বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
এস.কে.এম. নূর হোসেন, পটিয়া থেকে : ফুলকে ঘিরে রয়েছে নানা, গান, কবিতা, ছড়া, ছন্দ ও বিভিন্ন কাহিনী। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ফুলকে নিয়ে বেশী গান, কবিতা, ছড়া রচনা করেছেন। ঝিঙ্গে ফুল, নার্গিস ফুল, কবির কবিতাগুচ্ছ ও গান বেশ সাড়া জাগিয়েছে। আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা ফুল তুলিতে যাই, ফুলের মালা গলায় দিয়ে মামার বাড়ী যাই, পল্লী কবি জসীম উদ্দীনের এই ছড়া সবার মুখে মুখে জানা। ভালবাসার প্রতিক ফুল এখন তার সৌরভ ধরে রাখতে পারছে না। ভেজাল ফুলের কাছে মার খেয়ে আসল ফুল ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। প্লাষ্টিক ফুলে বর্তমানে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। প্লাষ্টিক ফুলের কারণে কদর কমছে আসল ফুলের। ফলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ফুল চাষীরা বিপাকে পড়েছে। দৈনন্দিন ফুল চাষ থেকে সরে যাচ্ছে চাষীরা। চট্টগ্রাম জেলার দক্ষিণাঞ্চলের পটিয়া, চন্দনাইশ, লোহাগাড়া, সাতকানিয়া ও কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলায় ফুলের চাষ হয়। এর মধ্যে পটিয়ার কমলমুন্সির হাটে, চন্দনাইশে দোহাজারী, খাগরিয়া, বৈলতলী, ছৈয়দাবাদ, লোহাগাড়ার আমিরাবাদ এলাকায় চাষীদের বিস্তীর্ন জমিতে ফুলের চাষ রয়েছে।
এ জমিতে যে সমস্ত ফুলের চাষ হয় তার মধ্যে লাল গোলাপ, সাদা গোলাপ, হলুদ গোলাপ, মিক্স চায়না। কালার গøাডিয়ার্স, চন্দ মল্লিকা, রজনী গন্ধা, গাঁদা, কাশি গাঁদা, লিলিপুল, মানফুল, স্বর্ণ ফুটি, বেবী ফুল, ভূট্টা, গাজারা, বাসন্তী গান্ধা ইত্যাদি। ফুল বিক্রি হয় প্রতি পিচ, প্রতিশত ভাবে। ইমন শরীফ নামের এক ফুল চাষী জানান, প্রতি পিচ লাল গোলাপ বিক্রি করেন ৫টাকা করে অথচ খুচরা বিক্রেতারা একটি লাল গোলাপ বিক্রি করেন ২০ টাকা ধরে। এভাবে চাষী থেকে খুচরা বিক্রেতারা কম দামে ফুল কিনে বেশ দামে বিক্রয় করে থাকে। পটিয়ায় ফুল চাষী সাইদুজ্জামান রুবেল জানান, ফুলচাষ করে এক সময় বেশী বেশী টাকা পাওয়া গেছে। ফুলের টাকায় সে একটি পাকা বাড়িও নির্মাণ করেছেন। ১০/১২ জন শ্রমিক তার ফুল চাষে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। কিন্তু বর্তমানে বাজারে প্লাষ্টিক ফুল আসায় দিন দিন আসল ফুলের চাহিদা কমে যাচ্ছে।
পটিয়া থানার মোড়ের ফুল ব্যবসায়ী ‘‘শাহ্চান্দ ফুলঘরের’’ মালিক আব্দুল জব্বার জানান চট্টগ্রাম অঞ্চলে ফুলের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। এখানে যে কোন অনুষ্ঠানে ফুলের ব্যবহার হয়ে থাকে। চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলে যে ফুলের চাষ হয় সে ফুল দিয়ে চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না। যশোর, কুষ্টিয়া, বেনাপোল থেকে প্রচুর পরিমানে ফুল আসে। এ ফুল দিয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ফুলের চাহিদা মেটানো হয়। চট্টগ্রাম মহানগরীর আন্দরকিল্লা, চেরাগীর পাহাড় মোড়ে ফুলের পাইকার আড়ত রয়েছে। সেখান থেকে চট্টগ্রাম জেলায় বিভিন্ন উপজেলায় ফুল সরবরাহ হয়ে থাকে। পটিয়া ও দোহাজারী এলাকায় বেশিরভাগ ফুলের ব্যবসা রয়েছে। চট্টগ্রাম জেলার মহানগরী এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিয়ে, খৎনা, সামাজিক অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কারো মৃত্যুতে কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ, শোকসভা, মৃত্যুবার্ষিকীসহ প্রায় ১৫টি পর্যায়ে ফুলের ব্যবহার হয়ে থাকে।
এরমধ্যে শীতকালে ফুলের চাহিদা বেশী রয়েছে। ফুল ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার জানান চাহিদামত ফুল না পাওয়ায় বর্তমানে তারা প্লাষ্টিক ফুল দিয়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে চাহিদা মেটায়। চন্দনাইশ ছৈয়দাবাদের ফুল চাষী আবদুল করিম জানান, ফুল চাষে সরকারী কোন পৃষ্ঠপোষকতা নেই। কোন ঋণও পাওয়া যায় না। অথচ এ ফুল সারা বছর চাষ করে আর্থিক মুনাফা পাওয়া সম্ভব। চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলের ফুল চাষীরা বছরে প্রায় কয়েক কোটি টাকার ফুল বিক্রয় করে থাকে বলে এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে। প্লাষ্টিক ফুল উৎপাদন বন্ধ করে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ফুল চাষে চাষীদের উৎসাহ করতে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা সহ সুদ মুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ফুল চাষীরা ফুল উৎপাদন করে অর্থনৈতিক চাকাকে সচল করতে পারবে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা। যাহা জাতীয় অর্থনীতিতেও প্রভাব পড়বে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।