Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বিলাইছড়ির দুই মারমা কিশোরীকে নিয়ে রাঙামাটি হাসপাতালে তুলকালাম কাÐ

| প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

রাঙামাটি জেলা সংবাদদাতা : সম্প্রতি বিলাইছড়ি উপজেলায় নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে কথিত দুই কিশোরীকে নিয়ে শুক্রবার দিনভর রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে নানা ঘটনার জন্ম হয়। বিষয়টিকে নিয়ে যারা প্রোপাগান্ডা চালানোর চেষ্টা করছিলেন তাদেরকে পেছনে রেখে সামনে চলে এসেছেন পাহাড়ের রানী ইয়েন ইয়েন। সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া রানী ইয়েন ইয়েন এর অতি আগ্রহের বিষয় নিয়ে পাহাড়ে যেমনিভাবে নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে তেমনিভাবে তার এসকল কর্মকান্ডে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের মাঝে বাড়ছে ক্ষোভ। গত মঙ্গলবার দুপুরে চিকিৎসার জন্যে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয় ফারোয়ার দুই মারমা কিশোরী। তিনদিন চিকিৎসা গ্রহণ শেষে উক্ত দুই কিশোরীর পিতা-মাতা তাদেরকে শুক্রবার নিয়ে যেতে চাইলে নতুন করে বাধে বিপত্তি। প্রকৃত অভিভাবকদের কাছে উক্ত দুইজনকে তুলে দেওয়ার জন্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্নও করেছিলো জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু গত শুক্রবার সকালে পাহাড়ের দুই শীর্ষ স্থানীয় নারী নেত্রী হাসাপাতালে গিয়ে ওই দুই কিশোরীকে দিয়ে তাদের ইচ্ছামতো স্টেটমেন্ট করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা অথবা কথিত ভিকটিমদের নিজেদের জিম্মায় নেওয়ার অপচেষ্টার প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন মহলে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
এদিকে ওই দুই কিশোরীর পরিবারসহ তাদের কমিউনিটির লোকজন নারীর সম্মান নিয়ে রাজনীতি করে নারীদের সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করার ঘৃণ্য অপচেষ্টাকে ন্যাক্কারজনক আখ্যায়িত করে সংশ্লিষ্টদের এই খেলা বন্ধ করার অহŸান জানিয়েছেন। তারা বলেন, ঘটনা যাদের নিয়ে তারা নিজেদের নিরাপদ রাখার চেষ্টা করলেও কল্পিত ধর্ষণের ঘটনা সাজিয়ে তা চাউর করে দুই নিষ্পাপ কিশোরীকে যারা রাজনীতির ক্রীড়ানকে পরিণত করার চেষ্টা করছেন তাদের উদ্দেশ্য আর যাই হোক মানবতার কল্যাণ চিন্তার পরীপন্থী।
রাঙামাটি জেনারেল হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার চিকিৎসার জন্য রাঙামাটি জেনারেল হাসাপাতালে ভর্তি হওয়া বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের অরাছড়ি গ্রামের বাসিন্দা দুই কিশোরীর চিকিৎসা কার্যক্রম শেষ হলে অদ্য ২৬ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখ শুক্রবার সকালে তারা হাসাপাতাল থেকে ছাড়পত্র নেওয়ার জন্য যখন চিকিৎসকদের সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পাদন করছিলেন । ঐসময় হঠাৎ করেই সকালে রাণী ইয়েন ইয়েন, মানবাধিকার কমিশনের সদস্য বাঞ্চিতা চাকমা, নারী নেত্রী অ্যাডভোকেট সুস্মিতা চাকমা, নারী নেত্রী নেলী প্রæ মারমা নেলীসহ আরো কয়েকজন রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে উপস্থিত হন এবং ওই দুই কিশোরীকে তাদের জিম্মায় দেওয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চাপ সৃষ্টি করেন। এসময় ওই দুই কিশোরীর পিতা-মাতা তাদের কন্যাকে নিজেদের জিম্মায় নেওয়ার কথা বলে এবিষয়ে হাসপাতালে কর্তৃপক্ষের সহায়তা কামনা করে। পরে খবর পেয়ে সেখানে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত হয়ে বিষয়টি বেঅইনী বিধায় এ বিষয়ে বাঞ্চিতা চাকমা ও রাণী ইয়েন ইয়েনকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। এসময় তারা পুলিশের সাথে উদ্ধত এবং অশোভন অচরণ করে বলেও জানায় প্রত্যক্ষদর্শিরা। পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের বিনয়ের সাথে জানান, দুই কিশোরীর আইনসম্মত অভিভাবক তথা তাদের পিতা-মাতা সেখানে উপস্থিত থাকায় তাদের অমতে কর্তৃপক্ষ অন্য কাউকে দুই কিশোরীর জিম্মাদারী প্রদান করতে পারে না।
নিজেদের জিম্মায় নিতে ব্যর্থ হয়ে ওই নারী নেত্রীরা এক পর্যায়ে দুই কিশোরীর কাছ থেকে সাদা কাগজে সই করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তবে তারা এ ধরণের সই করা সাদা কাগজ নিতে পেরেছে কিনা সে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এসময় সেখানে কর্তব্যরত গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কাগজে সই নেওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে রানী ইয়েন ইয়েন রাগান্বিত হয়ে এই ধরনের প্রশ্ন করার কোনো অধিকার নেই উল্লেখ করে উক্ত সদস্যকে চুপ থাকতে বলেন। এসময় গোয়েন্দা সদস্যদের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশের সহায়তায় দুই কিশোরী পিতামাতা তাদের নিয়ে হাসপাতালেই অবস্থানের ইচ্ছা ব্যক্ত করে বলেন, তারা হাসপাতালের বাইরে অন্য কারো জিম্মায় যেতে রাজি নন এবং চিকিৎসা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা হাসপাতালেই অবস্থান করবেন। এসময় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনেসহ চারপাশে বিপুল সংখ্যক উপজাতীয় যুবকের উপস্থিতি ছিলো লক্ষ্যণীয়। হাসপাতালের রোগিসহ স্থানীয় এলাকাবাসীর মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় পুলিশের উদ্বর্তন কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে জেলা পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) প্রকাশ কান্তি চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা: সুমনী আক্তারসহ প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা শুক্রবার সন্ধ্যার আগ মুহুর্তে হাসপাতালে যান। এসময় তারা সকলেই সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার, রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় ও রানী ইয়েন ইয়েনকে উক্ত দুই কিশোরীকে তাদের জিম্মায় দিতে না পারার আইনগত দিক তুলে ধরে বিনয়ের সাথে জানান, বিষয়টি যেহেতু উক্ত দুই কিশোরীর পক্ষ থেকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে অভিযোগ জানানো হয়েছে। সেহেতু উক্ত দুই কিশোরীর দায়িত্ব বর্তমানে প্রশাসন তথা সরকারের। তাই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শেষে আইনী ব্যবস্থায় উক্ত দুই কিশোরীকে তাদের প্রকৃত অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। এর বাইরে কোনো কিছু সম্ভব নয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ