Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘চরম অবহেলা ছিল পুলিশের’

জনি নিখোঁজ নিয়ে পিবিআই প্রতিবেদন

| প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) অনুসন্ধান প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট সাতক্ষীরার কুখরালীর শেখ মোখলেছুর রহমান জনির ‘নিখোঁজের’ ঘটনায় চরম অবহেলা ছিল পুলিশের। থানায় মামলা বা জিডি না নেয়ায় জেলার সদর থানার পুলিশ দায়িত্ব পালনে অদক্ষতা ও অবহেলা দেখিয়েছে। পিবিআই বলছে, সাতক্ষীরার কুখরালীর শেখ মোখলেছুর রহমান জনি নিখোঁজের ঘটনায় পুলিশ যে অবহেলা দেখিয়েছে, এটা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য মোটেই কাম্য নয়।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস বলেন, পিবিআইয়ের প্রতিবেদনটি দাখিল করা হয়েছে। আদালত আজ মঙ্গলবার শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাতক্ষীরা জেলার সদর থানা পুলিশের তৎকালীন ওসি মো. এমদাদুল হক শেখ ও এসআই হিমেল এবং পরবর্তীকালে ওসি ফিরোজ হোসেন মোল্লাসহ অন্যরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করায় নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা উদঘাটিত হয়নি। উল্টো পুলিশের ভাবমর্যাদা মারাত্মকভাবে ক্ষুণœ হয়েছে। তাই সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে পিবিআই।
এর আগে গত রোববার পিবিআইয়ের প্রতিবেদনটি বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে দাখিল করা হয়েছে। জনি নিখোঁজের ঘটনা পিবিআইয়ের মাধ্যমে তদন্ত করতে গত বছরের ১৬ জুলাই নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
পিবিআইয়ের প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে দায় এড়াতে পারে না। কেননা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে গ্রেফতার করলে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর কর্তব্য যথাসময়ে তাকে আদালতে উপস্থাপন করা। আর কোনো অপরাধীচক্র করলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব ভিকটিম ও অপরাধীচক্র উভয়কে খুঁজে বের করে আদালতে উপস্থাপন করা। অন্যথায় এ ধরনের অভিযোগ মিথ্যা কিংবা বানোয়াট হলে তা প্রমাণ করার দায়িত্বও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর বর্তায়।
পিবিআই বলছে, জনির নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জড়িত, নাকি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে কোনো অপরাধীচক্র এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তা প্রমাণ করা যায়নি। তা ছাড়া তৎকালীন ওসি মো. এমদাদুল হক শেখের পরবর্তী ওসি ফিরোজ হোসেন মোল্লা তার সময়কালে অভিযোগের বিষয়ে কোনো আইনি পদক্ষেপ না নেয়ায় জনির প্রকৃত অবস্থান জানার একটি সুযোগ নষ্ট হয়েছে।
প্রতিবেদনের পর্যালোচনায় বলা হয়, থানায় রক্ষিত সকল রেজিস্ট্রার পর্যালোচনাকালেও থানা হেফাজতে ভিকটিমকে রাখার বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফলে ওই এসআই হিমেল জনিকে গ্রেফতারপূর্বক থানা হেফাজতে রাখার বিষয়টি অস্পষ্ট। কোনো নিরপেক্ষ সাক্ষী বলেনি জনিকে থানায় ধরে আনা হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, জনির খোঁজ না পেয়ে তার স্ত্রী জেসমিন নাহার গত ২ মার্চ হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ৬ মার্চ হাইকোর্ট রুল জারির পাশাপাশি নিখোঁজ ব্যক্তির বিষয়ে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারকে ব্যাখ্যা জানাতে নির্দেশ দেন। এরপর প্রতিবেদন জমা পড়ে। এতে বলা হয়, তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। আদালত বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দেন। নির্দেশনা অনুসারে সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম হাবিবুল্লাহ মাহমুদ ঘটনা তদন্ত করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এই প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশ কর্তৃক জনিকে গ্রেফতার ও তিন দিন পর্যন্ত থানায় আটকে রেখে পরবর্তীকালে অস্বীকারের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।
এর আগে জনির স্ত্রী জেসমিন নাহার বলেছিলেন, ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টার দিকে সাতক্ষীরা শহরের নিউমার্কেট এলাকা থেকে তার স্বামী মোখলেছুরকে আটক করেন সাতক্ষীরা সদর থানার উপ-পরিদর্শক হিমেল হোসেন। ওই রাতে তাদের বাড়িতে তল্লাশি করে সদর থানা-পুলিশ। ৫, ৬ ও ৭ আগস্ট থানায় গিয়ে তিনি স্বামীর সঙ্গে দেখা করে তাকে খাবার দিয়ে আসেন। ৮ আগস্ট থানায় গিয়ে তিনি স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। থানা থেকে বলা হয়, মোখলেছুর রহমান জনি নামে থানায় কেউ নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পুলিশ

১২ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ