Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চিনিকলের বর্জ্যে তুলসীগঙ্গার পানি দূষণ

জয়পুরহাট থেকে মুহাম্মদ আবু মুসা | প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

নদী মাছ পোকা-মাকড়শূন্য, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধজয়পুরহাট চিনিকলের দূষিত বর্জ্যে জেলার আক্কেলপুর সদরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া তুলসীগঙ্গা নদীর পানি কালচে রঙ ধারণ করেছে। ব্যাপক দূষণে নদীর প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকার মাছ ও পোকামাকড় শূন্য হয়ে পড়েছে। পানি থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। নদী পাড়ের মানুষের জীবনে নেমে এসেছে দুঃসহ যন্ত্রণা। ছড়াচ্ছে বিভিন্ন রোগবালাই। 

সরেজমিন দেখা গেছে, বুধবার সকালে সোনামুখী খেয়াঘাট থেকে শুরু হয়ে হলহলিয়া রেলসেতু এলাকা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার তুলসীগঙ্গা নদীর পানি কালচে রঙ ধারণ করেছে। এই পানি পর্যায়ক্রমে যমুনা নদীতে গিয়ে পড়বে। ফলে ওই নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে পড়বে। তুলসীগঙ্গা নদীর দুই ধারের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে কৃষকদের সেচকাজে এ পানি ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। কৃষকরা নদীর দুই ধারের জমিতে সেচকাজে এ পানি আর ব্যবহার করতে পারছেন না। বিকল্প পথে জমিতে সেচ দিচ্ছেন কৃষকরা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বছরের পর বছর ধরে জয়পুরহাট চিনিকলের অপরিশোধিত বর্জ্য তুলসীগঙ্গা নদীতে ফেলা হচ্ছে। নদী বাঁচাতে দুই বছর আগে আক্কেলপুর প্রেসক্লাবের উদ্যোগে উপজেলা সদরে মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এরপরও চিনিকলের অপরিশোধিত বর্জ্য নদীতে ফেলা বন্ধ করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। চিনিকল চালুর পর ফের নদীতে বর্জ্য ফেলছে তারা। জয়পুরহাট চিনিকলের বর্জ্যরে কারণে নদীর পানি দূষিত অন্যদিকে এ পানি থেকে ছড়াচ্ছে রোগবালাই। নদী পাড়ের মানুষের জীবনে নেমে এসেছে দুঃসহ যন্ত্রণা। এ যন্ত্রণা থেকে কতদিন লাগবে রেহাই পেতে জানেন না তারা।
নদী পাড়ের বাসিন্দারা জানান, তারা নদীর পানিতে গোসল করতেন। সেচকাজে এ পানি ব্যবহার করতেন। চিনিকলের বর্জ্যে পানি দূষিত হয়ে পড়েছে। তারা এখন নদীর পানি ব্যবহার করতে পারছেন না। নদীতে উজানের পানি না আসা পর্যন্ত এ দুর্গন্ধ কাটবে না। এখন আমরা পানি কোথায় পাব। আমাদের জমির ফসলের কী হবে।
পৌর সদরের পশ্চিম হাস্তাবশন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, তুলসীগঙ্গা নদীর সোনামুখী খেয়াঘাট থেকে হলহলিয়া রেলসেতু পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার নদীর পানি কালচে হয়ে গেছে। নদীর পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। নদীর মাছ পোকামাকড় মরে গেছে। জেলে সম্প্রদায় নদীতে আর মাছ ধরতে পারছেন না। তাদের সংসার চলবে কীভাবে। খুব শীঘ্রই এ ব্যাপারে সরকারের বা স্থানীয় প্রশাসনের পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
মৎস্যজীবী খয়বর আলী বলেন, জয়পুরহাট চিনিকলের দূষিত বর্জ্যে তুলসীগঙ্গা নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে মাছ মারা গেছে। নদীর ওপর নির্ভরশীল মৎস্যজীবীরা আর নদীতে মাছ পাচ্ছেন না। পরিবার পরিজন নিয়ে তারা কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকতারুজ্জামান বলেন, নদীর পানি দূষিত হয়ে পড়েছে। এই পানি দিয়ে ক্ষেতের সেচকাজ করলে ক্ষেতের ফসলও নষ্ট হয়ে যাবে। কৃষকদের নদীর পানি দিয়ে সেচ কাজ না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আক্কেলপুর পৌরসভার মেয়র গোলাম মাহফুজ চৌধুরী বলেন, চিনিকলের বর্জ্যে তুলসীগঙ্গা নদীর পানি দূষিত হয়েছে। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ