Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফরিদপুরে কৃষিজমি ও আবাসিক এলাকায় ইটভাটা

মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা

| প্রকাশের সময় : ২১ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা : ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে সরকারি নীতিমালা অমান্য করে ফসলি জমি এবং আবাসিক এলাকায় গড়ে তোলা হচ্ছে ইটভাটা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে এবং জনবসতি আবাসিক এলাকায় ইটভাটা নির্মাণ নিষিদ্ধ হলেও আইন অমান্য করে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ইটভাটা। ইটভাটার ধোঁয়ায় ফলজ বৃক্ষ, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস ও পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। সবচে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে কৃষক ও স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে স্থানীয়রা একাধিকবার অভিযোগ দিয়েও কোনো ফল পাননি। প্রভাবশালী এসব ইটভাটার মালিক প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরকে ম্যানেজ করে ইটভাটা চালু রেখেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ ও সরেজমিন দেখা গেছে, জেলার সদরপুর উপজেলার শৈলডুবি মজুমদার বাজার এলাকায় একেবারেই কৃষিজমিতে গড়ে তোলা হয়েছে ‘মেসার্স এসএএম ব্রিকস’। এ ইটভাটাটির ১০০ মিটার দূরে শৈলডুবি বাজার, ৩০০ মিটার দূরে পূর্ব শৈলডুবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ভাটার চারপাশে রয়েছে চার শতাধিক বাড়িঘর। এ ছাড়া হাজার হাজার ফলদ গাছ রয়েছে। ইটভাটাটি নির্মাণের সময় স্থানীয়রা বাধা দিলে পরিবেশ অধিদফতর নিষিদ্ধ এলাকা বলে ছাড়পত্র দেয়নি। কিন্তু কিছুদিন পর পরিবেশ অধিদফতর ইটভাটা নির্মাণের ছাড়পত্র দেয়। ফলে কৃষিজমি দখল করে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাটা। ইটভাটাটির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক, স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থী ও স্থানীয় এলাকাবাসী। সদরপুরের বিশ্ব জাকের মঞ্জিল উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা এবং কৃষি জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে ‘আরএএস ব্রিকস’ নামের একটি ইটভাটা। এ ইটভাটার কারণে স্থানীয়রা নানা সমস্যার মধ্যে পড়েছেন। একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো ফল পাননি অভিযোগকারীরা। বোয়ালমারী উপজেলার ২৮ নং ত্রিপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে ‘রাজ ব্রিকস’ নামের একটি ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। ইটভাটাটির কারনে স্কুলের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা মারাত্মকভাবে বিঘিœত হচ্ছে। ইটভাটার ধোঁয়ায় গোটা এলাকা আচ্ছন্ন থাকায় স্থানীয়রা বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। গাছগাছালির পাতা পুড়ে যাচ্ছে এবং বিভিন্ন প্রজাতির গাছ পড়ে যাচ্ছে। বোয়ালমারীর হাসামদিয়া এলাকায় ‘বর্না ব্রিকস’ নামের একটি ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে কৃষি জমিতে। ইটভাটাটির একেবারেই কোল ঘেষে রয়েছে হাসামদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, একটি মাদ্রাসা, বাজার, একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুল ও কয়েকশ বসতবাড়ি। স্থানীয়দের অভিযোগ, ইটভাটা নির্মাণের সকল নীতিমালা অমান্য করেই প্রভাবশালী মহলটি এ ইটভাটাটি গড়ে তুলেছে। এ ইটভাটার কারণে স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে সমস্যার মধ্যে থাকলেও কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো ফল পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে। এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে এমন অভিযোগ এনে সাবেক এমপি জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো সাড়া পাননি বলে জানা গেছে। ইটভাটাটির বিষয়ে স্থানীয়রা অভিযোগ দিয়ে ভাটা মালিকের কাছ থেকে নানা ধরনের হুমকি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি। ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের ‘উসমান অটো ব্রিকস’ নামের একটি ইটভাটার কারণে গত বছর পিয়াজদানা চাষিরা মারাত্মকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। সারাদেশের মধ্যে সবচে বেশি পিয়াজ বীজেরদানা উৎপাদন হয়ে থাকে ফরিদপুরের অম্বিকাপুরের গোবিন্দপুর ও ভাষাণচর এলাকায়। এ ইটভাটাটির কারণে গত বছর কৃষকেরা পিয়াজ দানা উৎপাদনে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন। ইটভাটার ধোঁয়ায় মাঠের পর মাঠ পিয়াজদানার ক্ষেত পুড়ে যাওয়ায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে কৃষকদের। এ বছর একই অবস্থা বিরাজ করছে। ফলে কৃষকেরা পিয়াজদানা বুনতে সাহস পাচ্ছেন না। অনেকেই পিয়াজদানা আবাদ থেকে বিরত রয়েছেন। এ ইটভাটারি উচ্ছেদের দাবিতে কৃষকেরা মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। এ ইটভাটার কারণে গত বছর কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়ায় জেলা প্রশাসনসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ইটভাটা সংলগ্ন মাঠ পরিদর্শন করে সাময়িকভাবে ভাটাটি বন্ধ রাখার নির্দেশ দিলেও ভাটা কর্তৃপক্ষ সেই নির্দেশ মানেননি। স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিবেশ অধিদফতরকে ম্যানেজ করেই সরকারি নীতিমালা অমান্য করে ফসলি জমি দখল করে এবং পরিবেশের ক্ষতি করেই বেশির ভাগ ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া জানিয়েছেন, পরিবেশের ক্ষতি করছে এমন স্থানে ইটভাটা নির্মাণ করা যাবে না। যদি কেউ সরকারি নির্দেশ অমান্য করে ইটভাটা নির্মাণ করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ