Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০২৪, ২৫ আষাঢ় ১৪৩১, ০২ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

৮ ফেব্রুয়ারি রায়

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার যুক্তিতর্ক শেষ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

২৩৬ কার্যদিবস শুনানির মাধ্যমে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার দুই পক্ষ্যের যুক্তিতর্ক শেষ গয়ে গেছে। এখন এই মামলা রয়েছে রায়ের পর্যায়ে। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারী এই মামলার রায় ঘোষণার দিন ধ্যার্য করা হয়েছে। ১০ বছর আগে দুদকের দায়ের করা এ মামলায় বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ অভিযুক্ত করা হয় ৬ জনকে। মামলার শুনানীতে দুদকের আইনজীবীরা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করলেও অভিযুক্তদের আইনজীবীরা যুক্তিতর্কে স্পষ্ট করে বলেছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় যে অর্থ তসরুপের অভিযোগ করা হয়েছে সে অর্থের কানাকড়িও খরচ হয়নি; বরং ওই অর্থ ব্যাংকে সুদসহ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর অভিযোগের সঙ্গে বেগম জিয়ার সামান্যতম সম্পর্ক নেই। আর মামলার যুক্তিতর্ক চলার সময় ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের নানারকম মন্তব্য এবং একজন প্রতিমন্ত্রী ‘খালেদা জিয়া ১৫ দিনের মধ্যে জেলে যাবেন’ মন্তব্য তোলপাড় সৃষ্টি করে। গতকালও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আশঙ্কা করে প্রশ্ন তুলেছেন এই বলে যে, রায় আগের থেকেই নির্ধারিত কিনা? এদিকে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট নামের আরেকটি মামলার যুক্তিতর্ক ৩০, ৩১ জানুয়ারি ও ১ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত।
বহুল আলোচিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার গতকাল বৃহস্পতিবার উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হয় রাজধানীর বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ আদালতে ৫-এ। অতপর বিচারক আখতারুজ্জামান ৮ ফেব্রুয়ারী রায়ের দিন ধার্য করে। দুদক ও আসামি পক্ষে ১৬ কার্যদিবস ধরে যুক্তিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। ২৩৬ কার্যদিবস শুনানির পর এ মামলা রায়ের পর্যায়ে এল।
ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন সরকারের শাসনামল তথা জরুরি অবস্থার সময়ে দুদকের দায়ের করা এ মামলায় দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হলে বৃহস্পতিবার ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান রায়ের এই দিন ঠিক করে দেন। মামলা দায়েরের ১০ বছর পর এ রায় ঘোষণা করা হচ্ছে। সাবেক কোনো প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগে বিচারের রায় বাংলাদেশে এটাই প্রথম। এর আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত একাধিক দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষিত হয়েছে। তিনি প্রায় ছয় বছর সাজাও খেটেছেন।
খালেদা জিয়ার প্রধান আইনজীবী আবদুর রেজাক খান মামলাটিকে সারবত্তাহীন উল্লেখ করে খালেদা জিয়ার সেকসুর খালাস চেয়েছেন। দুদকের পক্ষে আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল খালেদা জিয়াসহ ছয় আসামির সর্বোচ্চ সাজা দাবি করেছেন। এদিকে খালেদা আরেক আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ম্যাডাম নির্দোষ। তিনি খালাস পাবেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ৩২জন সাক্ষীর মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি। তাই ৪০৯ ও ৫০২ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি (যাবজ্জীবন) দাবি করেছি।
এর আগে খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতর্কে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক স্পিকার জমির উদ্দিন সরকার আদালতে যুক্তি উপস্থাপনা করেন। এসময় তারা মামলাটিকে আইনি ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেন। তারা আরো বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের অপব্যবহার করে এটি দায়ের করে। এই মামলায় এখন পর্যন্ত যা চলছিল তা স্বাভাবিক নয়। এটা আসলে কোনো মামলাই না। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাটি প্রথম দিনেই খারিজ করে দেয়া উচিত ছিল। কারণ এই মামলার আইনি কোনো ভিত্তি নেই। ত্ইা এ মামলায় খালেদা জিয়াকে সম্মানের সহিত খালাস দেবেন বলে আমি আশা করি। এই মামলায় প্রাইমারি এভিডেন্সও নাই, সেকেন্ডারি এভিডেন্সও নাই।
বেগম খালেদা জিয়া বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টা ৪০ মিনিটে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাজিরা দিতে আদালতে পৌঁছান। হাজিরা ঘিরে বাড়তি নিরাপত্তা নেয়া হয়। বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া আদালতের প্রধান ফটকে স্ক্যানার বসিয়ে তল্লাশি করে ভেতরে ঢোকানো হয়।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার অপর দুই আসামি শরফুদ্দিন আহমেদ ও সালিমুল হক কামালের উপস্থিতিতে বিচারিক কার্যক্রম শুরু করেন বিশেষ জজ। এ আগে গত বুধবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আসামি ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদের পক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ করেন তার আইনজীবী আহসানুল্লাহ। পরে একই মামলায় আসামি মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামালের পক্ষে যুক্তিতর্ক শুরু হয়। এরপর আদালত মুলতবি করেন। গতকাল ১১টা ৫ মিনিটে সালিমুল হক কামালের পক্ষে অসমাপ্ত যুক্তিতর্ক শুরু হয়েছে।
এ মামলায় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান আসামি। বিদেশে অবস্থানরত তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মুদ্রা পাচারের দায়ে সাত বছর কারাদন্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। মামলার ছয় আসামির মধ্যে খালেদা জিয়া জামিনে রয়েছেন; মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ রয়েছেন কারাগারে। এ ছাড়াও সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই রয়েছে পলাতক।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে বিদেশ থেকে আসা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় এই মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তদন্ত শেষে ২০০৯ সালের ৫ অগাস্ট তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে অভিযোগপত্র দেন। পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ অভিযোগ গঠন করে খালেদা জিয়াসহ ছয় আসামির বিচার শুরু করেন। আলোচিত এ মামলায় দুদক ও আসামিপক্ষ মোট ১৬ কার্যদিবস যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছে। মোট ২৩৬ কার্যদিবস শুনানির পর মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট যুক্তি উপস্থাপন ৩০ জানুয়ারি ঃ বেগম খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ৩০, ৩১ জানুয়ারি ও ১ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেন দুদকের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। মামলায় খালেদা জিয়া ও তার বড় ছেলে বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩।



 

Show all comments
  • শরীফুল ইসলাম ২৬ জানুয়ারি, ২০১৮, ৫:৩১ এএম says : 0
    দেখা যাক কী রায় আসে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জিয়া

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ