হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
নতুন খ্রিস্টীয় বছর ২০১৮তে, বহুল প্রচারিত দৈনিক ইনকিলাবে এটা আমার প্রথম কলাম। অতএব কিঞ্চিত দেরিতে হলেও দৈনিক ইনকিলাবের সম্মানিত পাঠক স¤প্রদায়ের প্রতি সালাম জানাচ্ছি। সময়ের মালিক আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনের ১০৩ নম্বর সুরা, সুরা আল আসর-এ সময়ের শপথ নিয়ে বা শপথ দিয়ে বাকি দুটো আয়াত নাযিল করেছেন। মহান আল্লাহর বিশাল সৃষ্টিজগতে, আমাদের সৌরজগতটি একটি অতি নগণ্য আয়তন ও অবস্থান নিয়ে আছে। তার মধ্যে, আমাদের পৃথিবী আরও নগণ্য এবং ক্ষুদ্র অবস্থান ধারণ করে। আমাদের এই পৃথিবীর নিয়ম অনুযায়ী আমরা সময়ের মাপুনি স্থির করেছি। আমরা চন্দ্রকে ব্যবহার করে সময়ের মাপুনি স্থির করেছি, আবার সূর্যকে ব্যবহার করেও মাপুনি স্থির করেছি। আমাদের নামাজের ওয়াক্তগুলো সূর্যের উদয় ও অস্তের উপর নির্ভরশীল। আমাদের বিশেষ ইবাদতের বা বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ দিন ও রাতিগুলো বা তারিখগুলো চন্দ্রের উদয়ের উপর নির্ভরশীল। অতএব অত্যন্ত যৌক্তিকভাবেই আমরা বলতে পারি, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সৌর ক্যালেন্ডার এবং চন্দ্র ক্যালেন্ডার জড়িয়ে আছে। সময়ের মাপের জন্যই ক্যালেন্ডারগুলো। এটা অত্যন্ত ফ্ল্যাক্সিবল বা নমনীয় একটি ধারণা, বছরের শুরুতে শুভেচ্ছা জানানো। আমি শতভাগ ওয়াকিবহাল যে, মুসলমানদের জন্য অপরের শুভ কামনার একটিই মাত্র রাস্তা খোলা আছে, সেটি হচ্ছে সালাম জানানো ও দোয়া জানানো। এই সূচনা বাক্যের পর বলতে চাই, আগামী দিনগুলো আমাদের সকলের জন্যই যেন কল্যাণময় হয়, ফলপ্রসূ হয় আমরা সেইরূপ প্রার্থনা করছি মহান আল্লাহর কাছে।
নবতিথি বা নতুন সুযোগ
ছোটকালে ব্যকরণে সন্ধি পড়েছি। নব যোগ অতিথি সন্ধি করলে হবে নবোতিথি অথবা নবাতিথি। কিন্তু উচ্চারণ প্রায় একইরকম কিন্তু অর্থ একটু ভিন্ন প্রকৃতির এরকম একটি শব্দ বা নামের সঙ্গে পরিচিত হলাম ১২ জানুয়ারি তারিখে। হাটহাজারী উপজেলায় দক্ষিণ-পূর্ব মেখল-এ তরুণদের একটি সামাজিক সংগঠন বা ক্লাব আছে যার নাম নবতিথি ক্লাব। শীতকাল ব্যাডিমিন্টন খেলার সিজন। ১২ তারিখ সন্ধ্যায় তিন ঘণ্টা উপস্থিত থেকে খেলা দেখলাম এবং পুরস্কার বিতরণীতে অংশগ্রহণ করলাম। কনকনে শীতের মধ্যেও চারশতের অধিক তরুণ এবং প্রবীণ উপস্থিত ছিলেন এবং এটা দেখে আমি আশান্বিত হয়েছি যে, মানুষ এখনও খেলাধুলা পছন্দ করে। ওই ক্লাবটিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনুসারীগণ আছেন। কিন্তু ক্লাবের কোনো কর্মকান্ডে কোনো প্রকারের প্রভাব তারা ফেলেন না। স্বাগতিকদের মধ্যে যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ তাঁদের জিজ্ঞাসা করলাম যে, এই নামটা কেন বেছে নিয়েছিলেন? তারা ব্যাখ্যা করেছিলেন। নব মানে নতুন এবং তিথি মানে সময় বা সুযোগ। প্রত্যেক কিশোর বা কৈশোর-উত্তীর্ণ তরুণ নিজেকে প্রস্ফূটিত করার, নিজেকে বিকশিত করার এবং নিজেকে উপস্থাপন করার একটা সুযোগ খোঁজে। এলাকার কিশোর এবং কৈশোর-উত্তীর্ণ তরুণদের সেই সুযোগ দেওয়ার জন্য, ১৯৯৬ সালে দক্ষিণ-পূর্ব মেখলে নবতিথি নামের ক্লাবটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। নতুন সুযোগ বলি বা নবতিথি বলি এইরূপ একটি সন্ধিক্ষণ প্রত্যেকের জীবনে আসে এবং সেই সুযোগটিকে কাজে লাগানো প্রত্যেকের কর্তব্য। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বা বিএনপি (তথা ২০ দলীয় জোট কর্তৃক মনোনীত) মেয়র প্রার্থী জনাব তাবিথ আউয়াল সেই সুযোগ ব্যবহার করবেন এটাই স্বাভাবিক। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম ও প্রতীক্ষার পর ঢাকা উত্তর মহানগরের মেয়র নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ২০ দলীয় জোট সেই সুযোগ গ্রহণ করবে, এটাই আশা এবং এটাই স্বাভাবিক।
২০ দলীয় জোটের শীর্ষ বৈঠক
নতুন বছরে ২০ দলীয় জোটের প্রথম মিটিংটি ৮ জানুয়ারি সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয়। মিটিংটি সুনির্দিষ্ট আলোচ্য বিষয় নিয়েই আহ্বান করা হয়েছিল। সুনির্দিষ্ট আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে একটি ছিল ঢাকা নর্থ উত্তর সিটি কর্পোরেশন মেয়র পদের প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনা। আরেকটি ছিল চলমান বা বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সম্ভাব্য পার্লামেন্ট নির্বাচন। তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্যসূচি ছিল বেগম জিয়ার উপর আরোপিত অন্যায্য ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলাগুলোর রাজনৈতিক তাৎপর্য ও সম্ভাব্য বিহিত। ওইদিন সন্ধ্যায় মিটিংয়ের শুরুতেই আমরা সকলেই আমাদের সহকর্মী ‘জাগপা’র মরহুম সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের অনুপস্থিতি নতুন করে অনুভব করলাম। ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে আলোচনা শুরুর সময়, সচরাচর আমরা সকলেই মিলে শফিউল আলম প্রধানকে আলোচনার সূচনা করার অনুরোধ করতাম। তিনি অতি সুন্দর বিশ্লেষণ করতেন, অতি সুন্দর উপস্থাপন করতেন এবং অন্যদের আলোচনার জন্য ক্ষেত্রটি প্রস্তুত করতেন। ৮ জানুয়ারি তারিখে সকলেই বলাবলি করলাম, আজকের আলোচ্যসূচি শুরু করার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি হতেন প্রধান; কিন্তু যেহেতু তিনি আমাদের মাঝে নেই সেহেতু আরেকজনকে করতে হচ্ছে। শফিউল আলম প্রধানের সুযোগ্য স্ত্রী, তৎকালীন তুখোড় ছাত্রনেতা এবং বর্তমানে জাগপার সভাপতি অধ্যাপিকা রেহানা প্রধান আমাদের মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন। যাহোক, কেউ না কেউ আলোচনা শুরু করতেই হবে তাই ন্যাশনাল পিপলস পার্টি তথা এনপিপি চেয়ারম্যান এডভোকেট ডক্টর ফরিদুজ্জামান ফরহাদ আলোচনা শুরু করেন। অতঃপর আরও পাঁচজন আলোচনায় অংশ নেন। ওই ছয়জনের আলোচনার সারবস্তু ছিল মাননীয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপর আরোপিত মামলাগুলো নিতান্তই রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলকভাবে করা হয়েছে বেগম জিয়াকে নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে বাইরে রাখার কূট-কৌশল হিসেবে।
একক প্রার্থী প্রসঙ্গ
ওই ছয়জনের পক্ষ থেকে উপস্থাপিত বা আলোচিত দ্বিতীয় বিষয়টি ছিল মেয়র প্রতিদ্ব›িদ্বতার প্রার্থী ও প্রার্থিতা প্রসঙ্গে। তাঁদের বক্তব্য ছিল যে, জোটের পক্ষ থেকে যেন একক প্রার্থী দেওয়া হয়। অতীতের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করা হয় এবং সেই অভিজ্ঞতার আলোকে আলোচনা করা হয় যে একক প্রার্থী না হলে ভোট ভাগাভাগি হয়ে যাবে। আলোচনা সভায় ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক দল জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা আব্দুল হালিম এবং ছয়জনের আলোচনার সময় এই কথাটি উঠে আসে যে, জামায়াতে ইসলামী যদিও মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করে ফেলেছে, তথাপি জোটের পক্ষ থেকে একক প্রার্থী দেওয়ার স্বার্থে, আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন। ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের অতীতের মিটিংগুলোর অলিখিত রেওয়াজ মোতাবেক, আমি আরেকটু পরে বলার সুযোগ নিলেও চলতো। এবার, অর্থাৎ ৮ জানুয়ারি সন্ধ্যায় আমি ছয়জনের বক্তব্যের পর, আমার বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য সুযোগ গ্রহণ করি। আমি মেয়র প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনাটিকে আরেকটু সুনির্দিষ্ট করে ফেলি। আমি বলি যে, গত কয়েক সপ্তাহ যাবত পত্র-পত্রিকায় ২০ দলীয় জোটের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে ছবিসহ আলোচনা হচ্ছে। আমি বলি যে, যাঁদের নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তাঁদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে বেশি আলোচনা হচ্ছে দুইজনকে নিয়ে যথা তাবিথ আওয়াল এবং আন্দালিব রহমান পার্থ। আমি বলি যে, গত তিন-চারদিন (অর্থাৎ ৮ জানুয়ারি ২০১৮ থেকে পেছনের দিকে তিন-চারদিন) যাবত তুলনামূলকভাবে আলোচনা তাবিথের প্রসঙ্গেই বেশি হচ্ছে। আমি বলি, পার্থ এবং তাবিথ উভয়েই বাংলাদেশের তরুণ সমাজের নিকট সুপরিচিত গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি এবং ভোটারগণের মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগের বেশি ভোটার হলেন তরুণ। অতএব তরুণ ভোটারদের নিকট সুপরিচিত একজন তরুণ প্রার্থী দিলে সুবিধা হতে পারে। এরপর আমি বলি যে, তাবিথ আওয়াল একটি অতিরিক্ত এডভানটেইজ বা সুবিধা সংবলিত; সেটি হলো এই যে, তিনি গত মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী থাকার কারণে অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ। আমার নিবেদন মাননীয় দেশনেত্রী একটি সিদ্ধান্ত নিবেন; যথাসম্ভব এই দুইজনের মধ্য থেকেই দিবেন। আমার নিবেদনের চূড়ান্ত বক্তব্য হলো যাঁকেই তিনি মনোনয়ন দেন, তাঁকেই আমরা সকলে মিলে সমর্থন দেব এবং তাঁর জন্য আমরা সকলে মিলে পরিশ্রম করবো। আমাদেরকে যেই দায়িত্ব দেওয়া হবে, আমরা সেই দায়িত্ব পালন করবো। সম্মানিত পাঠক, নিশ্চয়ই খেয়াল করছেন যে, ওই আলোচনা সভায়, ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক দল বিজেপি বা বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির সভাপতি ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ উপস্থিত ছিলেন।
মেয়র নির্বাচন ও অন্যান্য বক্তব্য
আমি বক্তব্য শেষ করার পর জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের সম্মানিত সভাপতি মুফতি ওয়াক্কাস এবং অতঃপর ইসলামী ঐক্যজোটের সভাপতি মওলানা এডভোকেট আব্দুর রকিব বক্তব্য রাখেন। অতঃপর বক্তব্য রাখেন এলডিপি চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি তথা এলডিপির মহাসচিব মুক্তিযোদ্ধা রেদোয়ান আহমেদ ও জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মহোদয়ের প্রতিনিধি তথা মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার। এরপর বক্তব্য রাখার প্রয়োজনীয় সুযোগটি নেন বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ; তারপর বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর আমিরের প্রতিনিধি তথা মাওলানা আব্দুল হালিম। ব্যারিস্টার আন্দালিব তার বক্তব্যে অত্যন্ত সুন্দর ও প্রাঞ্জলভাবে, তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করেন। মওলানা আব্দুল হালিম তার দলের অবস্থান তুলে ধরেন এবং অন্যদের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সমন্বয় প্রসঙ্গে শক্তিশালী গঠনমূলক ইশারা প্রদান করেন। যেহেতু জামায়াতে ইসলামী পক্ষ থেকে মেয়র নির্বাচনের প্রার্থী ও প্রার্থিতা ইতোমধ্যেই (তথা ৮ জানুয়ারির দুই-তিন দিন আগে) মিডিয়ার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, এবং যেহেতু সকল আলোচকগণ জোটের পক্ষ থেকে একক প্রার্থী দেওয়ার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছিলেন সেহেতু, আব্দুল হালিমের পক্ষ থেকে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান পরিষ্কার করা প্রয়োজন ছিল। তিনি সেই চেষ্টা করেন।
আলেম-ওলামা ও হাটহাজারী প্রসঙ্গ
৮ জানুয়ারি ২০১৮ সন্ধ্যা রাত্রিতে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে আমার বক্তব্যের প্রসঙ্গটি পুনরায় এখানে টেনে আনছি। বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে আমি প্রাধান্য দেই দেশের ও ২০ দলীয় জোটের স্বার্থকে। ঐ পরিপ্রেক্ষিতেই আমার বক্তব্যে আমি অন্য যেই প্রসঙ্গটি তুলে ধরি সেটি হলো, আলেম-ওলামা প্রসঙ্গ। হাস্যচ্ছলে বা হালকা পরিবেশনায় বা রাজনৈতিক রসচ্ছলে এটা বলি যে, অনেকেই হাটহাজারীকে ‘হেফাজতে ইসলামের রাজধানী’ বলে সম্বোধন করেন। আমার বাড়ি চট্টগ্রামের ওই হাটহাজারীতে এবং ওই হাটহাজারী হলো কওমী মাদ্রাসা শিক্ষার অন্যতম বৃহৎ কেন্দ্র। হাটহাজারীতেই অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ঐতিহ্যবাহী কওমী মাদ্রাসা ‘দারুল উলুম মইনুল ইসলাম’; যার মহাপরিচালক হলেন আল্লামা আহমদ শফি। হাটহাজারীতে একাধিক তাৎপর্যপূর্ণ ও প্রসিদ্ধ কামিল মাদ্রাসাও আছে যার মধ্যে অন্যতম হলো ‘ছিপাতলী জামেয়া গাউছিয়া মূঈনীয়া কামিল (এম.এ) অনার্স মাদ্রাসা’। হাটহাজারীতে কওমী লাইনে শিক্ষা প্রাপ্ত ব্যক্তিত্বগণ ও তাঁদের অনুসারীগণ এবং সরকারি কামিল মাদ্রাসায় আলীয়া লাইনে শিক্ষা প্রাপ্ত ব্যক্তিত্বগণের উজ্জ্বল প্রাধান্য সমানভাবে লক্ষণীয়। হাটহাজারীতে, উভয় চিন্তাধারার জ্ঞানী ব্যক্তিগণের এবং তাঁদের অনুসারীদের শান্তিপূর্ণ মর্যাদাপূর্ণ সহ-অবস্থান প্রশংসনীয় ও লক্ষণীয়। সেই সুবাদেই আমি আমার বক্তব্যের দ্বিতীয় অংশের আলোচনাটিকে এগিয়ে নিয়ে যাই। আমার নিবেদন ছিল যে, আলেম-ওলামাগণের সঙ্গে ২০ দলীয় জোটের সম্পর্ককে অধিকতর সুসংহত করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। আলেম ওলামাগণ বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় জীবনের এবং সামাজিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ অংশীদার; আংশিকভাবে চালিকাশক্তিও বটে। এখন শীতকাল; শুকনা মৌসুম এবং সেজন্যই বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে, শহরে-বন্দরে বিভিন্ন প্রকারের ধর্মীয় মাহফিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই সকল মাহফিলে আলেম-ওলামাগণ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। অতীতকালে, বেশ কিছু বছর আগে আলেম-ওলামাগণের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ ছিল সমালোচকগণের মুখে মুখে যে, তাঁরা আসমানের উপরের কথা এবং মাটির নিচের কথা বেশি আলোচনা করেন; এই পৃথিবীতে চলমান জীবন ঘনিষ্ঠ বিষয়াদি বা সমাজ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি কম আলোচনা করেন। ওইরূপ সমালোচনার দিন শেষ। সম্মানিত আলেম-ওলামাগণ এখন সমাজের নারী-পুরুষের সমস্যা, সমাজে অত্যাচার-অনাচার, সমাজে শিশু ও নারীর উপর অত্যাচার, বৃক্ষরোপণ, মানবকল্যাণ ইত্যাদির প্রসঙ্গে ইতিবাচক কথা বলেন; তাঁরা দুর্নীতি লুটপাট ঘুষ খাওয়া, হারাম খাওয়া ইত্যাদির বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক কথা বলেন। সর্বোপরি এটা উল্লেখযোগ্য যে, বিগত তিন-চার দশক ধরে একটু একটু করে তথা ক্রমান্বয়ে সম্মানিত আলেম-ওলামাগণ প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে জড়িত হয়েছেন। এইরূপ প্রেক্ষাপটেই আমি মনে করেছিলাম এবং এখনও মনে করি যে, তাঁরা সমাজে সাধারণ মানুষের চোখে একটি সম্মানিত গোষ্ঠী বা স¤প্রদায়। অতএব, ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেত্রীর সাথে এবং ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে সার্বিকভাবে সম্মানিত আলেম-ওলামাগণের সম্পর্ক গভীরতর হওয়া প্রয়োজন এবং যে কোনো প্রকারের ভুল বোঝাবুঝি থাকলেও বা দূরত্ব সৃষ্টিকারী কোনো কারণ থাকলেও সেগুলোকে দূর করে সম্পর্ক সুসংহত করা প্রয়োজন।
প্রসঙ্গ মিডিয়ার সাফল্য
রাত সোয়া নয়টায় শুরু হয়ে রাত সোয়া এগারোটায় আলোচনা সভা শেষ হয়। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে আমি ধরেই নিয়েছি যে, ওই রাত্রেবেলাতেই অনেক অনলাইন পত্রিকায় ২০ দলীয় জোটের বৈঠকের খবর তথা কী আলোচনা হলো, কী সিদ্ধান্ত হলো এগুলো আসবে; ৯ তারিখ সকালের দৈনিক পত্রিকাগুলোতে তো অবশ্যই আসবে। ৯ তারিখ দিনেরবেলা একাধিক পত্রিকা ঘেঁটে দেখলাম খবর বেরিয়েছে। দু’একটি গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকায় আমার নাম উল্লিখিত হয়েছে। আমার নাম উল্লেখ করার প্রসঙ্গটি হলো এই যে, আমি দুইজন সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীর নাম উল্লেখ করে মাননীয় চেয়ারপার্সনের সামনে উপস্থাপন করেছি। পত্রিকাগুলোতে ২০ দলীয় জোটের আরও কয়েকজন শীর্ষ নেতার নাম সংবাদের মাঝখানে মাঝখানে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে উপস্থাপিত হয়েছে। নামগুলো উল্লেখ হতেই পারে; এটা স্বাভাবিক। যেটা অস্বাভাবিক সেটা হলো ২০ দলীয় জোটের মিটিংয়ের আলোচনা ও সিদ্ধান্তের খবরগুলো বা বিস্তারিত বিবরণ মিডিয়ার সামনে অংশগ্রহণকারীদের মাধ্যমে যেন না যায় সেইরূপ একটি অনুরোধ দীর্ঘদিন যাবত বহাল আছে; তথাপি ৮ তারিখের সন্ধ্যা রাত্রির খবর ও বিবরণ ৯ তারিখের পত্র-পত্রিকায় এবং ১০ তারিখের দু’একটি পত্র-পত্রিকায় মোটামুটি নিখুঁতভাবে, প্রাঞ্জলভাবে এসেছে; এটা সম্মানিত মিডিয়াকর্মীদের সাফল্য। এই সাফল্যের ইতিবাচক দিক আছে অর্থাৎ শীর্ষ নেতাগণ কী আলোচনা করছেন সেটা সম্বন্ধে অবহিত থাকলেন। তার জন্য মিডিয়াকে আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কয়েকজন ব্যক্তি বিভিন্ন রকমের আলোচনা-সমালোচনা করেন এবং পুরো আলোচনা বা ঘটনা না জেনেই তারা আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়ে কলম ধরেন। সভায় সভাপতিত্ত¡ করেছেন ২০ দলীয় জোটনেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। তার অনুমতিতেই, রেওয়াজ মোতাবেক সভা সঞ্চালন করেছেন জোটের সমন্বয়ক বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পুরো আলোচনাটিই সভার সভাপতির আহ্বানে আলোচ্যসূচি মোতাবেক হয়েছে। সেই আলোচনা সভায় কোনো পর্যায়ে কোনো প্রকারের উত্তাপ সৃষ্টিকারী আলাপ-আলোচনা হয়নি, উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়নি বরং অতি শান্তিপূর্ণ ও শোভনীয় পরিবেশে আলোচনা হয়েছিল।
নবতিথি: ফৌজদারহাট
নবতিথি না নতুন সুযোগ এর প্রসঙ্গ আসলো বলেই উল্লেখ করছি আমার জীবনের প্রথম ও দ্বিতীয় সুযোগের কথা। ১৯৫৭ সালে আট বছর বয়সে গ্রাম থেকে এসেছিলাম চট্টগ্রাম বন্দর উত্তর কলোনীতে, বাবার সরকারি বাসায়। এটা ছিল আমার প্রথম সুযোগ। গ্রাম থেকে শহরে আসায় ওই শিশু বয়সেই আমার দৃষ্টিকে বিস্তৃত করতে পেরেছিলাম। স্কুলটা ভালো ছিল। সেজন্য দ্বিতীয় সুযোগ পেয়েছি। ১৯৬২ সালের জুন মাস পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি চট্টগ্রাম বন্দর প্রাইমারি স্কুলে এবং চট্টগ্রাম বন্দর হাই স্কুলে। সেই ১৯৬২ সালের প্রথমার্ধে পরীক্ষা দিয়ে ক্যাডেট কলেজে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছিলাম। ওই আমলে, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে একমাত্র ক্যাডেট কলেজ ছিল ‘দি ইস্ট পাকিস্তান ক্যাডেট কলেজ।’ যার অবস্থান ছিল তৎকালীন চট্টগ্রাম শহর থেকে দশ-এগারো মাইল উত্তরে ফৌজদারহাট নামক স্থানে পাহাড় সারির পাদদেশে। ওই কলেজটি প্রতিষ্ঠার তারিখ ২৮ এপ্রিল ১৯৫৮। ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আরও তিনটি ক্যাডেট কলেজ স্থাপিত হয়েছিল, ফলে আমাদের কলেজটির নাম পাল্টিয়ে করা হয়েছিল: ‘ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ’। সেই ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের ষাট বছর পূর্তি উপলক্ষে পুনর্মিলনী ছিল ১৮, ১৯ ও ২০ জানুয়ারি ২০১৮। ওই ঐতিহ্যবাহী কলেজের প্রবীণ ছাত্রদের মধ্যে একজন আমি নিজেও। কলেজের প্রতি দেশবাসীর শুভেচ্ছা ও অতীতে যেমন ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
লেখক: চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
www.generalibrahim.com
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।