পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশ-মিয়ানমার দু’দেশের চুক্তি মত গতকাল মঙ্গলবার থেকে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়া কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। বিভিন্ন কারণে পিছিয়ে গেছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যক্রম। ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার বোঝা নিয়ে বাংলাদেশ বিশেষ করে কক্সবাজারের মানুষ বন্ডবিধ চাপে রয়েছে। গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বক্তব্যে আরো অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে।
এদিকে জানা গেছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া যাতে ব্যর্থ হয় সেজন্য বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাসরত প্রত্যাবাসন বিরোধী একটি চক্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। চক্রটি রোহিঙ্গারা যাতে নিজ দেশে ফেরত না যায় সেজন্য ক্যাম্পে বিভিন্ন অপকর্ম, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে অশান্ত করে তুলছে ক্যাম্পগুলো। এর সাথে কিছু এনজিও তাদের ইন্ধন দিয়ে যাচ্ছে বলেও বিভিন্ন সূত্র থেকে খবর পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, প্রত্যাবাসন ঠেকাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো অশান্ত করে তুলতে কতিপয় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী খুনাখুনীতে লিপ্ত হয়েছে। গতকালও কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পে ছুরিবিদ্ধ অবস্থায় এক রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তার নাম মোঃ ইউসুফ আলী (৫৫)। তিনি ক্যাম্পের বি-১০ নং বøকে থাকতেন বলে জানা গেছে। গত সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি-১০ নং বøকের মসজিদের পাশ থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
উখিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের জানান, সংবাদ পেয়ে গত সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ছুরিবিদ্ধ অবস্থায় রোহিঙ্গা ইউসুফ আলীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পূর্বশত্রæতার জেরে এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে তিনি জানান। পাশের মসজিদ থেকে আসার সময় রোহিঙ্গারাই ছুরিকাঘাত করে তাকে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় কে বা কারা জড়িত তা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে গত শুক্রবার রাত ১০টার দিকে গুলি করে খুন করা হয়েছে রোহিঙ্গা নেতা মো. ইউসুফকে (৪৬)। ১৩ জানুয়ারি কুতুপালং মধুরছড়া লম্বাশিয়া ক্যাম্পের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ও মিয়ানমারে ফেরত যাওয়া না যাওয়ার বিষয়ে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে আবুল কাশেমের ছেলে মমতাজ মিয়া (৩৫) ঘটনাস্থলে নিহত হন। একের পর এক হত্যাকান্ডের ঘটনায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সাধারণ রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
পর্যবেক্ষকদের মতে প্রত্যাবাসন ঠেকানোর অংশ হিসেবে গত শুক্রবার রাত ১০টার দিকে গুলি করে খুন করা হয়েছে রোহিঙ্গা নেতা মো. ইউসুফকে (৪৬)। এ সময় বালুখালী ক্যাম্পের হেড মাঝি আরিফুল্লাহকে লক্ষ্য করে গুলি করলে ওই গুলি লক্ষভ্রষ্ট হয়ে তার বড় ভাই মৌলভী আজিমুল্লাহর শরীরে বিদ্ধ হয়। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে মোহাম্মদ আলম নামের এক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে আটক করেছে। তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থাইংখালী তাজনিমারখোলা ডি-বøক এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সেখানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। একাধিক রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বললে তাদেরকে ভীত সশস্ত্র দেখা যায়।
এ ব্যাপারে ক্যাম্পের হেড মাঝি রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, এ ক্যাম্পে ৮০ জন মাঝির মাধ্যমে ৬৭ হাজার রোহিঙ্গার নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। ইউসুফ হত্যাকান্ডের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। কিছু বলতে চাননি। অনেকক্ষণ পর তিনি জানান, নিহত ইউসুফ মিয়ানমারের মংডু বলি বাজার ধুনহাই গ্রামের Ðক্কাট্টা (চেয়ারম্যান) ছিলেন। তিনি মিয়ানমারে ফিরে যেতে প্রত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করায় কতিপয় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী তাকে গুলি করে হত্যা করেছে। রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ আলী আরো জানান, প্রতিপক্ষ শুক্রবার রাত ১০টার দিকে বাড়ি থেকে বের হওয়া মাত্রই ইউসুফকে গুলি করে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
কুতুপালং রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্পের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ জানান, মিয়ানমারের সামরিক জান্তা, পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে সখ্য রয়েছে এমন শত শত দালালচক্র (বর্মী এজেন্ট) ক্যাম্পে ঢুকে পড়েছে। ওই দালালচক্র মিয়ানমারের পক্ষ নিয়ে প্রত্যাবাসন বিরোধী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের সহযোগিতা করছে ক্যাম্পে কর্মরত কিছু এনজিও। তিনি আরো জানান, মিয়ানমার প্রশাসনের অনুগত ওই চক্রটি বিভিন্ন অনৈতিক কাজের মাধ্যমে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বিনষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি ওইসব দালালদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের দাবি জানান।
১৯৯১ সাল থেকে কুতুপালং ক্যাম্পে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন জাফর আলম (৫৫)। ওই রোহিঙ্গা নেতা সাংবাদিকদের জানান, আরসা’র ধোয়া তুলে মিয়ানমার সরকারের দালালচক্র বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। নিরীহ রোহিঙ্গাদের মতো তারাও বানিয়ে বানিয়ে নির্যাতনের ঘটনা প্রচার করছে এবং প্রত্যাবাসনবিরোধী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। ক্যাম্পের পরিবেশ যাতে বিনষ্ট হয় এবং প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া যাতে থমকে যায় সেজন্য মিয়ানমারের ওই দালাল চক্রটি এখন ক্যাম্পে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে তিনি দাবি করেন। তিনি আরো বলেন, ওই চক্রের সদস্যদের নাম প্রকাশ করলে তাকে হত্যা করা হবে। নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবে রোহিঙ্গারা ওই চক্রের নাম পরিচয় প্রকাশ করছে না।
কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জ রেজাউল করিম বলেন, প্রত্যাবাসন বিরোধী কিছু রোহিঙ্গা তাত্ক্ষণিকভাবে জড়ো হয়ে নিমিশেই উধাও হয়ে যায়। তবে তিনি এ ব্যাপারে খোঁজ খবর রাখছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
এর আগে গত ১৩ জানুয়ারি কুতুপালং মধুরছড়া লম্বাশিয়া ক্যাম্পের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ও মিয়ানমারে ফেরত যাওয়া না যাওয়ার বিষয়ে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে আবুল কাশেমের ছেলে মমতাজ মিয়া (৩৫) ঘটনাস্থলে নিহত হন। এ ঘটনায় রোহিঙ্গা মৌলভী আরিফুল্লাহকে পুলিশ আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করে।
উখিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ আবুল খায়ের জানান, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে বালুখালী ময়নার ঘোনা এলাকা থেকে বিদেশি পিস্তলসহ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী আলমকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় হত্যাকান্ড ও অস্ত্র আইনে ২টি মামলা রুজু করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
দৃ’দিন আগে ঢাকায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এনজিওদের তৎপরতা সীমিত করণ ও তাদের দুর্নীতির তদন্ত দাবি করে এক সেমিনারে বক্তারা বলেন, আন্তর্জাতিক দু’একটি সংস্থা ও কিছু এনজিও রোহিঙ্গা আনা ও তাদের বাংলাদেশে দীর্ঘস্থায়ী করার ব্যাপারে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানান তারা।
এমনি উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াং হি লির নেতৃত্বে বিশেষ একটি প্রতিনিধি দল টেকনাফের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্প ঘুরে রোহিঙ্গাদের জীবন-যাত্রার মানবিক দিক পরিদর্শন করেছেন।
শনিবার সকাল ১০টার দিকে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াং হি লির নেতৃত্বে অপর চার সদস্যসহ একটি প্রতিনিধি দল উপজেলার নেচারপার্ক সংলগ্ন রোহিঙ্গা বস্তি পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সাথে কুশল বিনিময় করে তাদের জীবন-যাত্রা ও মানবিক পরিস্থিতির ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেন এবং মিয়ানমারে তাদের উপর ডে অমানবিক নির্যাতন হয়েছে তারও বর্ণনা শুনেন তাদের মূখে। এসময় একদল রোহিঙ্গা ব্যানার নিয়ে স্বদেশে ফেরত যেতে ৫ দফা দাবি পেশ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।