Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নাব্য সঙ্কটে অচল ফরিদপুরের সিএন্ডবি ঘাট নৌবন্দর

| প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ফরিদপুর সংবাদদাতা: পদ্মা নদীতে নাব্য সঙ্কটের কারণে ফরিদপুরের একমাত্র ‘সিএন্ডবি ঘাট নৌ বন্দর’টি বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে। বেশ কয়েকমাস ধরে নাব্য সঙ্কটের কারণে বন্দরটিতে ভীড়তে পারছেনা পণ্যবাহী কার্গো ও ট্রলার। এছাড়া বেশকিছু কার্গো পদ্মার ডুবো চরে আটকে আছে। নদী বন্দর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে পণ্যবাহী কার্গো ও বড় ট্রলার নোঙ্গর করায় ব্যবসায়ীরা বিড়ম্বনায় পড়েছেন। ফলে ব্যবসায়ীরা এ বন্দর দিয়ে মালামাল আনা নেবার ক্ষেত্রে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
ফরিদপুরের সিএন্ডবি ঘাটকে ২০১৫ সালে ‘ফরিদপুর নদী বন্দর’ হিসাবে ঘোষনা করা হলেও এর কোন সুফল পাওয়া যায়নি। পদ্মা নদীর সংলগ্ন ফরিদপুরের সদর উপজেলার উত্তরের সীমানা ডিক্রিরচর ইউনিয়নের টেপুরাকান্দি, দক্ষিণের সীমানা আলীয়াবাদ ইউনিয়নের সাদিপুর মৌজা পর্যন্ত নদী বন্দরের সীমানা নির্ধারণ করা হয়। নদীবন্দর ঘোষণা হলেও এখনো শুরু হয়নি উন্নয়নমুলক কাজ। নদী বন্দরকে ঘিরে উন্নয়নমূলক কাজ হাতে না নেয়ায় মুখ থুবরে পড়তে বসছে ঐতিহ্যবাহী এ বন্দরটি। বর্তমানে পদ্মা নদীতে ড্রেজিং না হওয়ায় নাব্য সঙ্কটে পড়েছে ঘাট সংলগ্ন এলাকা। এতে ঘাটে ভিড়তে পারছেনা পণ্যবাহী কার্গো ও বড় বড় ট্রলার। ঘাট থেকে ৫/৬ কিলোমিটার দূরের গদাধর ডাঙ্গী গ্রামের পদ্মানদীতে নোঙ্গর করতে বাধ্য হচ্ছে পন্যবাহী কার্গো গুলো। আটকে থাকা বাহনের নাবিক ও সহযোগীরা জানান, মাঝারি ধরণের পন্যবাহী নৌযান চলাচলের জন্যে কমপক্ষে ৮ ফুট নাব্য থাকার প্রয়োজন হয়। কিন্তু পদ্মানদীর ওই অংশে কোথাও কোথাও নাব্য রয়েছে চারফুটেরও কম। এতে মালবাহী নৌযান নিয়ে ঘাটে পৌছানো যাচ্ছেনা। অনেকে আবার একমাস অধিক সময় ধরে এখানে আটকে আছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়ছেন নৌযান মালিক ও ব্যাবসায়ীরা। এদিকে, এ নৌপথে গম, চাল আনয়নকারী শরিফুল ইসলাম ও সিমেন্ট ব্যবসায়ী হেলালুর রহমান জানান, সময় মত মালামাল না আসায় ও আটকে থাকা নৌযান থেকে ছোট ছোট নৌযান ব্যাবহার করে পন্য খালাস করে ঘাটে আনা ক্ষতির মুখে পড়ছেন তারা। ভারত থেকে কয়লা আমদানীকারক হামিদুল, চাল, সিমেন্ট আমদানীকারক রবিউল হাসান জানান, সিএন্ডবি ঘাট বন্দরটি বন্ধ হবার কারনে তারা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। বন্দর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে কার্গো ভেড়ার কারনে তাদের খরচ বেশী হচ্ছে। তাছাড়া যে স্থানে কার্গো গুলো ভীড়ছে যেখানে নিরাপত্তা নেই। নেই মালপত্র রাখার কোন শেড। ফলে ধান, গম, সিমেন্টসহ নানা পন্য অরক্ষিত অবস্থায় রাখা হচ্ছে। অনেক সময় চুরির ঘটনাও ঘটছে। নদীর পাড় থেকে মূল রাস্তা পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সরু ও কাঁচা সড়ক হওয়ায় ট্রাক দিয়ে মালামাল লোড-আনলোড করতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন পরিবহন চালকেরা। অস্থায়ী ঘাট এবং রাস্তা সংস্কার করতে গিয়ে ঘাট ইজারাদারকে প্রতিনিয়ত গুনতে হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। নদী বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী, ঘাট ইজারাদারের অভিযোগ, সিএন্ডবি ঘাটটি সচল রাখতে পদ্মা নদীর কয়েকটি স্থানে ড্রেজিং করা প্রয়োজন। সম্প্রতি, দুটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু কেটে সরানোর কাজ করা হলেও তা কোন কাজেই আসছেনা। এরমধ্যে একটি ড্রেজার সরিয়ে নেয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বালু কাটার ড্রেজার দিয়ে কোন কাজই করা হচ্ছেনা। বিআইডবিøউটিএ’র কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ড্রেজার দিয়ে বালু না কেটে তেল বিক্রি করছেন এবং ভুয়া বিল উত্তোলন করছেন। স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন ৩/৪ ঘন্টা ড্রেজার মেশিন চালানো হয়। এতদিন বালু কেটে নৌ-চলাচলের রুট তৈরী হবার কথা কিন্তু কিছুই হচ্ছেনা। এদিকে, ড্রেজার দিয়ে বালু কাটার বিষয়ে কোন তদারকি নেই বিএডবিøউটিএ’র। সরেজমিন বালু কাটার স্থানে গিয়ে বিআইডবিøউটিএ এর কোন কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি।
ঘাট ইজারাদার কর্তৃপক্ষ এম এ সালাম লাল জানান, সিএন্ডবি ঘাটকে নদী বন্দরে উন্নীত করা হলেও এটি সচল রাখতে কতৃপক্ষের কোন আগ্রহ নেই। এ বন্দর দিয়ে চট্রগ্রাম, নারায়নগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন বন্দর থেকে সরাসরি পণ্য আসে। ফরিদপুর থেকে প্রতিদিন গরু ও ধান, পাটসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহন করা হয় বিভিন্ন এলাকায় এবং বিভিন্ন বন্দর থেকে সিমেন্ট, বালু, কয়লা, রডসহ অন্তত ৫০ ধরণের পণ্য আনা-নেওয়া করা হয়। তিনি মনে করেন, নাব্য সঙ্কট দূরীভুত না হলে মালামাল পরিবহন একেবারেই কমে যাবে। এতে কমে যাবে রাজস্ব আদায়। বর্তমানে পদ্মা নদীর নাব্যর কারনে নৌ-বন্দরটিতে ভীড়তে পারছেনা কার্গো, বড় ট্রলারসহ ছোট জাহাজ। ঘাট থেকে ৬ কিলোমিটার দুরে পণ্যবাহী কার্গো গুলো ভেড়ার কারনে নানা সমস্যা এবং সঙ্কটের সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া ড্রেজার মেশিন দিয়ে যেভাবে বালু কাটা হচ্ছে তাতে করে কতটুকু কাজ হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। দ্রæত নদী বন্দরটি সচল না করা গেলে ব্যবসায়ীরা প্রচন্ড ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। তাছাড়া ইজারাদারও লোকসানের মুখে পড়বে।
বিআইডবিøউটিএ এর উপ-পরিচালক (সার্ভে) আশফাকুর রহমান জানান, ড্রেজার দিয়ে বালু কেটে নদী বন্দরটি সচল রাখার চেষ্টা চলছে। আর কয়েকদিনের মধ্যেই আশা করা যাচ্ছে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ