজ।
এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, বাংলাদেশ ৯২ শতাংশ মুসলমানের দেশ। ২০৫০ সালের মধ্যে সার্ক অঞ্চলের মুসলমান জনসংখ্যা হয়ে যাবে ১০০ কোটি। এই ১শ’ কোটি মানুষের নেতৃত্ব আগামী দিনে আমাদের দেশের মাদরাসা শিক্ষকরা দিবে। তিনি বলেন, সারা বিশ্বে যখন অস্থিরতা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কথা হচ্ছে তখন ১৫ কোটি মুসলমান নিয়ে বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল রয়েছে। এটার মূল অবদান এ দেশের আলেম সমাজের। সরকারকে যদি আলেম সমাজ সহযোগিতা না করতো, সরকার স্থিতিশীল অবস্থা রাখতে পারতো না। এই আলেম সমাজ আগামী দিনের শুধু সার্ক নয়, সারাবিশ্বে মুসলমানের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যোগ্য লোক তৈরির ক্ষমতা রাখে বলেও মনে করেন জমিয়াত সভাপতি। তিনি বলেন, সরকার যদি পর্যাপ্ত সহযোগিতা করে। তাহলে আলিয়া মাদরাসার আলেমদের তত্ত¡াবধানে যে দেড় কোটি ভোট রয়েছে এটা তাদের কাছেই যাবে। ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, আমরা আপনাদের ভালো কাজের সাথে অতীতে ছিলাম, এখনো আছি, ভবিষ্যতেও থাকবো। আমরা আশা করি শিক্ষামন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী আমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল আছেন। শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষকদের জন্য দ্রুত ভালো খবর শোনাবেন। শান্তিপূর্ণ সমাজে থাকতে চাইলে, আগামী সুন্দর বাংলাদেশ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রয়োজনে। সবকিছুর প্রয়োজনে সকলের চাকরি জাতীয়করণ করতে হবে। আমরা আশা করি সরকার দ্রুতই এই ঘোষণা দিবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।