বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : উৎপাদনের ভরা মৌসুমেও পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না। দেশী জাতের নতুন পেঁয়াজ এবং ভারত থেকে আমদানীকৃত নতুন পেঁয়াজে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। এরপরও পেঁয়াজের দাম কমছে না। এক কেজি দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭২-৭৫ টাকা কেজি দরে। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা কেজি দরে। মাঘ মাসের মধ্যভাগে পেঁয়াজের এই অগ্নিমূল্যের কথা অতীতে কখনো শোনা যায়নি। উৎপাদন ঘাটতিতে প্রতিবছরই বছরের শেষভাগে পেঁয়াজের দাম বাড়ে। আবার দেশী পেঁয়াজ বাজারে আসলে দাম কমে যায়। কিন্তু এ বছর দেশী-বিদেশ পেঁয়াজে বাজার সয়লাব হয়ে যাবার পরও দাম কমছে না। দেশের কায়েমী স্বার্থবাদী মসলা সিন্ডিকেটের কালো হাতের ইশারায় পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক পর্যায়ে রয়ে গেছে। স্বাধীনতা উত্তরকালের ৪৮ বছর ধরে পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, হলুদসহ বিভিন্ন মসলা নিয়ে একটি সিন্ডিকেট সাধারণ মানুষের পকেট থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অথচ কোন সরকারই এই কায়েমী স্বার্থবাদী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারছে না। যার ফলে বছরের পর বছর ধরে মসলা সিন্ডিকেট সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পেঁয়াজের বাজার থেকে মনোপলি ফায়দা লুটে নিচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। পক্ষান্তরে কোটি কোটি টাকার মালিক হচ্ছে মসলা সিন্ডিকেটের সদস্যরা। বেসরকারী হিসেব মতে, বাংলাদেশের কমবেশী ৩ কোটি ৬৮ হাজার পরিবারের জন্য বছরে ৩০ লক্ষাধিক মেট্রিক টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু দেশে উৎপাদিত হচ্ছে মাত্র ১০ থেকে ১২ লাখ মেট্রিক টন। এক্ষেত্রে দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি রয়েছে ১৮ থেকে ২০ লক্ষ মেট্রিক টন। সরকারী হিসেব অনুযায়ী দেশে মোট পেঁয়াজের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ২২ লাখ মেট্রিক টন। উৎপাদন দেখানো হয়েছে ১৮ লাখ মেট্রিক টন। সরকারী হিসেবে দেশের পেঁয়াজের ঘাটতি ৪ লাখ মেট্রিক টন। পেঁয়াজের এই ঘাটতি পূরণে প্রতি বছর বিদেশ থেকে ৪ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানী করতে হয়। সরকারী হিসেব সঠিক হয়ে থাকলে ঘাটতি শুরু হতো বছরের আড়াই মাস বাকী থাকতে। কিন্তু প্রতিবছরই পেঁয়াজের ঘাটতি শুরু হয় জুন/জুলাই মাস থেকে। বেসরকারী জরিপ অনুযায়ী একটি পরিবারের জন্য প্রতিদিন গড়ে প্রয়োজন আড়াইশ গ্রাম পেঁয়াজ। এটি পেঁয়াজের বহুবিধ ব্যবহারের গড় হিসেব। প্রাপ্ত তথ্যমতে সরকারী হিসেব অনুযায়ী একটি পরিবারের জন্য পেঁয়াজের দৈনিক চাহিদা কমবেশী ১৯০ গ্রাম। অভিজ্ঞদের মতে সরকারী হিসেব সঠিক নয়। বিএনপি’র এক বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, পরিবার প্রতি পেঁয়াজের চাহিদা না কি ১০০ গ্রাম। আর বর্তমান সরকার বলছে পেঁয়াজের চাহিদা পরিবার প্রতি কমবেশী ১৯০ গ্রাম। সরকারী হিসেব এবং বাস্তব চাহিদার মধ্যে ব্যাপক তারতম্য রয়েছে। আর এ সুযোগ প্রতি বছর কাজে লাগিয়ে মসলা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট সাধারণ মানুষের পকেট থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। প্রতি বছর ভারত, চীন, মিয়ানমার, মিশরসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানী করতে হচ্ছে। পেঁয়াজ আমদানীতে বিদেশে চলে যাচ্ছে দেশের কাটি কোটি টাকা। এ বছরও পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে ভারত, চীন, ও মিশরসহ বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানী করা হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার। বর্তমান বাজারে দেশে উৎপাদিত নতুন পেঁয়াজ ব্যাপকভাবে আমদানী হয়েছে। সাথে সাথে ভারত থেকেও আসছে নতুন পেঁয়াজ। বৈধ-অবৈধ পথে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে বাংলাদেশে। মানুষ ভেবেছিল দেশী নতুন পেঁয়াজ আমদানী হলে দাম কমে যাবে। কিন্তু জনগণের আশায় গুড়েবালি। দেশী পেঁয়াজ বাজারে আমদানী হবার পরও ভারত থেকে আমদানী হচ্ছে প্রচুর পেঁয়াজ। এরপরও পেঁয়াজের মূল্য কমছে না। এত পেঁয়াজ আমদানী হবার পরও কেন পেঁয়াজের দাম কমছে না, তার সঠিক কোন উত্তর জানা যাচ্ছে না। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, তারা পাইকারী বাজার থেকে চড়া দামে কিনে কেজি প্রতি আট আনা এক টাকা লাভে বিক্রি করছে। পাইকারী বিক্রেতারা বলছেন, তারা আড়ত থেকে বেশী দামে কিনে নামমাত্র লাভে বিক্রি করছেন। লাভ করছে তারা যারা আড়তে পেঁয়াজ সরবরাহ করছে। উৎপাদনের ভরা মৌসুমে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে নরসিংদীর একজন কৃষিবিদ বলেছেন, ভরা মৌসুমে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির কোন কারণ নেই। বাজারে দেশী জাতের নতুন পেঁয়াজ আমদানী হয়েছে। বিদেশ থেকেও পেঁয়াজ আসছে। বর্তমানে দেশে পেঁয়াজের কোন ঘাটতি নেই। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে রেখেছে কিছু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। তিনি আরো জানান, বিদেশ থেকে দেশে পেঁয়াজ আমদানী করেন খুব স্বল্প সংখ্যক ব্যবসায়ী। পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণও করে তারাই। সংকট এদের হাতেই সৃষ্ট। এদের কালো হাতের ইশারায় পেঁয়াজের বাজার ওঠানামা করে। এদের দমন করার মূল দায়িত্ব সরকারের। সরকারের সদিচ্ছাই পেঁয়াজের মূল্য স্বাভাবিক পর্যায়ে আনতে পারে। সরকার যদি সচেষ্ট হয় তবে এই মূহুর্তেই পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে। সচেতন ক্রেতারা জানিয়েছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানী করে দেশের চাহিদা মেটানো হয়। কয়েক বছর পূর্বে পেঁয়াজের অগ্নিমূল্যের কারণে বিজেপি সরকারের রাজনৈতিক বিপর্যয় হয়েছিল। পেঁয়াজ একটি অত্যাবশ্যকীয় মসলা এবং সব্জী। আগে পেঁয়াজ শুধু মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এখন ঘরে ঘরে সব্জী হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। সরকার যদি পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে সচেষ্ট না হয় তাহলে এর অগ্নিমূল্যের কারণে সরকারের দীর্ঘদিনের অর্জন ¤øান হয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন সচেতন মহল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।