Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রামগড়ে ফসলি জমিতে ইটভাটা ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ, নীরব প্রশাসন

| প্রকাশের সময় : ২৪ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

রতন বৈষ্ণব ত্রিপুরা, রামগড় (খাগড়াছড়ি) থেকে : খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা রামগড়ে ফসলি জমি ধ্বংস করে গড়ে উঠছে ইটভাটা। পরিবেশকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলে এসব ইটের ভাটায় জ্বালানো হচ্ছে কাঠ। উজাড় হচ্ছে পাহাড়ী বনাঞ্চলের মূল্যবান গাছ। পরিবেশ বিধ্বংসী এসব কর্মকান্ড ঠেকানোর যেন কেউ নেই। রামগড়ের যত্রতত্র গড়ে উঠা ইট ভাটায় অবাধে কাঠ পোড়ানোর ফলে ধ্বংস হচ্ছে বনজ সম্পদ। পাহাড়-ফসলি জমি কাটার উপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানছেনা ইট ভাটার মালিকরা। রামগড় পৌরসভা এলাকাসহ কয়েকটি গ্রামের ফসলি জমিতে নতুন করে গড়ে তোলা হচ্ছে ইটভাটা। বনভূমি ধ্বংস করে দিয়ে প্রতিনিয়ত এই কাঠ পোড়ানোর মহাউৎসব চলছে নির্বিঘেœ। বিষয়টি জানার পর ও স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ বিভাগ রহস্যজনক কারণে নীরব ভূমিকা পালন করছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সম্পূর্ণ অবৈধভাবে লোকালয়ে ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। প্রশাসনকে বারবার এই বিষয়ে অবগত করলে ও কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন পাহাড়-ফসলি জমি কেটে ৮-১০জন শ্রমিক প্রকাশ্য দিবালোকে ট্রাক্টরযোগে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এসব ইটের ভাটায় জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে পাহাড়ের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের শিশু গাছপালাও। কম উচ্চতার টিনের ছিমনী ব্যবহার করা হচ্ছে। ধোঁয়ায় আশপাশের পরিবেশ মারাত্মক দুষিত হচ্ছে এতকিছুর পরও প্রশাসন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ কিংবা বনবিভাগ কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। জানা যায়, রামগড় উপজেলার ইট ভাটাগুলো অধিকাংশ মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পায়না।
এদিকে রামগড় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রভাবশালীরা এ অবৈধ ইটভাটাগুলো সচল রেখেছে। এ সকল ইটভাটায় দিন দুপুরে আগুন দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির শিশু কাঠ পোড়ালেও দেখার কেউ নেই। তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, কয়লা দিয়ে এসব ইটভাটা গুলোতে ইট পোড়ানোর কথা থাকলেও খরচ সাশ্রয়ের জন্য সরকারী নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নির্ভয়ে জ্বালিয়ে যাচ্ছে এসব শিশু কাঠ। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা ও তাদের ম্যানেজ করে কাঠ পোড়ানোর কথা স্বীকার করেন রামগড় ইটভাটার সাথে সংশ্লিষ্ট একব্যক্তি। প্রত্যেকটি উপজেলায় পাহাড়ী আবাদ যোগ্য ভূমিসহ পাহাড়ের মাটি কেটে ইট তৈরীর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে কমছে চাষ যোগ্য জমির পরিমান। অন্যদিকে ইটভাটা লোকালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দুরে নির্মাণ, ৪০ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন ছিমনী নির্মাণ ইটের সাইজ ঠিক রাখাসহ বেশকিছু নিয়ম থাকলে তা মানছে না কেউ। অনেকে গোপনে আবার অনেকে যততত্র ভাবে কাঠ মজুদ রেখে চালিয়ে যাচ্ছে এ অবৈধ কার্যক্রম।
এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই পার্বত্য বনভুমি ও পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি জানার পরও কিভাবে উন্মুক্ত কায়দায় এ অনিয়ম চলছে তা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। রামগড়ে আগে থেকে ৬টি ইটভাটা ছিল। নতুন যোগ হয়েছে আরও দু’টি। কোনটিরই লাইসেন্স নেই। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আল-মামুন মিয়া বলেন, ইটভাটার বেআইনি কাজ বন্ধে প্রশাসন সবসময় তৎপর। আইন অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন ইটভাটা তৈরীর অনুমতি নেই। যে কয়টি পুরনো আছে সেগুলোকে বিধি মেনে চলতে বলা হয়েছে। আর এ সুযোগের অপব্যবহার করা হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। গাছ পোড়ানো, ফসলি জমির মাটি ব্যবহার এবং সরকারী জায়গায় ইট ভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও তিনি জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ