Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লোক দেখানো নয়, স্রষ্টার নির্দেশ মোতাবেক কর্তব্য পালনই হোক আমাদের লক্ষ্য

মোহাম্মদ আবদুল গফুর | প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

গত মঙ্গলবার সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আগামী সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হলে তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। যিনি অতীতে একবার প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন, তিনি নিশ্চয়ই জানেন, প্রধানমন্ত্রীর পদের চাইতে বড় পদ প্রেসিডেন্টের পদ, তবুও তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ নিতে কেন অধিক আগ্রহী এমন সম্ভাব্য প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, তাঁর কাছে প্রেসিডেন্টের পদের চাইতেও প্রধান মন্ত্রীর পদ অধিক গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রধান মন্ত্রীর পদে থেকে তাঁর পক্ষে দলীয় কাজ করা সম্ভব হবে, যা প্রধান মন্ত্রীর পরিবর্তে প্রেসিডেন্টের পদে থাকা অবস্থায় তার পক্ষে সম্ভব হবে না।
তাঁর এসব বক্তব্য যে বাস্তববাদী, সে জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাতে হয়। শুধু এটাই নয়, তাঁকে আরও কিছু কিছু প্রসঙ্গে সত্য ও বাস্তববাদী কথা উচ্চারণের জন্য ধন্যবাদ জানাতে হয়। তাঁর সে ধরনের আরেকটি সাম্প্রতিক উচ্চারণ ছিল : জাতীয় পার্টী তথা জাপাকে মানুষ গৃহ পালিত বিরোধী দল বলে। এই আরেকটা সত্য উচ্চারণের জন্যও জেনারেল এরশাদকে ধন্যবাদ দিতে হয়। সাধারণত : কোন রাজনৈতিক দলের প্রধান ভূমিকা থাকে তাদের নিজস্ব আদর্শ নীতি প্রভৃতির আলোকে সমসাময়িক অন্যান্য দলের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করা অথবা বিরোধিতা করা।
কিন্তু সেরকম কিছু না করে কোন রাজনৈতিক দল যদি শাসক শুধু দলের পৃষ্ঠপোষকতা বা সমর্থন পাবার আশায় তাদের প্রতি শুধু সমর্থন দানের নীতি অনুসরণ করে চলে, সেরকম দলকে সরকারী বা শাসকদলের গৃহ পালিত দল বলা হয়। জেনারেল এরশাদ তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বহু সময় এ ধরনের দু’ মুখো কর্ম পন্থা অনুসরণ করেছেন যে কারণে তাঁক দলকে মানুষ গৃহ পালিত দল বলে অভিহিত করেন। শুধু অন্যরা তাকে গৃহ পালিত দল বলে অভিহিত করেন তাই নয়। এ ব্যাপারটা যে জেনারেল এরশাদ নিজেও জানেন, তা তাঁর নিজের স্বীকৃতির মধ্যদিয়েও প্রকাশ পেয়ে গেছে।
এবার এ প্রসঙ্গে তাঁর কিছু স্বীকৃতির দৃষ্টান্ত দেয়া যাক। তিনি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার আগে ছিলেন সেনাবাহিনীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান হিসাবে। তিনি সামরিক ক্যুর মাধ্যমে যে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেন সে নির্বাচিত সরকারের নেতৃত্ব ছিলো বিএনপিবিএনপি তখন যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিল বলে জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় আসার পর অনেক দিন পর্যন্ত কোন সাংবাদিক সম্মেলন করার সময় বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমানের প্রতি কপট শ্রদ্ধার প্রমাণ। হিসাবে জেনারেল জিয়ার ছবি তাঁর টেবিলে রেখে দিতেন। শুধু তাই নয়, তিনি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করার পর বেশ কিছ ুদিন পর্যন্ত তিনি যে খুব সহজ সরল জীবনধারার বিশ্বাসী ছিলেন তার প্রমাণ হিসাবে তিনি অফিসে যাওয়া-আসার সময় গাড়ীতে নয়, সাইকেলে করে অফিসে যাওয়া-আসা করতেন।
এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার কথা উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না। এক কালের সেনা প্রধান জেনারেল এরশাদ যখন বিএনপি-সমর্থিত একটি নির্বাচিত সরকারকে সামরিক ক্যুর মাধ্যমে উৎখাত করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেন, তখন সারা দুনিয়াকে অবাক করে দিয়ে দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ঐ সামরিক ক্যুর প্রতি অভিনন্দন জানিয়ে বসেন। অথচ এই দল (বিএনপি) ছিল বাস্তব ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রধান প্রতিপক্ষ। বিএনপির নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে জেনারেল এরশাদের পরিচালিত সামরিক ক্যুর মাধ্যমে উৎখাত করার প্রতি আওয়ামী লীগের এ সমর্থন জ্ঞাপন ছিল অকল্পনীয়। নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের তুলনায় আওয়ামী লীগের কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য প্রমাণিত হয়েছিল সামরিক ক্যুয়ের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতকারী একজন জেনারেলের শাসন।
জেনারেল এরশাদ মুখে মুখে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করলেও তিনি প্রকৃত প্রস্তাবে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করতেন না। বরং তিনি যে আওয়ামী লীগের মত ভারত-পন্থী ছিলেন, তাও তিনি অকপটে স্বীকার করেন পরবর্তীকালে ভারত সফরে গিয়ে, যদিও তিনি মুখে মুখে সবসময় নিজেকে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী দাবি করতেন।
মোটের উপর জেনারেল এরশাদ যেখানে যেরকম কথা বললে সুবিধা হয়, সেখানে সেরকম কথা বলেতে অভ্যস্ত। এর ফলেই তার দল বহু নিন্দিত গৃহ পালিত বিরোধী দল হিসাবে ব্যাপক স্বীকৃতি লাভ করেছে। এর বড় প্রমাণ তিনি (জেনারেল এরশাদ) বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রতিনিধি হলেও তার স্ত্রী বেগম রওশন এরশাদ জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী। এর ফলে তাদের স্বামী-স্ত্রী দু’জনের কারোও রাজনৈতিক ভূমিকা স্বচ্ছ হয়ে উঠতে পারছেন না।
যে কোন রাজনৈতিক দলের সম্মানজনক অস্তিত্ব রক্ষার জন্য সেই দলের স্পষ্ট আদর্শ ও নীতি অনুসরণ করা অত্যাবশ্যক। এছাড়া সে দল জনগণের কাছে প্রত্যাশিত সম্মান লাভ করতে পারেনা জনগণও তাদের প্রত্যাশা পূরণে সেই দলের প্রতি নির্ভর করতে পারে না। যে কোনো দলের প্রতি জনগণের কম বেশী কিছু আশা থাকে এটা স্বাভাবিক। কারণ যে দল এই দেশের আলো হাওয়ায় বেড়ে ওঠে, এই দেশের জনগণের কল্যাণের লক্ষ্যে তাদের করণীয় রয়েছে। তারা যদি জনগণের আশানুরূপ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম না হয়, তাহলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে তারা ব্যর্থ হতে বাধ্য।
আমরা দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করে দেশের উন্নতি সাধনের জনগণকে নিয়ে এগিয়ে যেতে পারি আবার আমরা বিভিন্ন দিকে অবহেলা করে জনগণের অবস্থা খারাপ থেকে আরো খারাপও করে তুলতে পারি। একটি স্বাধীন দেশের জন্য গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। আমরা যদি দেশের স্বাধীনতাকে সার্থক ও উন্নত করে তুলতে পারি তবে সেই দিন দূরে নয়, যেদিন আমাদের দেশ প্রকৃতপক্ষেই সোনার বাংলায় পরিণত হবে। কিন্তু তা না করে আমরা যদি ক্ষুদ্র ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থে নিজেদের ভোগ বিলাসে মেতে উঠি তবে জাতির ধ্বংসকে কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। আমরা যদি দেশকে ভালোবাসি এবং দেশ ও জাতির উন্নতির সমৃদ্ধির জন্য মনে প্রাণে কাজ করে চলি তবে আল্লাহর অশেষ মেহের বাণীতে বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
আমাদের বহু স্বপ্নও আমাদের আজও পুরণ হতে বাকী আছে। আমরা যদি দেশকে ভালবাসি, ভালবাসি দেশের মানুষকে, তাহলে আমাদের আজও বহু কাজ বাকী রয়েছে। যদি আমরা আমাদের দেশ ও জনগণের প্রতি আমাদের কর্তব্য ও দায়িত্ব পালনে গুরুত্ব দিয়ে সাধনা করে যাই তাহলে আমরা একদিন অবশ্যই আমাদের স্বপ্নের দেশ সোনার বাংলা হিসাবে গড়ে তুলতে পারবো। আর যদি আমরা আমাদের দেশের প্রতি করণীয় সম্বন্ধে অবহেলা করি তাহলে আমাদের পরবর্তী জেনারেশন কিছুতেই আমাদের ক্ষমা করবে না। শুধু জনগণই নয়, এই সুন্দর দেশটি যিনি আমাদের দিয়েছেন, সেই বিশ্ব¯্রষ্টাও আমাদের ক্ষমা করবেন না।
কারণ আল্লাহর দেয়া নেয়ামতকে আমরা যারা অবহেলা অপব্যবহার করি, তারা আল্লাহর কাছে আমাদের অপরাধের ক্ষমা পাবনা। মনে রাখতে হবে দুনিয়ার সকল মানুষের মঙ্গল করার জন্য কাজ করে যাওয়াই আল্লাহর নির্দেশ। আমরা যদি দুনিয়া ও দুনিয়ার সকল মানুষের জন্য আমাদের কর্তব্য যথাযথ পালন না করি তাহলে এজন্য আমরা আল্লাহর ক্ষমা পাব না। যেহেতু আমরা আল্লাহর সৃষ্টি তার সৃষ্ট সকল মানুষের প্রতি আমাদের কর্তব্য রয়েছে। সেসব অবহেলা কর যদি আমার শুধু নিজেদের সংকীর্ণ স্বার্থে নিজেদের নিয়োজিত করি, তাহলে আল্লাহ আমাদের কিছুতেই ক্ষমা করবেনা। আমাদের দেশের সকল মানুষ একে অন্যের কল্যাণের জন্য যদি কাজ করি, সর্ব শক্তিমান আল্লাহতায়ালা যেভাবে তাঁর এবাদত এবং সকল মানুষের যেভাবে পরাহিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা যদি সেভাবে কাজ করে চলি তাহলে ও আমরা আল্লাহর রহমত লাভে আশা ধন্য হবো। সেই লক্ষ্যে পথ চলাই হোক আমাদের স্বপ্ন ও সাধনা।



 

Show all comments
  • alim ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১১:০৪ এএম says : 0
    “ ধন্যবাদ সুন্দর লিখার জন্য ৷পেশাদারী চোর না শুনে ধর্মের কাহিনী ৷”
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ