Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে নজর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ২৪ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ব্যবসায়ীদের ভ্যাট আইন বোঝাতে পারেনি সরকার : একনেকে ৬ হাজার ২২৮ কোটি টাকার ১৪ প্রকল্প অনুমোদন
বেশ কিছুদিন ধরেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পেঁয়াজ নিয়ে আলোচনা চলছে। এ মসলাপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার কারণেই ভোক্তা, ব্যবসায়ীসহ সকল পর্যায়ে এ আলোচনা। পেঁয়াজের দামের ঝাঁজে এখনো অস্থির বাজার। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। পেঁয়াজের ঝাঁজে অসহায় ভোক্তা। বিব্রত সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কঠোর নির্দেশনার পরও দাম এখনো ভোক্তাদের নাগালের বাইরে। তবে এবার উৎপাদন বাড়িয়ে পেঁয়াজের দাম সহনীয় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) বাংলাদেশে মসলা জাতীয় ফসলের উন্নয়ন ও জাত উদ্ভাবনে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ৯৪ কোটি টাকা। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে এই টাকা যোগান দেওয়া হবে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিট (বিএআরআই) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। সারা দেশের ১৯৪টি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি নিয়ে একনেক সভায় কথা বলেন। এ সময় তিনি কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশনা দেন। জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজ চাষ সাধারণত উঁচু জায়গায় হয়। দেশে উঁচু জায়গা অপেক্ষাকৃত কম। দেশের সব জেলায় উচুঁ জায়গা খুজে সেখানে পেঁয়াজের চাষ বাড়ানো হবে বলে প্রধানমন্ত্রীকে জানান কৃষিমন্ত্রী।
একনেক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বাংলাদেশে মসলা জাতীয় ফসলের গবেষণা জোরদারকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদন দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী পেঁয়াজের চাষ বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে যেসব জেলায় পেঁয়াজ বেশি উৎপাদন হয়, সেসব জেলায় কৃষকদের প্রনোদনা, ঋণ সহায়তাসহ বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার কথা জানান।
উদাহরণ দিতে গিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, কুমিল্লাতে যেমন আলুর বীজ বেশি চাষ হয়। সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
একনেক সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবসহ ১৪ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ২২৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৫ হাজার ৪২১ কোটি টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৭৪১ কোটি এবং বাস্তবায়নকারি সংস্থা থেকে ৬৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ভ্যাট আইন নিয়ে কথা বলেন পরিকল্পনামন্ত্রী। এ সময় তিনি বলেন, ভ্যাট আইনটি সবার মতামত নিয়ে করা হয়েছিল। কিন্তু আমরা ব্যবসায়ীদের বোঝাতে পারেনি। তাদেরকে ব্যাখ্যা দিতে পারেনি সঠিকভাবে। কেন সবাইকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হবে। স্বল্প আয়ের মানুষ কেন ভ্যাট দেবে। এ সব বিষয় আমরা ব্যবসায়ীদের বোঝাতে পারেনি। মন্ত্রী বলেন, আইনটি নিয়ে ব্যবসায়ীদের ছাড় দিতে হবে। আইন নিয়ে নতুন করে সংযোজন বিয়োজন করে তারপর চূড়ান্ত হবে। সবার সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে তবে আইনটি চূড়ান্ত হবে। মন্ত্রী বলেন, ভ্যাট আইন কার্যকর না হওয়ায় অনলাইনে ভ্যাট আদায় প্রক্রিয়া পিছিয়ে গেছে। এ কারণে এ সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন করতে হয়েছে। তিনি বলেন, ১৫ শতাংশ ভ্যাট সাইকে দিতে হবে বিষয়টি তেমন নয়। সবাইকে ভ্যাটের বোঝা বইতে হবে না। যাদের সামর্থ্য আছে শুধু তারাই ভ্যাট দেবেন। আগামী বাজেটে করের ক্ষেত্রে সংস্কার আনা হচ্ছে। অপর একটি প্রকল্পের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, সারাবিশ্বে ১০৯ প্রকার মসলা চাষ করা হলেও বাংলাদেশে প্রায় ৪৪টি মসলা ব্যবহƒত হয়। এর মধ্যে মধ্যে চাষ করা হয় মাত্র ৩৪টি। এজন্য মসলার চাষ বাড়াতে গবেষণা বাড়ানো হবে।
গতকালের একনেক সভায় রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাংলাদেশ মিয়ামানমার সীমান্তে বাঁধ পুনঃনির্মাণ করে উঁচু করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ষাটের দশকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও লবণাক্ত পানি রোধে নির্মাণ করা বাঁধ নতুন করে সংস্কার করতে চায় সরকার। এসব বাঁধ উঁচু করলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানো সম্ভব বলে মনে করে সরকারের নীতিনির্ধারকরা। আর তাই ১৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ‘কক্সবাজার জেলার বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত নিরাপত্তা উন্নত করার জন্য উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় নাফ নদী বরাবর পোল্ডার পুনর্বাসন’ শিরোনামের প্রকল্পের কাজ ২০২০ সালে শেষ করার কথা রয়েছে।
এই প্রকল্পের আওতায় ৬১ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পুনর্বাসন ও পুননির্মাণ করা হবে। পানি নিষ্কাশন অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে আটটি। এবং পানি নিষ্কাশন অবকাঠামো সংস্কার করা হবে ৪৬টি। পাউবোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নাফ নদের ডান তীরে ৬৭/এ, ৬৭, ৬৭/বি এবং ৬৮ নম্বর পোল্ডারের সংস্কার করা হলে একদিকে যেমন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাবে। অন্যদিকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ব্যবহার করে আসছে বলে জানিয়েছেন পাউবোর কর্মকর্তারা।
একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, এক হাজার ৫২২ কোটি টাকা ব্যয়ে কুমিল্লা অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন, এক হাজার ১৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন, ১০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে মরজাল-বেলাব সড়ক ও পোড়াদিয়া-বেলাব জেলা মহাসড়ক দুটি যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরন, ১০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বগুড়া শহর থেকে মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ, ৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে গোবরাকুড়া-কড়ইতলী স্থল বন্দর উন্নয়ন, ৬৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শূল্ক আইন ২০১২ বাস্তবায়ন (ভ্যাট অনলাইন) (সংশোধিত) প্রকল্প, ৩২০ কোটি টাকা ব্যয়ে লার্নিং এন্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পেঁয়াজের

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ