পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে রাস্তায় যেসব খাবার তৈরি ও বিক্রি হয় তা বিশুদ্ধ, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত নয়, বরং তাতে রয়েছে ভয়ঙ্কর জীবাণু। যার কারণে ভয়াবহ হুমকিতে রয়েছে জনস্বাস্থ্য। প্রায় ৯০ শতাংশ খাবারেই রয়েছে এ ভয়ঙ্কর জীবাণু। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে খাদ্যদ্রব্যে রসায়নিক দূষণ ও জীবাণু সংক্রমণ বিষয়ে এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকাসহ সারা দেশের ৯০ শতাংশ রাস্তার খাবারেই ই-কোলাই, সালমোনেলা ও ইস্টমোল্ডের মতো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর জীবাণু পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, সারা দেশে প্রায় ১৩০ প্রকারের রাস্তার খাবার পাওয়া যায়। এসব খাবারের রয়েছে সিঙাড়া, সমুসা, ছোলা ভাজি, বেগুনি, আলুর চপ, ডালপুরি, ফুচকা, চটপটি, তেলপুরি, পাকুড়া, হালিম, ঝালমুড়ি, জিলাপি, লেবুর শরবত, আখের রস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, আলু সিদ্ধ, স্যুপ, পোড়া পেঁয়াজু ও মরিচ, সালাদ, নুডলস, চা, কফি, পাউরুটিসহ নানা রকম মিষ্টান্ন খাবার। এসব খাবারের দোকান খোলা আকাশের নিচে। উম্মুক্ত অবস্থায় তৈরি এসব খাবার বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা হচ্ছে। মিষ্টি ও তৈলাক্ত হওয়ায় এসব খাবার পোকামাকড়, মাছি, ধুলা-বালিতে দূষিত হচ্ছে। রাস্তার এসব খাবারে পুষ্টিগুণ থাকে অতি সামান্য এবং শরীরের ক্ষতিকর প্রভাব থাকে অনেক বেশি। এসব রাস্তার খাবারের ক্রেতা হচ্ছে শিশু, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসার শিক্ষার্থী, রিকশাচালক, টোকাই ছিন্নমূল মানুষ, হকার, ছোট ব্যবসায়ী, শ্রমিক, গরিব ও অশিক্ষিত নিম্ন আয়ের মানুষ। যাদের কোন স্বাস্থ্য সচেতনতা নেই বললেই চলে। স্কুলের ছোট শিশুরা এসব খাবারের প্রতি আকৃষ্ট হয় বেশি, এছাড়া গর্ভবতী মা’রা খাচ্ছে সব খাবার। বারেবারেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এরপরও মা-বাবারা এসব খাবার কিনে দিচ্ছে। নিজেরাও খাচ্ছে বিভিন্ন প্রকারের ক্ষতিকর আচার ও অজানা-অচেনা ব্রান্ডের আইসক্রিম। এসব খাবার শিশুদের জন্য মোটেই উপযোগী নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, সস্তা ও উপাদেয় বলে তারা এসব রেডিমেড খাবার খাচ্ছে। সস্তায় নাস্তার বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় তাদের রাস্তার খাবার খেতে হচ্ছে।
রাস্তার খাবার তৈরি হয় মূলত আটা, ময়দা, বেসন, মাছ, গোশত, ডিম, শাক-সবজি ও তেল দিয়ে। প্রতিদিন একই তেল ব্যবহার করায় এ তেল পুড়ে যায়। এ পুড়ে যাওয়া তেল হৃদরোগের সৃষ্টি হচ্ছে। অপরিষ্কার কাপড়চোপড় পরে ময়লা আবর্জনা ও জীবাণুযুক্ত হাতে রাস্তার খাবার তৈরি হয় বলে এটি স্বাস্থের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া রাস্তার খাবার তৈরিতেও ব্যবহার করা দূষিত পানি। খাওয়ার পানি বিশুদ্ধ থাকছে না। যেসব থালা-বাসনে খাবার পরিবেশন করা হয়, সেগুলোতে জীবাণু থাকছে। দূষিত পানিতে ই-কোলাই ও প্রোটিয়াম, বেসিলাস জাতীয় জীবাণু এবং দূষিত পরিবেশের খাবারে স্ট্যাফাটলোককাস অবিরাম। অ্যাপেড়ারমিডিস ও সালমোনেলা প্রজাতির অসংখ্য পরিমাণ জীবাণু রাস্তায় তৈরি বিভিন্ন ফলের রসে থাকে। তাছাড়া রাস্তায় তৈরি খাবারে নিষিদ্ধ উপকরণ ও রং ব্যবহার করা হচ্ছে। অধিকাংশ তৈরি খাবারের মধ্যে মৈটানিল ইয়েলো, কমলা রং, রোডামিন বি, আরোমিন অরেঞ্জ জি জাতীয় রং ব্যবহার করা হচ্ছে। খাবার আকর্ষণীয় করার জন্য বিক্রেতারা বস্ত্রশিল্পে ব্যবহৃত ক্ষতিকর রঙও ব্যবহার করে থাকে। রাস্তায় তৈরি কোমল পানীয়তে অনেক সময় আলকাতরার রঙও ব্যবহৃত হয়। এসব খাবারে থাকছে তামা, লোহা ও সিসার মত ভারী ধাতু যা শরীরের জন্য বড় বিপদ আনতে পারে।
শীতকালীন রাস্তার খাবারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ভাপা পিঠা, পোয়া পিঠা, চিতই পিঠা ইত্যাদি। এসব পিঠার সঙ্গে থাকে নানা রকম ঝাল, চাটনি, গাঢ় আখের রসের গুড়। এসব খাবারেও বিষাক্ত উপকরণ ব্যবহৃত হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি অনুষদের অধ্যাপক মুনীর উদ্দিন আহমদ ইনকিলাবকে বলেন, খাবার সস্তা ও উপাদেয় হলে স্বাস্থ্যহানির কারণ হবে না- তার কি কোন নিশ্চয়তা আছে। টাকার নোটগুলো সংক্রামক রোগ বিস্তারের আরেক বড় মাধ্যম। এসব ময়লা নোটে থাকে বড় শত প্রকারের প্রাণঘাতী জীবাণু। রাজধানীর ৬০ লাখ মানুষ স্ট্রিট ফুড বা রাস্তার খাবার খাচ্ছে। এ খাবার যেমন ক্ষতিকর তেমনি অর্থনীতি বিকাশে অবদান রাখছে। স্ট্রিট ফুড বাংলাদেশেই নয় বিদেশেও রয়েছে। বাংলাদেশের সাথে পার্থক্য হচ্ছে তাদের খাবার তৈরি ও পরিবেশন করা হয় স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে, আর আমাদের দেশে তা হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে।
তিনি আরও বলেন, রাস্তার খাবার উপেক্ষা করা যাবে না। বন্ধও করা যাবে না। রাস্তার খাবারে বাঙালীরা অভ্যস্ত। এটা তাদের সংস্কৃতিরও একটি অঙ্গ। বাংলাদেশের মানুষ ঝুঁকি নিতে বেশি পছন্দ করে। ঝুঁকির কারণে অসুস্থ হওয়া, বিপদগ্রস্ত হওয়া বাংলাদেশের মানুষের স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নিতে হবে যাতে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার তৈরির পরিবেশ সৃষ্টি হয়। রাস্তার খাবার বিপণন এক শ্রেণীর মানুষের উপার্জনের মাধ্যম। আবার খাবারও জনস্বাস্থ্যের হুমকি এটাও মেনে নেয়া যায় না। সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে।
তিনি বলেন, অসুস্থ হওয়াটা এক বিরাট অভিশাপ। সুস্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। ‘শরীরের নাম মহাশয় যা সহায় তা-ই-সয়’ একথাটি ঠিক নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।