Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

খালেদা জিয়ার রায় কি পূর্বেই নির্ধারিত : মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায় কি পূর্বেই নির্ধারিত এমন প্রশ্ন রেখে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিগত কয়েক দিনে সরকারের মন্ত্রী, জাতীয় পার্টির সদস্য এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সরকারের বিশেষ দূত হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদের বক্তব্যও তাই বলছে। তাদের বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে এই সরকার পূর্বেই রায় লিখে রেখেছে? কারণ তারা বলছেন, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে যেতে হবে। তাতে মনে হচ্ছে দেশনেত্রীর মামলার রায় পূর্বেই নির্ধারিত। যদি তাই হয় তবে এই বিচারের প্রহসনের কোনও প্রয়োজন ছিল না। দেশে যে আইনের শাসন নেই-ন্যায় বিচার সুদুর পরাহত এমন বক্তব্যে সেটাই প্রমানিত হলো।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়ার মামলার রায় পূর্ব নির্ধারিত। এই অবৈধ সরকার আগেই রায় লিখে রেখেছে। বিচার হবে প্রধানমন্ত্রী যা চাইবেন, তাই। কারণ আপনারা দেখেছেন গত মঙ্গলবার লালমনিরহাটে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই আদালতের দেওয়া সাজা মাথায় নিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জেলে যাবেন; আদালতে বিচারাধীন মামলার গতিপ্রকৃতি দেখে সেটাই মনে হচ্ছে। তাঁর এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মির্জা ফখরুল বলেন, এরশাদের এই বক্তব্য আদালত অবমাননার শামিল হলেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে বলপূর্বক দেশ থেকে বহিস্কার ও পদত্যাগে বাধ্য করার মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা শেষবারের মতো নি:শেষ হয়েছে। নি¤œ আদালতের বিচারকদের আচরণবিধি সরকারের ইচ্ছা মতোই হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে। আমরা যারা স্বাধীনতা সংগ্রামে এবং যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত ছিলাম তাদের ভাবতে কষ্ট হয় যে, বাংলাদেশ আজকে এই পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। যে যুদ্ধ ছিল অধিকার আদায়ের যুদ্ধ-যে স্বাধীনতা ছিল রাজনৈতিক স্বাধীনতার সেই যুদ্ধকে অপমানিত করে সেই চেতনাকে ধুুলিস্যাৎ করে আজ একদলীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ ভিন্ন মতের মানুষ আজ সর্বত্রই নি:গৃহীত, নির্যাতিত। মনে হয় যেন নিজ দেশে পরবাসী। যে নেত্রী স্বাধীনতা যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে কারাবন্দী ছিলেন, যাঁর স্বামী মুক্তিযুদ্ধে ঘোষণা দিয়েছিলেন, দীর্ঘ ৯ বছর যিনি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য স্বৈরাচারের সকল নির্যাতন সহ্য করেছেন-তাঁকেই আজকে এই অবৈধ সরকারের হাতে নিজ বাসভূমি থেকে উচ্ছেদ হতে হয়েছে। নির্বাসনে ছোট ছেলে সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে-যাঁর বড় ছেলে ভয়াবহ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে নির্বাসিত জীবন যাপন করচেন-যিনি গণতন্ত্র পুনরায় ফিরিয়ে আনার জন্য জনগণের ভোটের অধিকারের জন্য এখনও নিরন্তর লড়াই করে চলেছেন, তাঁকে এই ফ্যাসিষ্ট সরকার মিথ্যা মামলায় রাজনীতি থেকে দুরে রাখতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্য ২৪টি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ‘দুটি মিথ্যা’ মামলার বিচার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে। সপ্তাহে তিন দিন খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির হওয়ার নজিরবিহীন নির্যাতন, তারিখে তারিখে জামিন দেওয়ার নজিরবিহীন আদেশ সমগ্র বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। নজিরবিহীন দ্রæততার সঙ্গে মামলা শেষ করার প্রচেষ্টা প্রমাণ করে যে এই সরকার খালেদা জিয়াকে ভয় করে বলেই তাঁকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চায়।
সরকারের এসব ‘অপচেষ্টার’ তীব্র নিন্দা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, অবিলম্বে সব মামলা প্রত্যাহার করুন। ক্রসফায়ার, হত্যা, গুম ও খুন বন্ধ করুন। গ্রেফতার বন্ধ করুন।’ তিনি অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে এই ধরনের অবমাননাকর, অমানবিক আচরণ শুধু সামরিক শাসন এবং ফ্যাসিবাদের কথা মনে করিয়ে দেয়।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সারা দেশে নতুন করে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ব্যাপক হারে গ্রেফতার করা হচ্ছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন শুরু করা হয়েছে। একই সঙ্গে ক্রসফায়ার ও গুমের ঘটনা বেড়ে চলেছে। এ বছর নির্বাচনের বছর। সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচনের জন্য যখন সব রাজনৈতিক দলকে সমান সুযোগ ও সমান্তরাল মাঠ তৈরি করার প্রয়োজন বেড়ে চলেছে, তখন এই ধরনের ক্রসফায়ার, গুম, খুন, গ্রেফতার এবং নির্যাতন অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের সব সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে দিচ্ছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অভিযোগ, এই অনৈতিক সরকার পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। ভোটারবিহীন নির্বাচনে স্বঘোষিত সরকার আবারও বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হওয়ার লক্ষ্যে নির্বাচনের পূর্বেই বিরোধী দলকে মাঠ থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার হীন চক্রান্ত করছে।
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সব রাজনৈতিক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। মামলা রেখে নির্বাচন করা যায় না। গ্রামের কর্মীরাও পর্যন্ত মামলার মধ্যে পড়ে আছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের পূর্ব শর্ত বলে কিছু নেই। নির্বাচন করতে হলে সমান্তরাল মাঠ তৈরি করতে হবে। পার্লামেন্ট ভেঙে (ডিসলভ) দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। এগুলো হচ্ছে আমাদের মূলকথা।’
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বিষয়ে জানতে মির্জা ফখরুল বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু প্রমুখ।



 

Show all comments
  • alim ২৭ জানুয়ারি, ২০১৮, ১:৩৭ পিএম says : 0
    “ গুজব ছড়িয়ে জনমত যাচাই ,
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ